Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি : হাইকোর্ট

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে রাজপথে ছিল কয়েকটি সংগঠন। ফাইল ছবি
মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে রাজপথে ছিল কয়েকটি সংগঠন। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থাটি দেশের স্বাধীনতা এনে দেওয়া বীরদের স্বীকৃতির অংশ হিসাবে দেখছে হাইকোর্ট।

সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে কোটা বাতিল করে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই বক্তব্য পাওয়া যায়।

রায়ে আদালত বলেছে, কোটার বিষয়ে সরকারের নীতিগত বিষয়। তবে কোটা ব্যবস্থা মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য চালু করা হয়, যা সম্পূর্ণরূপে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি স্বরূপ। 

গত মাসে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের পর শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মধ্যে রবিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে।

গত ৫ জুন রায়টি দিয়েছিল বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ। গত ১১ জুলাই রায়ের সংক্ষিপ্তসার প্রকাশ করা হয়েছিল।

রায়ে সব কোটা পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি বলা হয়, সরকার প্রয়োজন মনে করলে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার হার পরিবর্তন বা বাড়াতে-কমাতে পারে।

২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, অতীতেও কয়েকটি রিট আবেদনে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা কঠোরভাবে মানতে বলা হয়েছিল।

“এটা অবশ্যই সরকারের নীতিগত বিষয়। তবে রেকর্ড থেকে প্রতীয়মান হয় যে কোটা ব্যবস্থা মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য চালু করা হয়, যা সম্পূর্ণরূপে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি স্বরূপ। এর মাধ্যমে জাতির জন্য বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখায় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিরা স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।”

মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে পুরনো রায়

হাইকোর্ট তার পূর্ণাঙ্গ রায়ে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা কঠোরভাবে মানার বিষয়ে উচ্চ আদালতের পূর্ববর্তী এক রায়ের কথা উল্লেখ করা হয়।

চাকরিজীবী মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়স বাড়ানো নিয়ে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে হাইকোর্ট সেই রায় দিয়েছিল।

সেই রায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত ৩০ শতাংশ কোটা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছিল। কোনও ক্ষেত্রে যদি কোটা পূরণ করা না হয়, তবে সংশ্লিষ্ট পদ শূন্য রাখতে হবে।

হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করলে হাইকোর্টের আদেশের বেশ কিছু অংশ বাদ দিয়ে রায় দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

সেই রায়ে কোটা সংক্রান্ত হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ থেকে ‘কোনও ক্ষেত্রে যদি কোটা পূরণ করা না হয় তবে সংশ্লিষ্ট পদ শূন্য রাখতে হবে’ অংশটি বাদ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পরিবহন সুবিধা দিতে বলা হাইকোর্টের অংশটিও বাদ দিয়েছিল আপিল বিভাগ।

এবারের রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত ৩০ শতাংশ কোটা কঠোরভাবে মানতে বলা হয়েছিল সেই রায়ে।

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায়ের পর বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ছবি : হারুন অর রশীদ রুবেল

এবার কোটা যেভাবে আদালতে

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হতো।

এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী কোটা ১ শতাংশ ছিল।

৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুই চালু করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদেরও এই কোটায় চাকরি পাওয়ার সুেযাগ দেয়।

২০১৮ সালে এক আন্দোলনের মুখে সরকার কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে।

ওই কমিটি সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনও কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে সুপারিশ দেয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি হয়।

ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নেতা অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে আবেদন করেন।

তার শুনানি শেষে গত ৫ জুন ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের পাশাপাশি জেলা, নারী, প্রতিবন্ধীসহ সব কোটাই পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়।

কোটা পুনর্বহালের রায়ের পর আবার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে তারা নামে আন্দোলনে।

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষ রায়টি স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আবেদন করেন।

সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ গত ১০ জুলাই কোটা এবং হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থিতাবস্থা জারি করে। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে আপিলের আবেদনও করতে বলা হয়।

আদেশের সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চাইলে আদালতে তাদের বক্তব্য দিতে পারে।

সর্বোচ্চ আদালতের আদেশকে ইতিবাচক বললেও আন্দোলনকারী বলছে, তাদের দাবি সরকারের কাছে। নির্বাহী বিভাগকেই সংস্কার করে কোটা ৫ শতাংশে কমিয়ে আনতে হবে।

আন্দোলনকারীরা রবিবার রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। তারা দাবি করছে, সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটা সংস্কার করতে হবে।

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সেই দাবি দৃশ্যত প্রত্যাখ্যান করে এদিনই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কোটা জটিলতার সুরাহা আদালতেই হবে।

এখন রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের আবেদন করলে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘটবে বিষয়টির। এজন্য আগামী ৭ আগস্ট দিন ঠিক করে রেখেছে আপিল বিভাগ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত