অতিবৃষ্টি থেকে সৃষ্ট হঠাৎ বন্যায় ভেসে গেছে মরুভূমির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস্তাঘাট-বসতবাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থাপনা। গত ৭৫ বছরে এমন বৃষ্টি দেখেনি দেশটির বাসিন্দারা।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাইয়ে সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি থামে পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। এ সময়ে ১২০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। এটি পুরো বছরে শহরটিতে সাধারণত যে গড় বৃষ্টিপাত হয়, তার সমান।
এছাড়া সোমবার রাত থেকে পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের কেন্দ্রে অবস্থিত কয়েকটি এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় ৮০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সাধারণত বছরে এসব এলাকায় গড়ে ১০০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়।
আরব উপদ্বীপের শুষ্ক অঞ্চলে অবস্থিত আমিরাতে বৃষ্টি সচরাচর হয় না। শীতের মৌসুমে মাঝেমধ্যে বৃষ্টির দেখা মেলে। এজন্য দুবাইসহ দেশটির অন্য শহরের সড়কগুলোতে নেই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা।
বৃষ্টির সময় আরব দেশটির আকাশজুড়ে থেমে থেমে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি কখনও কখনও দুবাইয়ে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফার চূড়াও ছুঁয়ে যাচ্ছিল।
প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে আমিরাত কর্তৃপক্ষ বলেছে, বন্যায় দেশটির প্রধান সড়কগুলো পানিতে ডুবে যায়। বসতবাড়িতে পানি ঢুকে যায়। যানবাহনে বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ায় সেগুলো বিকল হয়ে যায়। সড়ক থেকে পানি সরাতে দুবাই কর্তৃপক্ষ ট্যাঙ্কার ট্রাক পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
বন্যার কারণে বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দর দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান চলাচল ব্যাহত হয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার আগত কয়েকটি উড়োজাহাজকে অন্য বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
বৃষ্টিতে উষর প্রান্তর দুবাই সিক্ত হলেও এর কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের স্থাপনাকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যেমন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ শপিং সেন্টার দুবাই মল এবং দুবাইয়ের শীর্ষ পাঁচ শপিং মলের একটি মল অব দ্য এমিরেটসে বন্যার পানি ঢুকে যায়।
দুবাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শহরটির একটি মেট্রো স্টেশনে গোড়ালি পর্যন্ত পানি ওঠে।
আমিরাতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বাসিন্দাদের সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, তারা যেন বন্যায় প্লাবিত অঞ্চল ও জলাবদ্ধতা থেকে নিজেদের দূরে রাখে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি তথ্য অধিদপ্তর ভারী বর্ষণের ঘটনাকে ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবে অভিহিত করে সোশাল মিডিয়া এক্সে বলেছে, এমন বৃষ্টি আরও হতে পারে।
প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার কারণে বুধবার আমিরাতের সব স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘরে বসে কাজ করার সময় বাড়ানো হয়েছে।
এএফপি বলেছে, আমিরাতে বৃষ্টির আগে রবিবার ও সোমবার বাহরাইন ও ওমানে ভারী বর্ষণ হয়। এতে বাইরাইনজুড়ে বন্যা হয়। আর ওমানে বন্যায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়।