Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

ভারি বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলজট, ভোগান্তি চরমে

রাস্তায় কোমর সমান পানি।  প্যাডেল ঘুরিয়ে চালানো যাচ্ছে না রিকশা। বাধ্য হয়ে পানি ঠেলেই যাত্রীসহ রিকশা টেনে নিতে হয় চালকদের। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
রাস্তায় কোমর সমান পানি। প্যাডেল ঘুরিয়ে চালানো যাচ্ছে না রিকশা। বাধ্য হয়ে পানি ঠেলেই যাত্রীসহ রিকশা টেনে নিতে হয় চালকদের। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

ছুটির দিন শুক্রবার সকালের টানা ভারি বৃষ্টিতে জলজট সৃষ্টি হয়েছে রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায়। মতিঝিলের  শাপলা চত্বর এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টায়ও ছিল কোমর সমান পানি। দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টির দাপট কমে যায়, এক পর্যায়ে থেমেও যায় বৃষ্টি। তারপরও বিকাল ৩টা নাগাদ রাজধানীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি ছিল।

দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকায় অনেক সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার বন্ধ হয়ে যায়। একারণে যানজটও হয় বিভিন্ন সড়কে। সবমিলে জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকায় শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। পরের ৩ ঘণ্টায় বৃষ্টি আরও বাড়ে। সব মিলে ৬ ঘণ্টায় ঢাকায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকার অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

বিকাল ৩টার দিকে বৃষ্টি না থাকলেও ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কে কোমর সমান পানি ছিল। সেখানে কয়েকটি গাড়ি বিকল হয়ে পড়ায় এই সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়কেও হাঁটুসমান পানি ছিল তখন। যানজট ছিল মহাখালী থেকে বিজয় সরণি যাওয়ার পুরো পথেই।

এর আগে সকালের ভারি বৃষ্টিতে টিকাটুলি, মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরেরপুল, বিজয়নগর, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মালিবাগ রেলগেট, শাহজাহানপুর, মগবাজার, তেজকুনিপাড়া, বিজয় সরণি, মহাখালী, বনানী, উত্তরা, জাহাঙ্গীর গেট, শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ধানমণ্ডি, নিউমার্কেট, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, বসুন্ধরা, বাড্ডা, আফতাবনগর, দক্ষিণ বনশ্রীসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়।

সকালের ভারি বৃষ্টিতে নিউ মার্কেটের সামনের সড়ক তলিয়ে যায়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

এতে ছুটির দিনে নানা কাজে বিভিন্ন গন্তব্যের মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এছাড়া অনেক সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়তে হয় ফুটপাতের ব্যবসায়ীদেরও।

দুপুর ১২ দিকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে সকাল সন্ধ্যার কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী মামুনুর রশীদের সঙ্গে। তিনি জানান, ছুটির দিনে ব্যক্তিগত কাজে আজিমপুর যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আধাঘণ্টা চেষ্টা করেও কোনও অটোরিকশা পাননি। বাসস্ট্যান্ডে অনেক অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউই নিউমার্কেট-আজিমপুরের দিকে যেতে রাজি হয়নি।

এ বিষয়ে শফিকুল ইসলাম নামে এক অটোরিকশাচালক বলেন, এখন হাজার টাকা ভাড়া দিলেও ওই এলাকায় যাবে না কোনও চালক।

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আজিমপুর যাওয়ার পথে নিউমার্কেট এলাকায় এখন হাঁটুসমান পানি। ওই পথে গাড়ি চালানো সম্ভব না। পানির মধ্যে সিএনজি (অটোরিকশা) নষ্ট হইলে সারাটা দিন শেষ। উল্টা সিএনজি টেনে গ্যারেজে নেওয়ার কষ্ট তো আছেই।”

পাশেই দাঁড়ানো আরেক অটোরিকশার চালক বলেন, “শুধু নিউমার্কেট না, আরামবাগ, ফকিরেরপুল, মতিঝিলেও  পানি জমে গেছে।  শাপলা চত্বরে তো এখন নাকি এক কোমর পানি। এমন টানা বৃষ্টি হলে আমাদের লস। অনেক এলাকা ডুবে যায়, ভাড়া মারতে পারি না।”

পুরান ঢাকার বাসিন্দা কল্লোল সকাল সন্ধ্যাকে জানান, সকালের ভারি বৃষ্টিতে পুরান ঢাকার অনেক এলাকার সড়ক ডুবে গেছে।

সড়কের কোমর সমান পানি পাড়ি দিতে রিকশা-ভ্যানই ছিল ভরসা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মী জানান, মহাখালীতে যাওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বের হয়েছিলেন তিনি। বৃষ্টিতে পথ-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সকালে রাস্তায় গাড়ি ছিল কম। অনেক জায়গায় পানিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে অটোরিকশা চালকরা ভাড়াও চাইছিলেন অনেক বেশি।

তিনি বলেন, “টিকাটুলির হাঁটুপানি পেরিয়ে মতিঝিলে গিয়ে দেখি কোমর সমান পানি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পরে বাসায় ফিরে যাই।”

এদিকে ভারি বৃষ্টির কারণে পথঘাট তলিতে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন ফুটপাতের দোকানীসহ ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর নামার বাজারে সকাল সন্ধ্যার কথা হয় সবজি বিক্রেতা স্বপন মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানালেন, সাত বছর ধরে তিনি এই বাজারে সবজি বিক্রি করেন। প্রতিদিন মধ্যরাতে কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারিতে সবজি কিনে এনে নামার বাজারে খুচরায় বেচেন তিনি।

স্বপন জানালেন, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশি পরিমাণেই সবজি এনেছিলেন। ভেবেছিলেন, বেশি বিক্রি করে লাভটাও একটু বেশি করবেন। কিন্তু তার সেই পরিকল্পনায় বাগড়া দিয়েছে সকালের ভারি বৃষ্টি। এতে বেশি লাভের বদলে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন তিনি।

“ছুটির দিনে বাজারে কাস্টমারের ভিড় থাকে, তাই মালপত্র বাড়ায়া আনছিলাম। কিন্তু সকাল থেকে টানা বৃষ্টির জন্য বাজারে কোনও মানুষ নাই। অন্যদিন এমন সময় বেশিরভাগ মাল বিক্রি হয়া যায়। আর আজ বনিই (বিক্রি শুরু) করতে পারি নাই এখনও।”

ভারি বৃষ্টিতে অনেক সড়ক ডুবে যায় বুক সমান পানিতে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

তিনি বলেন, “সবজিগুলা সময় মতো বেচতে না পারলে পরে কম দামে বেচা লাগব। আর বিক্রি না হইলে তো পুরাটাই লস।”

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার থেকে ঢাকায় বৃষ্টি কমে আসতে পারে। তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। এছাড়া সপ্তাহের মাঝামাঝি সময় থেকে সারাদেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত