হাতির পিঠে ভ্রমণ, বিয়ে বাড়িতে শোভাবর্ধন, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের শোভাযাত্রায় বিজ্ঞাপনের মতো বিভিন্ন বিনোদনের কাজে ব্যবহার করা এবং নির্যাতনের মাধ্যমে হাতিকে প্রশিক্ষণ বন্ধ করার নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে একটি আবেদন হয়েছে।
রবিবার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন অভিনেত্রী জয়া আহসান এবং প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। আবেদনের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব।
পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি রাকিবুল হক এমিল রিট আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিচারপতি নাঈমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন হাই কোর্ট বেঞ্চে এই আবেদনের শুনানি হতে পারে।
রিট আবেদনের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বন্দি হাতিকে অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে, তাদেরকে বিনোদনের কাজে ব্যবহার করতে এবং হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে সংগঠনটি বেশ কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের কর্মসূচি দিয়ে আসছে।
“এর মাঝে দু’বার বন ভবন ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করেছি আমরা। বন বিভাগের পক্ষ থেকে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও পরবর্তীতে তার কোনও ফলপ্রসূ ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। নির্যাতিত হাতিদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হলেও কোনও উপযুক্ত জবাব মেলেনি।”
তিনি বলেন, এভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে বাধ্য হাতিরা প্রায়ই নিজের ভিতরের ক্ষোভ ও যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বিভিন্ন সময় মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়। কিছু অসৎ ব্যক্তির অনৈতিক ব্যবসা ও বে-আইনি চাঁদা বাণিজ্যকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে জনগণের জানমালের এই ক্ষতি গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি জানান, আইইউসিএনের লাল তালিকাভুক্ত প্রাণী হিসেবে এশিয়ান হাতি বর্তমানে মহাবিপদাপন্ন। তা সত্ত্বেও এই হাতিকে ব্যক্তিমালিকানায় সার্কাসের কাজে ব্যবহারের জন্য বনবিভাগের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। এ ধরনের সার্কাস এবং চাঁদাবাজিতে বাধ্য করতে শৈশব থেকেই মা হাতির কাছ থেকে শাবককে ছাড়িয়ে নিয়ে নির্মম অত্যাচারের মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়।
হাতির মাহুত চাঁদাবাজির সময় একটি ধাতব হুক হাতে নিয়ে বসে থাকে। যা দিয়ে সে হাতির শরীরের বিভিন্ন দুর্বল স্থানে আঘাত করে চাঁদাবাজিসহ মানুষের ওপর চড়াও হতে বাধ্য করে। এই প্রক্রিয়াটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২ এবং প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯ এর পরিপন্থী।
এ কারণে হাতি নির্যাতন বন্ধ, বিনোদনের কাজে এই মহাবিপদাপন্ন প্রাণীর অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে জনগণের জানমালের ক্ষতি বন্ধ করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে তিনি জানান।