প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল নিঃশেষ হওয়ার আগে বৃষ্টি ঝরিয়েই যাচ্ছে, আর তা প্রায় বাংলাদেশজুড়ে। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে উঠে আসার পর গত ২৪ ঘণ্টায় চার জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ মিলিমিটার ছাড়িয়ে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও চাঁদপুর জেলায় বেশি বৃষ্টি ঝরিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চাঁদপুরে, ২৫৭ মিলিমিটার। ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২২৪ মিলিমিটার। সিলেট ও চট্টগ্রামে একই পরিমাণ বৃষ্টি হয়, ২৪৯ মিলিমিটার।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের গতিপথের বাইরে থাকা রংপুর বিভাগেই কেবল বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পঞ্চগড়, নীলফামারীতে বৃষ্টি হয়নি।
রবিবার রাতে রেমাল মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূলে আঘাত হানে।
ওই রাতে খেপুপাড়া অতিক্রম করার সময় ঘূর্ণিবায়ুর গতি ছিল সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রেমালের অগ্রভাগ রবিবার দুপুরে উপকূলে আসে। মধ্যরাতে এর কেন্দ্র স্থলভাগের উপরে উঠে আসে। এরপর ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা ধরে পুরো ঝড়টি উপরে উঠে আসে। এসময় রাতভর চলে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব।
সোমবার সকালে প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে নিম্নচাপে পরিণত হয় রেমাল।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব চলাকালে দেশে ১০ জনের মৃত্যু হয় বলে জানায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
এছাড়া জলোচ্ছ্বাসে ১০৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপকূলীয় এলাকার বেশির ভাগ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। ভেসে যায় মাছের ঘের, ভেঙে পড়ে বেড়িবাধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এতে বহু গ্রাম প্লাবিত হয়।
রেমালের আঘাতে দেশের ১৯ জেলায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় সাড়ে ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি। এছাড়া আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ লাখ ১৫ হাজার ঘরবাড়ি। গ্রাম থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলেও ঘরের ভেতর প্রবেশ করে বানের পানি।
বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গও রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে সাত জনের প্রাণহানি ঘটে।
রেমালের বর্তমান গতিবিধি সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়া রেমাল মঙ্গলবার সকালে উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সিলেট অঞ্চলে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
মঙ্গলবার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের কয়েকটি জায়গায় এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
একই সঙ্গে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে তিন ডিগ্রি বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়।