Beta
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫

কৃষি জমির উত্তরাধিকারে হিন্দু বিধবা স্ত্রীর ভাগবখরা-১

চিত্রকর্মটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত। চিত্রকর্ম: নতুন মেঘ, মাধ্যম: কাগজে টেম্পারা, সাল: ১৯৩৭। শিল্পী: নন্দলাল বসু। সংগ্রহ: ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট, দিল্লি, ভারত। আলোকচিত্র: উইকিআর্ট।

পূর্বাভাষ: হিন্দু শাস্ত্রীয় আইনে দুটি প্রধান মতবাদ আছে: মিতাক্ষরা ও দায়ভাগ। এ-দুই মতের আইনেই পুত্র, পৌত্র, এমনকি প্রপৌত্র থাকলেও বিধবা স্ত্রীরা স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিণী হতে পারে না, হতে পারে যদি তারা কেউ না থাকে। স্বামীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার পাবার ক্ষেত্রে হিন্দু বিধবা স্ত্রীদের এই সুদূরপরাহতদশা ঘোঁচাতে ব্রিটিশ ভারতের শাসকরা ১৯৩৭ সালে নতুন আইন করে পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্রদের সঙ্গে একই সময়ে এক পুত্রের মতো ভাগ বিধবা স্ত্রীদেরও পাবার বিধান করে। সেই সঙ্গে বিধবা পুত্রবধু ও বিধবা পৌত্র বধুদেরও অনুরূপ ভাগ পাবার বিধান করে ঐ আইনে। কিন্ত, সমস্যা বাধল ঐ আইনে কৃষি জমিতে তাদের ভাগ পাওয়া নিয়ে। কেন এই সমস্যা? আমাদের দেশে এখনও কি এই সমস্যা থাকবে? মিতাক্ষরা ও দায়ভাগ হলো কী করে? ভারতে ব্রিটিশের আইন প্রণয়নের কর্তৃত্বের কী ইতিহাস? পড়ুন সেই সব আলোচনা এ-লেখায়। ছয় পর্বের ধারবাহিকের আজ প্রকাশ হলো প্রথম পর্ব।       

উনিশ শতকের বাংলার জীবনযাপন সংস্কৃতির প্রতীকী চিত্রকর্ম। আলোকচিত্র ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সৌজন্যে।

১. গোড়ার কথা        

এ আবার কেমন কথা! অন্য সব স্থাবর সম্পত্তির মতোই কৃষি জমিও তো স্থাবর সম্পত্তি?

তা তো বটেই।

আলাদা করে তবে কেন শুধু কৃষি জমির কথা আসছে? কৃষি-অকৃষি ভেদ আছে নাকি উত্তরাধিকারে?

না, তা ছিল না বিধিদত্ত হিন্দু শাস্ত্রীয় আইনে, হয়েছিল বিধিবদ্ধ প্রণীত আইনে, খোদ ব্রিটিশেরই ভুলে!

সে আবার কেমন কথা! আইনের মধ্যে আবার শাস্ত্রীয় আর প্রণীত ব্যাপারটা কী? যার তার কথা তো আর আইন হতে পারে না! আইন হতে গেলে কথাটা আসতে হয় যথাযথ কর্তৃত্বসম্পন্নের থেকে। আইন কি না, তা চিনতে হলে সে-কথার উৎস জানতে হয় আগে। কর্তৃত্বটা আধুনিক যুগের রাষ্ট্রে শাসকেরা চালায় জনগণের নামে, পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ প্রথম একশ বছর (১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে নবাব সিরাজউদ্দৌলার উৎখাত থেকে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরাজের শাসনাধীনে নেবার আগে পর্যন্ত) চালিয়েছে কোম্পানির [ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, কেতাবি নাম তখন ‘United Company of Merchants of England Trading to the East-Indies’] নামে, পরের ৮৯ বছর (খ্রিষ্টাব্দ ১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭-এ ভারত-পাকিস্তানে ভাগ করে ভেগে যাওয়ার আগে পর্যন্ত) চালিয়েছে সরাসরি ব্রিটিশরাজের [রাজা-রানীর] নামে। রাজারাও চালিয়েছে প্রজার দোহাই দিয়ে। আগে চালাত বিধাতার নামে। বিধাতার কর্তৃত্বের উৎস তিনি নিজেই, তাহাতেই সব প্রশ্ন শেষ। ধর্মশাস্ত্রগুলোতে মানুষের পার্থিব জীবনের নানাবিধ বিষয়েও বিধিবিধান দেওয়া হয়, সেসবের যেগুলো শাসকেরা রাজ্যে-রাষ্ট্রে চালু রাখে সেগুলোই হলো শাস্ত্রীয় আইন। (হুঁ, হুঁ, বাবা! শাসকের হুকুম ছাড়া আইন চলে না ইহজগতে!) রাজ্যের বা রাষ্ট্রের শাসকেরা নিজেরা যেসব বিধিবিধান প্রণয়ন করে সেগুলো হলো প্রণীত আইন।

আইন কি না, তা চিনতে হলে সে-কথার উৎস জানতে হয় আগে। কর্তৃত্বটা আধুনিক যুগের রাষ্ট্রে শাসকেরা চালায় জনগণের নামে, পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ প্রথম একশ বছর (১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে নবাব সিরাজউদ্দৌলার উৎখাত থেকে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরাজের শাসনাধীনে নেবার আগে পর্যন্ত) চালিয়েছে কোম্পানির [ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, কেতাবি নাম তখন ‘United Company of Merchants of England Trading to the East-Indies’] নামে, পরের ৮৯ বছর (খ্রিষ্টাব্দ ১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭-এ ভারত-পাকিস্তানে ভাগ করে ভেগে যাওয়ার আগে পর্যন্ত) চালিয়েছে সরাসরি ব্রিটিশরাজের [রাজা-রানীর] নামে।

সম্পত্তির উত্তরাধিকারে হিন্দু বিধবা স্ত্রীর ভাগবখরার কথা কী ছিল আর কী আছে শাস্ত্রীয় আইনে?

হিন্দু শাস্ত্রীয় আইন আবার ভাগ হয়ে আছে প্রধান দুটি মতবাদে: একটি হলো ‘দায়ভাগ’, আরেকটি হলো ‘মিতাক্ষরা’।

সে আবার হলো কেমন করে?

হিন্দুমতে তাদের আইন হলো বিধাতা প্রদত্ত।

সে তো সব ধর্মেই বলে! আবার তাই নিয়ে ভাগাভাগিও প্রত্যেক ধর্মে!

তা ঠিক, ধর্মে ধর্মে মিল অন্তত এ-দুটো ব্যাপারে! হিন্দুমতে বলে, তাদের ধর্মের সব বিধিবিধান স্বয়ং বিধাতা পাঠিয়েছেন ভারতভূমে বেদমন্ত্রাকারে। তার ভাষা তো সংস্কৃত, তাতে আবার মন্ত্রবাণী! সেসবের আসল অর্থ ধরতে পারেন কেবল দিব্যজ্ঞানী মুনি-ঋষিরাই। তারা বেদমন্ত্রগুলোর গূঢ়ভাব সম্প্রসারণ-পরিমার্জন করে মূঢ় মানুষের জীবন বেদবিধি অনুসারে চালাবার নীতি-নির্দেশনা বাতলান সংস্কৃত ভাষায় সব গ্রন্থ লিখে লিখে। এগুলোকে বলা হয় ‘স্মৃতিশাস্ত্র’। কালে কালে আসতে থাকেন নতুন নতুন মুনি-ঋষি, আর তাদের কাছ থেকে সমাজভেদে সংস্কার হয়ে আসতে থাকে নতুন নতুন সব স্মৃতিশাস্ত্র। সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে স্মৃতিশাস্ত্র এসে ঠেকে গোটা বিশেকে। দেখা দেয় নানা মুনির নানা মত।

ও, কথাটা [‘নানা মুনির নানা মত’] তাহলে এসেছে এসব কাণ্ডকারখানা থেকে!

তা হলেও হতে পারে! স্মৃতিশাস্ত্রগুলোর মধ্যে প্রধান দুটি হলো: ঋষি মনুর ‘মনুস্মৃতি’, আর ঋষি যাজ্ঞবল্কের ‘যাজ্ঞবল্কস্মৃতি’। বেদমন্ত্রগুলো কিন্তু আসেনি লিখিত আকারে, আসে মুখে মুখে। গুরু-শিষ্যপরম্পরায় যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে সেসব মুখে মুখে, আর শুনে শুনে। বেদকে (চতুর্বেদ – ঋক, যজুঃ, সাম ও অথর্ব; এই বিভাগ করেন আরেক মুনি বেদব্যাস) তাই বলা হয় ‘শ্রুতিশাস্ত্র’ (পরে যখন লিপিবদ্ধ হয়েছে)। প্রাচীন সংস্কৃত এসব শ্রুতি-স্মৃতি শাস্ত্রই হলো হিন্দু শাস্ত্রীয় আইনের মূল উৎস (পরে তার সঙ্গে একে একে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা কিছু আচার-অনুষ্ঠানও)। যুগ যুগ ধরে এসবই আইন হিসেবে প্রয়োগ করে এসেছে শাসকেরা, আর মেনে এসেছে প্রজারা।

তা না মেনে কি উপায় আছে প্রজাদের! তা, সেই দায়ভাগ আর মিতাক্ষরার ভাগটা হলো কী করে?

সংস্কৃত শ্রুতি-স্মৃতি শাস্ত্রের নীতি-নির্দেশনাগুলোর অনুসরণ মানুষের কাছে আরও সহজ করে তুলতে সংস্কৃত শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতেরা আবার লাগলেন সেগুলোর টীকা-ভাষ্য লিখতে। মধ্যযুগের প্রথমভাগে ভারতবর্ষের এরকম প্রধান দুজন হিন্দু পণ্ডিত টীকা-ভাষ্য লিখলেন দু’রকমের। সেই থেকে হিন্দু শাস্ত্রীয় আইন ভাগ হয়ে যায় ওই দু-ভাগে। খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকের শেষভাগ থেকে দ্বাদশ শতকের প্রথমভাগে ভারতের দাক্ষিণাত্যে [এখনকার ভারতের কর্ণাটক রাজ্য ও তার আশপাশের অঞ্চল] পশ্চিম-চালুক্য ওরফে কল্যাণী-চালুক্য সাম্রাজ্যের রাজা ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের রাজদরবারের পণ্ডিত বিজ্ঞানেশ্বর (কর্ণাটকেই জন্ম ও নিবাস তার) প্রধানত যাজ্ঞবল্কস্মৃতির ভিত্তিতে রচনা করেন ভাষ্যগ্রন্থ ‘মিতাক্ষরা’। তার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে ‘মিতক্ষরা মতবাদ’, প্রচলিত হয় ‘মিতাক্ষরা হিন্দু শাস্ত্রীয় আইন’।

আর দায়ভাগ?

সেও প্রায় ওই কাছাকাছি সময়েই, সম্ভত যখন সেকালের বাঙ্গাল মুলুকে [আমাদের পুরো বাংলাদেশ, আর ভারতের গোটা পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্য ও আসাম রাজ্যের কিছু অংশ] জয়-জয়াকার চলছে সেন বংশীয় হিন্দু রাজা বিজয় সেনের। তখন রাঢ়বঙ্গের [এখনকার ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার ও হুগলি জেলার কিছু অংশ এবং বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অঞ্চলসমূহ] সন্তান, সেনরাজদরবারের সংস্কৃত শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত জীমূতবাহন মনুস্মৃতিসহ অন্যান্য শ্রুতি-স্মৃতি শাস্ত্রগুলোর ভিত্তিতে রচনা করেন সারসংকলন গ্রন্থ ‘দায়ভাগ’। তার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে ‘দায়ভাগ মতবাদ’, প্রচলিত হয় ‘দায়ভাগ হিন্দু শাস্ত্রীয় আইন’।

সংস্কৃত শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত সেকালের বঙ্গে!

খাস বাঙালি হয়ত-বা ছিলেন না জীমূতবাহন। তাঁর পূর্বপুরুষরাও হয়ত-বা আসলে দাক্ষিণাত্যের কর্ণাটক থেকেই আসা এবং এসেছিলেন হয়ত-বা সেন বংশের পূর্বপুরুষদের সঙ্গেই। বঙ্গের সেন রাজারা কর্ণাটক থেকে পঞ্চ ব্রাহ্মণ এনে যজ্ঞক্রিয়া সম্পন্ন করেন বলে কথিত আছে। পাল বংশের বৌদ্ধ রাজাদের শাসনের চার শতাধিক বছরে থাকা বঙ্গের ব্রাহ্মণদের শাস্ত্রজ্ঞান ঠিকঠাক আছে কিনা সে-বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন সেনরা। খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকে পাল রাজাদের পতনের পর আরেক হিন্দু রাজা আদিসুর কনৌজ [আদি সংস্কৃত নাম কান্যকুব্জ, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের অন্তর্গত] থেকে পাঁচজন ব্রাহ্মণ বঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন বলেও আরেক কাহিনী প্রচলিত আছে বটে তবে, লোককাহিনী থেকে উতরে ইতিহাসের স্বীকৃতি পায়নি সেটাও।

কলকাতার অতীতকালের চিত্র। ১৭৮৮ সাল। আলোকচিত্র ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সৌজন্যে।

এই সেন রাজারাও তো এসেছিলেন ওই দাক্ষিণাত্যের কর্ণাটক থেকেই!

ঠিক তাই। তারা ছিলেন কর্ণটকী ব্রহ্মক্ষত্রিয় : জাতে ব্রাহ্মণ,  কর্মে আদতে ক্ষত্রিয় [যুদ্ধ ও রাজ্য পরিচালনা যাদের কাজ]। তাদের পূর্বপুরুষ সামন্ত সেন তার একপাল সৈন্য নিয়ে পশ্চিম-চালুক্য সাম্রাজ্যের যুবরাজ (তখনও রাজা হয়ে সিংহাসনে ওঠেননি তিনি) ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে পাল আমলের বাংলা আক্রমণে আসেন খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকের প্রথমার্ধে। ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য দাক্ষিণাত্যে ফিরে গিয়ে পরে ভাই দ্বিতীয় সোমেশ্বরকে হটিয়ে পশ্চিম-চালুক্য সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। সামন্ত সেন থেকে যান এই রাঢ়বঙ্গেই, ধীরে ধীরে এখানেই নিজ রাজত্ব কায়েম করেন। ফিরে না গেলেও কর্ণাটক ও পশ্চিম-চালুক্য রাজবংশের সঙ্গে সেনদের সম্পর্ক চুকেবুকে যায়নি একেবারে। বরং, মাখামাখি ছিল ভালোই। বঙ্গের রাজা বিজয় সেন ছিলেন ওই সামন্ত সেনের পৌত্র। বিজয় সেনের পুত্র রাজা বল্লাল সেনের স্ত্রী রামদেবী ছিলেন দাক্ষিণাত্যের পশ্চিম-চালুক্য বংশেরই রাজকন্যা। তারই গর্ভজাত পুত্র হলেন রাজা লক্ষণ সেন, যিনি তুর্কি-আফগান সেনাপতি ইখতিয়ারিউদ্দিন মোহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজির অষ্টাদশ অশ্বারোহীর (খলজি নিজে ও তার ১৭ জন অনুচর মিলে ১৮ জন) ভয়ে খিড়কি দিয়ে তখনকার বঙ্গের রাজধানী নদীয়া থেকে বিক্রমপুরে (এখনকার বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলাধীনে) পালিয়ে আসেন বলে কথিত আছে। 

তবে, বঙ্গীয় পণ্ডিতের ‘দায়ভাগ’ মতবাদ বাঙ্গাল মুলুকের সীমানা ছাড়িয়ে আর এগুতে পারেনি ভারতবর্ষে, প্রতিষ্ঠা পায় শুধু বাঙালিদের মধ্যে। দাক্ষিণাতী-কর্ণাটকী পণ্ডিতের ‘মিতক্ষরা’ মতবাদও ঠাঁই পায়নি বঙ্গে। তবে, সেটা ভারতবর্ষের অন্য সব অঞ্চলে ছড়িয়ে গিয়ে বেনারসি, বোম্বাই, মিথিলা, পাঞ্জাবি, মাদ্রাজি ইত্যাদি সব উপভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। এভাবে মিতাক্ষরা হিন্দু শাস্ত্রীয় আইনই প্রচলিত হয়ে পড়ে ভারতবর্ষের বাকি সব মুলুকে। দায়ভাগ হিন্দু শাস্ত্রীয় আইন রইল পড়ে শুধু বঙ্গে। দায়ভাগকে তাই বঙ্গীয় মতবাদও বলে।

আচ্ছা। তাহলে খ্রিষ্টীয় একাদশ থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে গোটা ভারতবর্ষে হিন্দু আইন ভাগ হয়ে যায় মিতাক্ষরা আর দায়ভাগে!

তা বটে। তবে, বঙ্গীয় পণ্ডিতের ‘দায়ভাগ’ মতবাদ বাঙ্গাল মুলুকের সীমানা ছাড়িয়ে আর এগুতে পারেনি ভারতবর্ষে, প্রতিষ্ঠা পায় শুধু বাঙালিদের মধ্যে। দাক্ষিণাতী-কর্ণাটকী পণ্ডিতের ‘মিতক্ষরা’ মতবাদও ঠাঁই পায়নি বঙ্গে। তবে, সেটা ভারতবর্ষের অন্য সব অঞ্চলে ছড়িয়ে গিয়ে বেনারসি, বোম্বাই, মিথিলা, পাঞ্জাবি, মাদ্রাজি ইত্যাদি সব উপভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। এভাবে মিতাক্ষরা হিন্দু শাস্ত্রীয় আইনই প্রচলিত হয়ে পড়ে ভারতবর্ষের বাকি সব মুলুকে। দায়ভাগ হিন্দু শাস্ত্রীয় আইন রইল পড়ে শুধু বঙ্গে। দায়ভাগকে তাই বঙ্গীয় মতবাদও বলে।

বাংলা তাহলে কোণঠাসা চিরকালই! সম্পত্তির উত্তরাধিকারে বিধবা স্ত্রীর ভাগবখরার কথা কী আছে কোন মতবাদের কোন হিন্দু শাস্ত্রীয় আইনে?   

সে-কথা হবে পরবর্তী পর্বে।

(চলবে)

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, আইনগ্রন্থকার; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ ও দুদকের সাবেক মহাপরিচালক।
ইমেইল: moyeedislam@yahoo.com

মঈদুল ইসলাম। প্রতিকৃতি অঙ্কন: সব্যসাচী মজুমদার
ad

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত