Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভে স্মরণে যে ফিলিস্তিনি শিশু

নিহত ফিলিস্তিনি শিশু হিন্দ রজব।
নিহত ফিলিস্তিনি শিশু হিন্দ রজব।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ছয় বছরের মেয়েটি পালাতে চেয়েছিল যুদ্ধ থেকে, পারেনি; ইসলায়েলি গোলার আঘাতে চাপা পড়েছিল ধ্বংসস্তূপের নিচে। তখনও বাঁচার আশা ছিল; আকুতি জানাচ্ছিল- “কেউ কি আসবে? আমাকে বাঁচাবে?” কিন্তু এগিয়ে যেতে পারেনি।

এই ফিলিস্তিনি শিশু হিন্দ রজব জীবন থেকে হারিয়ে গেল, তবে তার স্মৃতি জাগিয়ে রাখার দায়িত্ব নিল যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।

ওয়াশিংটন যখন তেল আবিবের পাশে থাকছে, তখন গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর মিছিল থামাতে বিক্ষোভে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা।

সপ্তাহ খানেক ধরে তাদের বিক্ষোভে অচল দেশটির উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো। তার মধ্যে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা নেয় হিন্দ রজবের স্মৃতি ধরে রাখার প্রয়াস।

ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক ভবন হ্যামিল্টন হলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভবনের নতুন নাম দেয় তারা। ব্যানার টানিয়ে দিয়ে জানায়, এখন থেকে এই ভবনের নাম ‘হিন্দ’স হল’।

দুই সপ্তাহ ধরেই ক্যাম্পাসে তাঁবু গেঁড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালাচ্ছে তারা, এর মধ্যে হ্যামিল্টন হলের দখল নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ ডাকে।

মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কয়েকশ সদস্য হ্যামিল্টন হল থেকে বিক্ষোভরতদের হটিয়ে দেয়, গ্রেপ্তারও করা হয় শতাধিক শিক্ষার্থীকে।

তবে তার আগেই বিক্ষোভের প্রেরণার নাম হয়ে ওঠে ফিলিস্তিনি শিশু হিন্দ।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির হ্যামিল্টন হলের নাম ফলক তুলে হিন্দের নামে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা।

হিন্দ রজব কে?

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে যে প্রায় ২০ হাজার শিশু এরই মধ্যে নিহত হয়েছে, তাদেরই একজন হিন্দ রজব। গাজার দক্ষিণাংশের তেল আল-হাওয়ায় পরিবারের সঙ্গে ছিল তার বাস।

ইসরায়েলি হামলার মুখে তারা ছাড়তে চেয়েছিল ওই এলাকা।

গত ২৯ জানুয়ারি একটি গাড়িতে হিন্দের স্বজনরা যুদ্ধকবলিত এলাকা থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। ইসরায়েল ওই এলাকা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে, তা শোনার পরই তারা রওনা হয়েছিল।

গাড়িতে মামা-মামী এবং চার মামাত ভাই-বোনের সঙ্গে হিন্দও ছিল। তবে সেই গাড়িটি পড়ে ইসরায়েলি গোলার মুখে। তাতে একজন বাদে হিন্দসহ বাকি সবাই মারা যায়। তাদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া যায় ১২ দিন পরে।

হিন্দের নানা বাহা হামাদা গত ফেব্রুয়ারিতে এএফপিকে বলেছিলেন, তারা সবাই শহীদ হয়েছে।      

কীভাবে হামলার শিকার

জীবন থেকে হারিয়ে গেল হিন্দ রজব।

হিন্দের সঙ্গে গাড়িতে থাকা তার মামাত বোন লিয়ান হামাদা জানায়, একটি ট্যাংক থেকে তাদের গাড়িতে গোলা ছোড়া হয়েছিল।

আক্রান্ত হওয়ার পরপরই ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে ফোন করেছিলেন ১৫ বছর বয়সী লিয়ান। সে বলেছিল, “তারা আমাদের দিকে গোলা ছুড়ছে। একটি ট্যাংক দেখছি।”

তখন রেড ক্রিসেন্ট হিন্দের সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও টেপও প্রকাশ করেছিল। তাতে হিন্দকে বলতে শোনা যায়, “আমার ভীষণ ভয় লাগছে। দয়া করে কেউ আস: আমাকে উদ্ধার কর। কেউ আসবে কি?”

তবে হিন্দকে উদ্ধার করা যায়নি। ১২ দিন পর ঘটনাস্থলে গিয়ে বিধ্বস্ত সেই গাড়ির ভেতরে অন্য পাঁচ স্বজনের সঙ্গে হিন্দের লাশ পায় তার অন্য স্বজনরা।

হিন্দের মা উইসাম হামাদা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “আমার মেয়েটির আকুতি শুনেও কারা কারা এগিয়ে যায়নি, আমি হাশরের মাঠে আল্লাহর কাছে তার জবাব চাইব।”

কেন উদ্ধার করা গেল না?

ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে, তারা হিন্দকে উদ্ধার করতে একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেটাও ইসরায়েলি বাহিনীর গোলার মুখে পড়ে। তাতে দুজন চিকিৎসাকর্মী প্রাণ হারান।

পিআরসিএসের মুখপাত্র নেবাল ফারসাখ সাংবাদিকদের বলেন, সেই ১২টি দিন তাদের দুঃস্বপ্নের মতো পার করতে হয়েছে। কাউকে সেখানে পাঠালে তার কপালে কী ঘটবে, তা বুঝতে না পেরে যাওয়াও যাচ্ছিল না।

ইসরায়েল ওই এলাকা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরই সেখানে যাওয়ার সুযোগ ঘটে। গিয়ে পাওয়া যায় হিন্দ ও তার স্বজনদের লাশ।

এই শিশুর মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলি বাহিনীকে দায়ী করে ফারসাখ বলেন, “এটা একটা ভয়াবহ চিত্র। শিশুটি কাঁদছিল। আমাদের বলছিল, তাকে উদ্ধার করতে। আমরা সেখানে গিয়ে তাকে নিরাপদে উদ্ধারের প্রস্তুতি নিয়ে বসে ছিলাম। কিন্তু আমাদের যেতে দেওয়া হয়নি।

“উল্টো দখলদার বাহিনী আমাদের অ্যাম্বুলেন্সেও হামলা চালায়।”

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছিল, হিন্দদের গাড়িতে হামলার সময় তাদের কোনও সৈন্য ওই এলাকায় ছিল না।

তবে আল জাজিরা প্রমাণ দেখিয়েছে, সেখানে ওই সময় তিনটি ইসরায়েলি ট্যাংক ছিল। পরে ওয়াশিংটন পোস্ট স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে এই তথ্য নিশ্চিত করে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত