Beta
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪

লেবাননে পেজার হামলা : উত্তর মেলেনি যেসব প্রশ্নের

lebanon-pager-explosions-hezbollah
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

দুই দিনে কয়েক হাজার পেজার ও রেডিও ডিভাইস বিস্ফোরিত হলো লেবাননে। এতে নিহত হয়েছেন ৩৭ জন, আহত হয়েছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি।

কীভাবে এই হামলা চালানো হলো তা নিয়ে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে টার্গেট করে চালানো এই হামলা ইসরায়েলই চালিয়েছে কি না, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

হিজবুল্লাহ বলছে, তারা কয়েক মাস আগে তাইওয়ান থেকে ৫ হাজার পেজার কিনেছিল। কিন্তু তাইওয়ানের যে কোম্পানি ওই পেজার সরবরাহ করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তারা কিন্তু বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মধ্য দিয়ে পেজার হামলা নিয়ে এমন ধোঁয়াশা কাটানোর চেষ্টা করেছে বিবিসি ।

মটোরোলা কোম্পানির পেজার।

পেজারগুলোকে কীভাবে টার্গেট করা হলো

কেউ কেউ বলেছিলেন, খুব জটিল কোনও কায়দায় হ্যাক করে পেজারগুলোয় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কিন্তু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন।

তাদের মতে, পেজারগুলোর বিস্ফোরণের ধরন ও মাত্রা দেখে মনে হচ্ছে, এগুলোর ভেতর কোনওভাবে বিস্ফোরক বসানো হয়েছিল। আর কাজটি করা হয়েছিল হিজবুল্লাহর কাছে পেজারগুলো পৌছানোর আগেই।

বিস্ফোরিত পেজারগুলোতে তাইওয়ানের ছোট ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি গোল্ড অ্যাপোলোর লোগো লাগানো ছিল। তাইপের শহরতলীতে অবস্থিত ওই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার নাম হসু চিং কুয়াং। লেবাননের পেজার বিস্ফোরণের ঘটনার নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন তিনি।

বিবিসিকে তিনি বলেন, “আপনি লেবানন থেকে পাঠানো ছবিগুলো দেখুন। সেখানে কোথাও লেখা নেই মেইড ইন তাইওয়ান। আমরা এসব পেজার তৈরি করি না।” তিনি লেবাননের পেজারগুলো তৈরির জন্য হাঙ্গেরিয়ান কোম্পানি বিএসি কনসাল্টিংকে দায়ী করেন।

হসু জানান, তিন বছর আগে তিনি গোল্ড অ্যাপোলোর ট্রেডমার্কটি বিএসি কোম্পানিকে লাইসেন্স আকারে দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে বিএসি তাদের নিজস্ব পেজারগুলোতে গোল্ড অ্যাপোলোর নাম ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছিল।

হাঙ্গেরির কোম্পানির সঙ্গে হামলার সম্পর্ক

বিবিসি হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের একটি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বিএসি কনসাল্টিংয়ের নিবন্ধিত কার্যালয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোম্পানিটির কিছু পাওয়া যায়নি। যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে ১২টি কোম্পানি জায়গা ভাগাভাগি করে তাদের কার্যক্রম চালায়।

হাঙ্গেরির কর্তৃপক্ষের মতে, ২০২২ সালে প্রথম নিবন্ধিত এই প্রতিষ্ঠানটি দেশটিতে কেবল একটি ‘ব্যবসায়িক মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে ছিল। এর কোনও উৎপাদন কার্যক্রম ছিল না।

লিংকডইনে প্রকাশিত একটি প্রকাশনায় বিএসি দাবি করেছে, তারা আটটি সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ (ডিএফআইডি) অন্যতম।

ডিএফআইডি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। তবে প্রাথমিক আলোচনার ভিত্তিতে তারা বলেছে যে, বিএসির সঙ্গে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।

বিএসির ওয়েবসাইটে ক্রিস্টিনা বারসনি-আর্কিডিয়াকোনো নামের একজনকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় বিবিসি।

তবে তিনি এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি পেজার তৈরি করি না। আমি কেবল মধ্যস্থতাকারী।”

ফলে বিএসি কনসাল্টিংয়ের পেছনে আসলে কে, এ নিয়ে ধোয়াশা কাটেনি।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএসি কনসাল্টিং আসলে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের একটি প্রতিষ্ঠান।

প্রতিবেদনে তিন ইসরায়েলি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, পেজার যারা তৈরি করেছে, তাদের পরিচয় গোপন করতে আরও দুটি শেল কোম্পানি তৈরি করেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

বিবিসি স্বাধীনভাবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওই দাবি যাচাই করতে পারেনি। তবে বুলগেরিয়ার কর্তৃপক্ষ বিএসির সঙ্গে যুক্ত অন্য একটি কোম্পানির ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছে।

বুলগেরিয়ার সম্প্রচারমাধ্যম বিটিভি বৃহস্পতিবার জানায়, লেবাননে ডিভাইস হামলার সঙ্গে যুক্ত ১৮ মিলিয়ন ডলার বুলগেরিয়া হয়ে গেছে। পরে সেটি হাঙ্গেরিতে পাঠানো হয়েছে।

রেডিও ডিভাইস কীভাবে আক্রান্ত হলো

লেবাননে বৃহস্পতিবার একাধিক রেডিও ডিভাইসও বিস্ফোরিত হয়। এসব ডিভাইসের কয়েকটি আইসি-ভি৮২ মডেলের। এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হলো জাপানের আইসিওএম।

পাঁচ মাস আগে ডিভাইসগুলো কিনেছিল হিজবুল্লাহ। আইসিওএমের যুক্তরাষ্ট্র সাবসিডিয়ারির একজন বিক্রয়কর্মী অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, লেবাননে বিস্ফোরিত রেডিও ডিভাইসগুলো নকল পণ্য। এগুলো আইসিওএম তৈরি করেনি। অনলাইনে এমন নকল রেডিও ডিভাইস পাওয়া যায়।

আইসিওএম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা প্রায় এক দশক আগে ২০১৪ সালের অক্টোবরে ওই মডেলটির উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি এই ডিভাইস চালাতে প্রয়োজনীয় ব্যাটারির উৎপাদনও বন্ধ করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, তারা নিজেদের কোনও উৎপাদিত পণ্যের অংশ বিদেশ থেকে আনে না। রেডিওর সব উপকরণ পশ্চিম জাপানের একটি কারখানায় উৎপাদিত হয়।

বার্তা সংস্থা কিয়োডোর মতে, আইসিওএমের পরিচালক ইয়োশিকি এনোমোয়ো জানিয়েছেন, বিস্ফোরিত ওয়াকি-টকিগুলির ব্যাটারির চারপাশের ছবিগুলো থেকে বোঝা যায়, সেগুলোতে বিস্ফোরক বসানো হয়েছিল।

মঙ্গলবার লেবাননে হিজবুল্লাহ সদস্যদের ব্যবহৃত হাজার হাজার পেজার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

কীভাবে ডিভাইস বিস্ফোরিত হয়েছে

সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্তরা ডিভাইসগুলো পকেটে ঢোকানোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেগুলো বিস্ফোরিত হয়।

লেবানন কর্তৃপক্ষ বলছে, ডিভাইসগুলো ‘ইলেক্ট্রনিক বার্তার’ মাধ্যমে বিস্ফোরিত করা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, পেজারগুলোতে এমন বার্তা পাঠানো হয়েছিল যা দেখে মনে হয় হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব থেকে সেগুলো পাঠানো হয়েছে। সেই বার্তাগুলোর মাধ্যমেই ডিভাইসগুলোকে ট্রিগার করা হয়।

কিন্তু রেডিও ডিভাইসগুলোতে কেমন বার্তা পাঠানো হয়েছিল, তা জানা যায়নি।

অন্য ডিভাইসগুলো কতটা নাশকতা ঝুঁকিতে

ক্যামেরা, মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপেও এমন হামলা চালানো হতে পারে কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত লেবাননের জনগণ।

দেশটিতে বিবিসি তার কর্মীদের ফোন ও ক্যামেরা ব্যবহার করতে মানা করে দিয়েছে।

বিবিসির সংবাদদাতা ঘিদা বলেন, “সবাই আতঙ্কিত। জানি না আমরা আমাদের ল্যাপটপ ও ফোনের পাশে থাকতে পারব কি না। এই মুহূর্তে সবকিছুই বিপদের মতো মনে হচ্ছে। আর কেউ জানে না কী করতে হবে।”

এখনই কেন হামলা

গাজার ঘটনায় হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েল ও এর আশেপাশে রকেট হামলা চালায় প্রায়ই। অনেকে বলছেন, লেবাননকে একটি ধ্বংসাত্মক বার্তা পাঠানোর জন্যই এই সময়টিকে বেছে নিয়েছে ইসরায়েল।

আবার কেউ কেউ বলছেন, পেজার বোমার পরিকল্পনাটি কার্যকর করার ইচ্ছা এখনই ইসরায়েলের ছিল না। তবে চক্রান্তটি উন্মোচিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে ঘটনা ঘটানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের আউটলেট অ্যাক্সিওসের মতে, হিজবুল্লাহর সঙ্গে বড় পরিসরে যুদ্ধ লাগলে এই পেজার বোমাগুলো ব্যবহার করার ইচ্ছা ছিল ইসরায়েলের। যাতে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা পঙ্গু হয়ে যায়। কিন্তু গোষ্ঠীটি সতর্ক হয়ে যাওয়ায় আগেই হামলা চালানো হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত