রাজনৈতিক কোনও দল নিষিদ্ধ করার কোনও উদ্দেশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের নেই বলে আদালতকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
ছাত্র-জনতাকে ‘নির্বিচারে হত্যার’ দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানিতে তিনি একথা জানান। শুনানিতে রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ চান অ্যাটর্নি জেনারল।
মঙ্গলবার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহবুবুল উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১ সেপ্টেম্বর দিন রাখা হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন সারডা সোসাইটির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া রিট আবেদনটি করেন। রিটের শুনানি কয়েকদফা পিছিয়ে মঙ্গলবার হয়। আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া শুনানি করার পর অ্যাটর্নি জেনারেল রিটটি খারিজ চান।
এসময় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হাইকোর্টকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনও উদ্দেশ্য নেই কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ বা নিবন্ধন বাতিল করা। সংবিধানে সংগঠন ও রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে স্বাধীনতা রয়েছে এই সরকার সেটিতে বিশ্বাস করে। বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সঙ্গে জড়িতদের অন্যায়-অবিচারের বিচার আইন-আদালতের মাধ্যমে হবে। সেটার জন্য কোনও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা সমীচিন নয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আওয়ামী লীগে অনেক ভালো নেতা-কর্মী আছেন, যারা তাদের আদর্শে বিশ্বাস করেন। তাই তাদের সে বিশ্বাসের দল নিষিদ্ধ করা আদালতের কাজ নয়। ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে সেই জনতা’- এমন স্লোগানের প্রেক্ষাপটে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে নতুন স্বাধীনতা এসেছে সেখানে সবার বাকস্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হতে হবে। তাই রাজনৈতিক দল পরিচালনার স্বাধীনতা এ সময় বন্ধ হতে পারে না।
তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়েছে। যেটি আমাদের কারোরই কাম্য ছিল না। বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনের সঙ্গে বিচার বিভাগের সমর্থনের ও অবিচারের প্রেক্ষাপটেই এমন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
“সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে বিচার বিভাগে কোনও আক্রমণ হলে সেটি আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণেরই বিষয়। তাই কোনও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নিয়ে মাঠের রাজনীতি আদালতে টেনে আনা ঠিক নেই। আর কোনও রাজনৈতিক দল এই রিট নিয়ে আদালতে আসেনি।”
রিট আবেদনটি খারিজ চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টকে বলেন, “এই রিটটি যাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে সেই আওয়ামী লীগকে রিটে পক্ষভুক্ত করা হয়নি এবং কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি। এই রিটের কোনও লোকাস স্ট্যান্ডি (এখতিয়ার) নেই। এই রিট মেনটেইনেবল নয়। তাই রিটকারীকে কস্ট (খরচ বহন) করার আবেদন করছি।”
এই রিটেই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সর্বনিম্ন ৩ বছর চেয়ে করা অংশটি আগের শুনানির দিন ‘নট প্লেস’ (উত্থাপিত হয়নি) মর্মে খারিজ চান রিটকারী আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া।
ওইদিন শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান আদালতকে বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান অনুযায়ী আছেন। তারা কতদিন থাকবেন, সেটা আদালতের আদেশের জন্য নিয়ে আসার বিষয় না। রিটের এই বিষয়টি মেইনটেইনেবল না।”