ভারতে ইলিশ উপহার হিসেবে নয়, রপ্তানি পণ্য হিসেবে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, “ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হবে। রপ্তানির টাকা বাংলাদেশ সরকার পাবে। সেটা খুব ছোট করে দেখার মতো টাকা না।”
সোমবার সকালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর রেগুলেটর এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে এই ব্যাখ্যা দেন তিনি।
আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে গত শনিবার আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার মেট্রিকটন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
যদিও এর আগে সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছিলেন, দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এ বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনও ইলিশ মাছ পাঠানো হবে না।
এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই সোমবার রিজওয়ানা হাসান বলেন, “বাংলাদেশ থেকে ইলিশ এখনও যায়নি। শুধু একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার আগেই তো দাম বেড়ে গেছে। কাজেই রপ্তানি হলে দাম বাড়বে– এ কথাটা ঠিক না। যেটা সরকারের বিবেচনায় আছে।”
তিনি বলেন, “যারা ইলিশটা চাচ্ছে, তারাও কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ওপার থেকে অনেক সমর্থন দিয়েছে। সেটা আমরা সকলে দেখেছি।
“আমরা খুব সহজে কতগুলো কথা বলে ফেলি। আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে– প্রতিবেশীর সাথে অনেক বিষয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা করতে হবে। আমাদের সেই আলোচনার দ্বারটা ছোট ছোট বিষয়ে বন্ধ হয়ে যাক– সেটা আমরা চাই না।”
নদী থেকে বালু উত্তোলন দস্যুতায় পরিণত হয়েছে
নদী থেকে বালু উত্তোলন জাতীয় দস্যুতায় পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “যেখানেই নদীতে বালু আছে সেখানেই জেলা প্রশাসকরা মানুষের শত আপত্তি সত্ত্বেও রাজস্ব আয়ের কথা চিন্তা করে বালু মহাল ঘোষণা করে দেয়।
“বালু মহাল ঘোষণার যেমন সুযোগ আছে তেমনি বিলুপ্তিরও সুযোগ আছে। বালু উত্তোলনের মাধ্যমে নদীর ড্রেজিং কি বালু ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে দেব, নাকি সরকারিভাবে ড্রেজিং করা হবে– তা আমাদের ভাবার সময় এসেছে।”
উপদেষ্টা বলেন, “মুছাপুর নদীর পাড়ে আসার কারণ হচ্ছে, সমস্যাটা সরকারের চশমা দিয়ে না দেখে মানুষের চোখ দিয়ে দেখা। মানুষ আর সরকার ভিন্ন সত্ত্বা হলে পরিবর্তন হবে না। মানুষকে আর সরকারকে এক জায়গায় এসে সমস্যার সমাধানে যেতে হবে।
“আমরা নদী তীরবর্তী এলাকায় এসে স্থানীয় মানুষের কথা শুনলাম। সরকারি হিসাব মতে, প্রতিবছর নদী ভাঙনে ৩০ হাজার মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়, যেটি বেসরকারি হিসাবে এক লাখের বেশি মানুষ সর্বশান্ত হয়ে যায়।”
লোনা পানির আগ্রাসন ঠেকাতে মুছাপুর রেগুলেটর লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রেগুলেটর দিনে দিনে তৈরি করা সম্ভব না। এটার একটা প্রক্রিয়া আছে। আমরা যদি দ্রুতগতিতেও রেগুলেটর নির্মাণ করতে চাই, তাও দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে।
রিজওয়ানা বলেন, “এখানে যে চর হয়েছে, সেখানের বালু সরিয়ে দেওয়ার জন্য এলাকাবাসী প্রস্তাবনা দিয়েছে। নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং করতে হবে। সরকারকে রেগুলেটর আর ড্রেজিং দুটোর কথাই ভাবতে হচ্ছে। সবচেয়ে কার্যকর কোনটি হবে তা আমরা ভেবে দেখব। যেটি কার্যকর হবে সেটিই আগে বাস্তবায়ন হবে।”