Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

হিজবুল্লাহর নতুন প্রধান নাঈম কাশেম

হিজুবুল্লাহর নতুন মহাসচিব    শেখ নাঈম কাশেম।
হিজুবুল্লাহর নতুন মহাসচিব শেখ নাঈম কাশেম।
[publishpress_authors_box]

ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র শিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহ তাদের নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা করেছে।

এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তাদের শুরা কাউন্সিল শেখ নাঈম কাশেমকে দলের মহাসচিব হিসেবে বেছে নিয়েছে তারা।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি বিমান হামলায় সংগঠনটির সাবেক প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হন। তার একমাস পর উপ-প্রধান নাঈম কাশেমকে নতুন প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছে সংগঠনটি।

হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন নাসরাল্লাহ ১৯৯২ সালে সংগঠনটির মহাসচিব বা শীর্ষ নেতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে নাসরাল্লাহই ছিলেন হিজবুল্লাহর প্রধান।

নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে হিজবুল্লাহর নির্বাহী কাউন্সিল প্রধান হাশেম সাফিদ্দিনের নামও বিবেচনায় ছিল। হাশেম সাফিদ্দিন হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান ও হাসান নাসরাল্লাহর আত্মীয় ছিলেন। তিনি হাসান নাসরাল্লাহর মামাতো ভাই।

তবে হাসান নাসরাল্লাহর পর তিনিও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। চলতি মাসের শুরুর দিকে (৩ অক্টোবর) লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে এক বিমান হামলায় সাফিদ্দিন নিহত হয়েছেন।

ফলে শেখ নাঈম কাশেমকেই হিজবুল্লাহ তাদের প্রধান হিসাবে বেছে নিয়েছে।

৭১ বছর বয়সী নাঈম কাশেমকে হিজবুল্লাহর উপ-মহাসচিব এবং তাকে সংগঠনটির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি মনে করা হত। তার জন্ম ১৯৫৩ সালে লেবাননের নাবাতিয়েহ প্রশাসনিক অঞ্চলের কফর কিলা গ্রামে।

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই গ্রামটি বিশেষ করে গত অক্টোবর থেকে অনেকবার ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।

শিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কাশেমের সম্পৃক্ততার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। গত শতকের সত্তরের দশকে তিনি অধিকারাহারাদের নিয়ে প্রয়াত ইমাম মুসা আল-সদরের আন্দোলনে যোগ দেন, যে আন্দোলনটি পরবর্তী সময়ে লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী ‘আমাল আন্দোলনের’ অংশে পরিণত হয়েছিল।

তবে ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর তিনি ‘আমাল আন্দোলন’ থেকে বেরিয়ে আসেন এবং হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন, যা তাকে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন ধর্মীয় নেতাদের একজনে পরিণত করে।

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) লেবাননে হিজবুল্লাহর সৃষ্টিতে সহায়তা করে। লেবাননে ১৯৮২ সালে ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে গঠিত হয় হিজবুল্লাহ।

বৈরুতে দশকের পর দশক ধরে ধর্ম বিষয়ে পড়ানো কাশেমের ধর্মীয় পরামর্শদাতাদের অন্যতম ছিলেন আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ হুসেইন ফাদলাল্লাহ, যিনি শিয়া মতাদর্শীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সম্মানিত।

হিজবুল্লাহর বেশিরভাগ কার্যক্রমই যেহেতু গোপন থাকে, সে কারণে এই সংগঠনে নাঈম কাশেমের সব ভূমিকা সম্পর্কেও সব তথ্য পাওয়া যায় না। একটা সময়ে তিনি হিজবুল্লাহর শিক্ষা নেটওয়ার্কের কিছু অংশ পরিচালনা করেতেন। এছাড়া সংগঠনটির পার্লামেন্টারি কার্যক্রমও দেখাশোনা করতেন তিনি।

নাঈম কাশেমকে ১৯৯১ সালে যখন হিজবুল্লাহর উপ-মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়, তখন সংগঠনটির মহাসচিব ছিলেন আব্বাস আল-মুসাবি, যিনি পরে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

মুসাভি পরের বছর ইসরায়েলি হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন। মুসাভি নিহত হওয়ার পর সাইয়েদ হাসান নাসরাল্লাহ হিজবুল্লাহর প্রধান হন। বয়সে নাসরাল্লাহর চেয়ে বড় হলেও গোষ্ঠীটির ডেপুটি হিসেবেই থেকে যান নাঈম কাশেম।

লেবাননে ১৯৯২ সালে যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেই নির্বাচনে হিজবুল্লাহর হয়ে নির্বাচন পরিচালনা করেন শেখ নাঈম কাশেম। তিনি দলের মুখপাত্র হিসেবেও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ইসরায়েলের হিজবুল্লাহর চলমান সংঘর্ষের মধ্যেই তিনি প্রায়ই বিদেশি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন।

বছরের পর বছর ধরে হিজবুল্লাহয় একটি গুরুত্বপূর্ণ জনমুখী ভূমিকায় থাকা কাশেম এই সংগঠনটির শূরা পরিষদেরও সদস্য।

২০০৫ সালে তিনি হিজবুল্লাহর ভেতরের নানা বিষয় নিয়ে একটি বইও প্রকাশ করেন, যা পরে বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। ইংরেজিতে বইটির নাম হয়, ‘হিজবুল্লাহ : দ্য স্টোরি ফ্রম উইদিন’, বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘হিজবুল্লাহ : ভিতরের গল্প’।

২০০৬ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর হাসান নাসরাল্লাহ খুব বেশি আর জনসম্মুখে আসেননি। তখন থেকে নাঈম কাশেম দলটির মুখপাত্রের ভূমিকাও পালন করেন।

তথ্যসূত্র : আল জাজিরা

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত