সকাল সন্ধ্যা: ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের কদিন পরই সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে আপনারা প্রথম প্রতিবাদ সমাবেশ করলেন। এরপর চট্টগ্রাম, ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে আপনারা সমাবেশ-মহাসমাবেশ করেছেন। এর মধ্যেই গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট মিলে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট আত্মপ্রকাশ করল। এই দুই সংগঠন মিলে ‘সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ গঠনের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে চাই।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ৮ আগস্ট সম্মিলিত সনাতনী সচেতন সমাজ নামে এবং ৯ আগস্টে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামে চট্টগ্রামে দুটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ৯ আগস্টের প্রোগ্রামটি তৎকালীন প্রশাসনের ভঙ্গুর অবস্থায় তাদের রিকোয়েস্টের কারণে স্থগিত ছিল। ১০ তারিখ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নামে সমাবেশটি হয়। সে স্বতস্ফূর্ত সমাবেশে প্রায় দেড় লক্ষাধিক লোক অংশগ্রহণ করে। জেনে অভিভূত হবেন যে, প্রায় ৬,৮৬২ টাকা খরচ হয়েছে সেই আয়োজনে। সেখানে কেউ বক্তব্য রাখেনি। সবাই স্লোগান দিয়েছিল। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল এবং সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছিল যে, ৫ আগস্টের পরে বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর যে হামলা নির্যাতনগুলো শুরু হয়েছিল, মঠ-মন্দিরে যে হামলা হচ্ছিল সেগুলো প্রতিরোধ করার জন্য হিন্দুদের হৃদয়ের স্বতস্ফূর্ত আবেদন থেকেই সে সমাবেশটি হয়েছিল। এবং তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে ১৩ তারিখ এবং জামালখানে যে সমাবেশ— প্রবল বৃষ্টির মধ্যে কোনও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও আমার মনে হয় না মানুষ এভাবে ধৈর্য ধরবে— চার ঘণ্টা বৃষ্টির মধ্যে প্রায় হাঁটুজলে, জামলাখানে প্রায় ৫০-৬০ হাজার লোক অংশগ্রহণ করেছে এবং প্রথমবারের মতো সমস্ত সাধু-সন্তুরা সেখানে অংশগ্রহণ করেছে।
সকাল সন্ধ্যা: এই যে সনাতন জাগরণ মঞ্চ এবং সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট— এই সংগঠন দুটি কি আগে থেকেই ছিল নাকি এগুলো সম্প্রতি গঠন করা হয়েছে? আর কোন কোন সংগঠন সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের অন্তর্ভূক্ত?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: অনেক আগে থেকে কিছু কিছু সংগঠন ছিল, আর সম্মিলিত সনাতনী সমাজ, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ এগুলো আগে থেকেই ছিল। কিন্তু বড় পরিসরে তাদের কোনও ভূমিকা ছিল না। ৫ আগস্টের পর অনেকগুলো সংগঠন, যেগুলো আমাদের ‘মাদার সংগঠন’ বলে পরিচিত— ‘ঐক্য পরিষদ’, ‘পূজা পরিষদ’, অন্যান্য সংগঠনগুলো যেমন— ‘জন্মাষ্টমী পরিষদ’, এগুলোর হিন্দু নেতারা যেহেতু ভয়ে বা বাস্তবিক প্রেক্ষাপটের কারণে অথবা বিভিন্ন কারণে তারা সামনে আসতে সাহস পায়নি সেজন্য যারা যুবক এবং যারা কিশোর-ছাত্র তারা স্বতস্ফূর্তভাবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অংশগ্রহণ করে। এরকম বিভিন্ন বহুধা বিভক্ত সংগঠনগুলো বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করছিল, এগুলোকে পরে সমন্বিত করে তখন দুটো প্ল্যাটফর্ম হয়। একটা ‘সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট’, যেটা বৃহত্তর ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা অঞ্চল নিয়ে আর প্রায় ৩২টা জেলা নিয়ে ‘হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ ও অন্যান্য সংগঠন মিলে ‘সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ হয়। যেহেতু আমাদের উদ্দেশ্য এক, দাবি এক, তাই আমরা যত বিভক্ত থাকব ততই নেতৃত্বের দূরত্ব থাকবে, দাবি আদায় আমাদের পক্ষে অনেক দূরূহ হবে, ঐক্য ছাড়া কখনও সাফল্যের দুয়ার খোলা যায় না— এজন্য ১৭ নভেম্বর সবাই মিলে ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ হিসেবে আমরা আত্মপ্রকাশ করি।
সকাল সন্ধ্যা: আপনি তো এই ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’-এর কেন্দ্রীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: হ্যাঁ।
সকাল সন্ধ্যা: আমরা এতদিন দেখেছি দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হলে, বড় ধরনের কোনও ঘটনা ঘটলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করা অথবা দাবি-দাওয়া আদায়ে আমরা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান এক্য পরিষদ এবং কখনও কখনও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট-কে মাঠে দেখতাম। এখন তাদেরকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে আমরা দেখলাম যে ৫ আগস্টের পর আপনারা যে আন্দোলন করছেন সেখানে আপনাদের বড় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। আপনারা বড় বড় সমাবেশ-মহাসমাবেশ করছেন। তাদের এই পিছনে হটে যাওয়ার কারণটা কি? অথবা আপনারা কি তাদের কোনও বিকল্প মোর্চা বা জোট কি না?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: না। আমরা সমগ্র সনাতনী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এগুনোর প্রয়াসে আমরা এগিয়ে এসেছি। মূলত, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান এক্য পরিষদ, পূজা পরিষদসহ…একটা সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে, একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী যারা প্রতিনিধিত্ব করেন তারা কোনও না কোনওভাবে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই তাদের অধিকার আদায়, তার আবেদনগুলো পৌঁছাতে হয় এবং তা পরিপূরণের জন্য রোল প্লে করতে হয়। কিন্তু বিগত সময়ে আমরা দেখেছি কিছু সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিকভাবেও তাদের দৃশ্যমান দেখা গেছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক ট্যাগও লেগে গিয়েছে। সবাই না, খুব সীমিত সংখ্যক। সামগ্রিকভাবে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এবং একটা যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের নিয়ে একটা জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য— এসব কারণে নিজেদের সুরক্ষার জন্য অনেকে সামনে আসার সাহস পোষণ করেননি।
যেহেতু, আমরা সনাতনী সাধু-সন্তুরা এই ধর্ম ও দর্শনের অভিভাবক, গুরুরা হচ্ছে মার্গ প্রদর্শক— যেহেতু এই শূন্যস্থানটা যখন আমাদের জনগোষ্ঠীর আতঙ্কের কারণ হয়েছে, কেউ রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে এবং সেই অবস্থা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে— এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সমস্ত সন্তু সমাজ এগিয়ে এসেছে, যাতে একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ আন্দোলনের দ্বারা আমাদের মানবিক এবং মৌলিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করতে পারি এবং রাষ্ট্রকে, দেশকে একটা স্থিতিশীল দেশ বিনির্মাণে সহযোগ দিতে পারি সেজন্যই মূলত আমরা এই জোট গঠন করেছি।
সকাল সন্ধ্যা: আমরা সবসময় দেখেছি,বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও সংকট নিয়ে ভারত সরকার সরব থাকে। কিন্তু এবার সনাতন জাগরণ জোটের আন্দোলনকে ঘিরে অনেকে অভিযোগ তুলছেন যে এই আন্দোলনে ভারতের ইন্ধন রয়েছে। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: ৫ আগস্টের যে অভ্যুত্থান এটি ছিল ছাত্র-জনতার এবং সমস্ত শ্রেণি-পেশার মানুষের, সমস্ত রাজনৈতিক শ্রেণির সহজাত, একটি শৃঙ্খলায়িত সমাজব্যবস্থা থেকে মুক্তির আহ্বান থেকে। স্বতস্ফূর্তভাবে মানুষের মাঝে একটি পরিবর্তনের প্রয়াস থেকে এই অভ্যুত্থান সাধিত হয়েছে। সেই সময়ে এই অভ্যুত্থানকে পশ্চিমবঙ্গের একটি বড় অংশের মানুষেরা সমর্থন জানিয়েছে। আমেরিকা সমর্থন যুগিয়েছে। অনেকগুলো দেশ একে সমর্থন দিয়েছে। আমার দেশের মানুষের আবেদনকে, দেশের মানুষের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষাকে কেউ সমর্থন দিয়েছে বলে আমি কি প্রশ্ন করব যে সেই আন্দোলনও বাইরের মানুষের ইন্ধনে হয়েছে? দেখুন, একজন মুসলমানের জন্য যেমন সারা বিশ্বের মুসলমানরা সংবেদনশীল, তেমনি হিন্দু জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও সেটা হতে পারে। কিন্তু দুভার্গ্য হচ্ছে, আমাদের হিন্দুদের কোনও আন্দোলন, হিন্দুদের কোনও অধিকার নিয়ে কথা বললে; একজন হিন্দুর জন্য যদি একজন হিন্দু কথা বলে তখন সেটাকে যদি রাজনৈতিক কিংবা ভৌগলিকভাবে সেটাকে নিরূপণ করার চেষ্টা করা হয়, সেটা সত্যকে ঢেকে রাখার এবং একটা রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
সকাল সন্ধ্যা: চট্টগ্রামের পর আপনারা দ্বিতীয় বিভাগীয় মহাসমাবেশ করে এলেন রংপুরে। কেমন অভিজ্ঞতা হলো? মহাসমাবেশ করতে গিয়ে আপনারা কি কোনও ধরনের বাধা বা ভয়-ভীতির সম্মুখীন হয়েছেন? ভয় দেখানো হয়েছে? আপনারা কি ভয় পাচ্ছেন?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে বলব, আমাদের সমাবেশটি হওয়ার কথা ছিল রংপুর জেলা স্কুল মাঠে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, প্রচারও চালানো হয়েছে সেভাবে। ১৫ তারিখে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। পরে আমরা সেটাকে ২২ তারিখ করি। সেটাও ডিসিকে অবহিত করা হয়, প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। এবং তারা আপত্তি করেনি। সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে, ২০ তারিখ রাত্রে যখন আমি রংপুরে পৌঁছাই, ২১ তারিখ সকালবেলা থেকেই প্রেক্ষাপটটা পাল্টে যেতে থাকে। প্রশাসন থেকে আমাদেরকে ডেকে জানায় যে আমাদের জেলা স্কুল মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। এরপর অনেক দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা আবেদন-নিবেদনের পর তারা মাহীগঞ্জ কলেজ মাঠ নির্ধারণ করে। এটার পরিসরটা সীমিত। আমাদের যেটা ইচ্ছা ছিল, আমাদের সমাবেশের কারণে যাতে কোনও জনদুর্ভোগ না হয়, অথবা রাস্তা-ঘাট অবরুদ্ধ হয়, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হয় ব্যাঘাত ঘটে এ ধরনের কোনও আন্দোলনে আমরা বিশ্বাসী নই। আপনারা দেখবেন ১০ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের যত আন্দোলন হয়েছে সেখানে কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি। কোথাও কারুর ওপর কোনও আক্রমণ হয়নি। বরঞ্চ প্রতিটি জায়গায় আমরা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি। প্রতিটি জায়গায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এখানেও রাস্তা-ঘাটে বিভিন্ন জায়গায় গাড়িগুলোকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। আমরা শুধু রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং জনজীবনে যাতে কোনও নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেজন্যই রাষ্ট্রের অবস্থানকে স্বীকার করে নিয়ে মাহীগঞ্জ মাঠেই সমাবেশ করি। কিন্তু তারপরও সেখানে দেখা যায় প্রচণ্ড বাধা, কাউনিয়াতে প্রায় ৩০ জনের মতো আহত হয়েছে, বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে সেসব এসেছে। তিনজন অনেক বেশি আহত হয়েছে এবং এখনও দুজন রংপুর মেডিকেলে ভর্তি আছে। এই পরিস্থিতিগুলো আমরা ফেইস করেছি। দেখা গিয়েছে আমাদেরকে বিভিন্ন এজেন্সিগত, পুলিশি, গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে। এসব তো ছিলই।
সকাল সন্ধ্যা: আমরা দেখতে পাচ্ছি, সনাতনী জাগরণ জোটের সমাবেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক নারী, বিশেষত নারীদের লক্ষ্যণীয় উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে এবং শিশু ও বয়স্কসহ নানা বয়সী মানুষের অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। নারীসহ নানা বয়সী মানুষের এই অংশগ্রহণের কোনও তাৎপর্য রয়েছে কি? আপনারা কিভাবে দেখছেন? এতো মানুষের অংশগ্রহণের কারণাট কি? আপনি কিছু বলবেন এ বিষয়ে?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: এর কারণটা হচ্ছে, প্রথমত দীর্ঘদিন ধরে আমাদের নেতৃস্থানীয় যারা লিডার, যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের একটা বড় অংশ রাজনীতি সংশ্লিষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তারা সেক্যুলার ছিল। এই সেক্যুলার ভাবনাটা ভালো, কিন্তু তারা সেটা শুধুমাত্র দৃশ্যপটে মানুষকে দেখিয়ে নিজের অবস্থান সংহত করার জন্যই এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যবহার করেছে। হিন্দু বা সনাতনী জনগোষ্ঠী যখন আক্রান্ত হয়েছে, আন্দোলন হয়েছে, যখনই তুঙ্গে গিয়েছে একটা দরকষাকষির মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে তারা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে নিয়েছে এবং জনগোষ্ঠীর কথা ভুলে গিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে এই ধরনের নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থা ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। যখন আধ্যাত্মিক গুরু বা সন্তুরা সামনে এসেছেন এবং তাঁদের প্রাণের কথাগুলো নির্ভয়ে নির্বিবাদে বলছেন এবং তাঁরা নিজের ঝুঁকিকে উপেক্ষা করছেন; আমাদের সাধু-সন্ন্যাসীরা যখন সন্ন্যাস গ্রহণ করেন তখনই নিজের মৃত্যুর পর যে শ্রাদ্ধ হয় সেটা করেই তারা সন্ন্যাসী হন, যেটাকে ‘সপিণ্ডণ’ বিধি বলে, তাঁদের কোনও ভৌতিক আকাঙ্ক্ষা থাকে না। তাঁরা নিজস্ব আকাঙ্ক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষাকেই প্রাধান্য প্রদান করেন। যার ফলশ্রুতিতে তাঁরা যখন সামনে এসেছেন, নেতৃত্বে এসেছেন তখন মানুষের ট্রাস্ট, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অনেক দৃঢ় হয়েছে। ফলশ্রুতিতে সমস্ত শ্রেণি-পেশার মানুষ এগিয়ে এসেছেন। এমনকি ১৩ দিনের সদ্যজাত শিশু নিয়েও মা এসেছেন, তিনি বলেছেন আমার ছেলে আমার নাগরিক অধিকার নিয়ে যেন সচেতন হয়, সেই শিক্ষা লাভ করে, সেজন্য আমি ওকে নিয়ে এসেছি।
সকাল সন্ধ্যা: আপনি বলছিলেন পূর্ববর্তী নেতৃত্বের প্রতি সাধারণ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানদের এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। এদিকে, অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগস্ট অভ্যুত্থানের পর দেশে হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের ওপর যতটুকুই হামলা বা নির্যাতন হয়েছে তার কারণ এই সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে সম্পর্কিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্য সম্পর্কে আপনার বক্তব্য শুনতে চাই।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: তিনি প্রথম যখন প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে আসেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি আমাদের বাংলাদেশের গর্ব এবং তিনি একই আধারে বিশ্বনাগরিক বলা যায়, তো এইরকম একজন মহান ব্যক্তিত্ব তিনি (দেশে) এসে প্রথমেই স্বীকার করে নিয়েছেন (এয়ারপোর্টে) যে, বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ হচ্ছে, এটা বন্ধ হওয়া উচিৎ। কিন্তু এখন যে বক্তব্য সেটা তাঁর প্রথম বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণটা হচ্ছে, বাংলাদেশের একটা প্রথাগত রাষ্ট্রীয় আচারই বলব আমি— তারা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর যেকোনও বিষয়কে অস্বীকার করা এবং সেটাকে একটা রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার প্রচেষ্টা করে। এটাতে আমলাতন্ত্রের প্রভাব আছে, প্রশাসনের কিছু লোক আছে, রাজনৈতিক কিছু উদ্দেশ্য আছে, এগুলোকে একীভূত করলে এই বক্তব্যের সারবত্তা প্রকাশ পায়। তো এটাকে আমরা সেই গতানুগতিক শাসনব্যবস্থার প্রতীক হিসেবেই দেখছি। এটাকে ভিন্ন কিছু দেখছি না।
সকাল সন্ধ্যা: আপনারা সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের পক্ষ থেকে যে ৮ দফা দাবি ঘোষণা করেছেন তার অন্যতম ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন’ করা এবং ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করা। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তখন তিনি বলেছেন যে, আলাদাভাবে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন বা মন্ত্রণালয় গঠনের কোনও প্রয়োজন নেই; বরং কোনও হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে বা কোনও অন্যায়-অবিচার ঘটলে প্রচলিত আইনেই তার বিচার করা সম্ভব। এ বিষয়ে আপনাদের যুক্তিগুলো কি?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: আমি প্রথমত বলব যদি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের কথা বলেন, এটাকে বাংলাদেশের নাগরিকদের সামষ্টিক রূপ হিসেবে দেখছি, যারা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আছেন। সেক্ষেত্রে তো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরাও আছেন, তাহলে তাদের জন্য সুপ্রিম কোর্ট আলাদা কোটা সংরক্ষণ করছেন কেন? অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী হিসেবে। যখন কোনও প্রাণী বিলুপ্ত প্রায় হয় তখন তার জন্য অভয়ারণ্যের প্রয়োজন হয়। যখন দেশের স্বাধীনতা হয়েছে, তখনকার ২৩ শতাংশ থেকে এখন সরকার ঘোষিত প্রক্রিয়ায় ৭.৮ শতাংশ (হিন্দু জনগোষ্ঠী), তাহলে আমরা তো বিলুপ্ত হতে যাচ্ছি। সেজন্য আমাদের সুরক্ষা প্রয়োজন রয়েছে। তদুপরি যে কথাটি বলব, বাংলাদেশের একটা বৃহৎ দলের যিনি অভিভাবক, যাকে ভবিষ্যতের একজন কাণ্ডারি হিসেবে সবাই দেখছে, বিএনপির যিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তিনি থেকে শুরু করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস পর্যন্ত যতজন বিশ্বখ্যাত লিডার বাংলাদেশে সমাদৃত লিডার যারা আছেন তাদের বিচারের কাজই ১০-১৫ বছরেও শেষ হয় নাই! সেখানে একজন সংখ্যালঘু বা সাধারণ নির্যাতিত অবহেলিত জনগোষ্ঠীর নাগরিক হিসেবে আমরা কিভাবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাহিদার সঙ্গে তাদের বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিচারে বিচার পাব বলে আমরা আশা করতে পারি?
সকাল সন্ধ্যা: এ কারণেই কি আপনারা সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে করার দাবি জানিয়েছেন?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: নিশ্চয়ই। একারণেই আমরা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল চাইছি এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন চাইছি।
সকাল সন্ধ্যা: আচ্ছা,বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা বিভিন্ন সময়েই আমরা হতে দেখেছি, এইসব হামলার জন্য কারা দায়ী বলে আপনারা মনে করেন? কোন কোন গোষ্ঠীগুলোর এখানে ইন্ধন রয়েছে বা কারা হামলা করছে, নির্যাতন করছে?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী অসাম্প্রদায়িক, সহাবস্থানে বিশ্বাসী এবং বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ হচ্ছে রাজনীতি সচেতন। কিন্তু সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের দুর্নীতি, দুবৃত্তায়ন এবং ক্ষমতালিপ্সু দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ক্ষমতায় আরোহনের পথ হিসেবে রাজনীতিকে ব্যবহার করা। রাজনীতি শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে উত্তম নীতি। তো সেই উত্তম নীতির চর্চা না করে শুধু ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একটা ক্ষুদ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যারা ‘সংখ্যালঘু’ বাস্তবিকই, তাদেরকে পুষ্টি যুগিয়েছে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা প্রতিটি সরকার। এবং তাদের সঙ্গে প্রশাসনের কিছু, এবং তাদের সঙ্গে সরকারে যারা থাকে সুবিধাভোগী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে সুবিধা আদায় করতে চায়, সেই শ্রেণিগুলো মিলেমিশেই এই ৫৩ বছর ধরে একই নির্যাতনের ধারা বয়ে বেড়াচ্ছি আমরা। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার একটিও ঘটনার দৃশ্যমান কোনও বিচার হয়নি, প্রতিকার পাইনি। এ থেকে বোঝা যায় একটা অংশ এটা করছে কিন্তু সবাই দেখেও নীরব ভূমিকা পালন করছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক অভিসন্ধির কারণে।
সকাল সন্ধ্যা: সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের সমাবেশগুলোতে, আপনাদের নানা কর্মসূচিতে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানটি এখন বেশ উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমরা দেখেছি যে, ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি আরএসএস-এর কারণে ‘জয় শ্রীরাম’ একটি বিতর্কিত শ্লোগানে পরিণত হয়েছে। এখন আপনারা এই স্লোগান দেওয়ার কারণ কি? এটা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও দেখা যাচ্ছে। আপনার বক্তব্য কী?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: শাক্ত, শৈব, সৌর, গাণপত্য, বৈষ্ণব— পঞ্চমতের অনুগামী রয়েছে বঙ্গভূমিতে। আমাদের প্রতিটি সমাবেশে ‘হরে কৃষ্ণ-হরে কৃষ্ণ’, ‘জয় শ্রীরাম’, ‘হর হর মহাদেব’, ‘জয় মা ভবানী’— প্রতিটি স্লোগানই উচ্চারিত হয়, আমি নিজে এই চারটি স্লোগান একসাথেই দেই। ‘জয় শ্রীরাম’ হচ্ছে আমাদের পরমেশ্বর ভগবান বিষ্ণুর অবতার এবং তিনি আমাদের আরাধ্য প্রভূ। তো এই পবিত্র নামে সমস্ত ভক্তচিত্তে শক্তি এবং তার মানবিক মূল্যবোধগুলো বিকশিত হয়। সেজন্য আমরা এটি উচ্চারণ করি।
আপনি একটা জিনিস দেখবেন, এই পবিত্র ধ্বনি হয়ত বিজেপি-আরএসএস ব্যবহার করছে; বাংলাদেশে একাত্তর সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ হয় সেসময় পাকিস্তানি এবং অনেক রাজাকাররা আল্লাহর পবিত্র নামকে ব্যবহার করে এইরকম বর্বরতা করেছে। তাই বলে কি আমরা এটাকে রাজাকারের ধ্বনি বলতে পারি? এটাকে কি আমরা পাকিস্তানি ধ্বনি বলতে পারি? মূলত, রাজনৈতিক রঙ দিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধকে বিকৃত করার জন্যই স্রষ্টার পবিত্র নামসমূহকে এইভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যে এটা বিজেপি-আরএসএস এর স্লোগান বা আরএসএস-এর অভিসন্ধিজাত। এইরকম ব্যাখ্যা দিয়ে মূলত এটাকে বিতর্কিত করার জন্য, মুভমেন্টটাকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার জন্য এটা করছে।
সকাল সন্ধ্যা: আমরা এই আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই দেখলাম সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে আপনাকে। আপনিও এরপর বলেছেন, আপনি ইসকনকে প্রতিনিধিত্ব করেন না। ইসকনের সঙ্গে আপনার এই টানাপোড়েন কি নিয়ে সৃষ্টি হলো? আপনি বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করবেন কি?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: ইসকন একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এবং ধর্মীয় সংগঠন। এটা বাংলাদেশের সোসাইটি অ্যাক্টে নিবন্ধিত এবং বাংলাদেশের প্রথাগত আইন দ্বারা এবং বিশ্বের ১৫৪টি দেশে স্ব স্ব দেশের আইন দ্বারা নিবন্ধিত হয়ে মানবিক এবং আত্মিক মূল্যবোধকে বিকাশ করা এবং শ্রী চৈতন্যদেবের অসাম্প্রদায়িক নীতি প্রেমের নীতিকে বহন করা, গীতা এবং ভাগবতের আদর্শ প্রচার করার কাজ করছে। আমি সেই হিসেবে একজন ইসকন ভক্ত। আমি তার প্রশাসনিক পরিকাঠামোর প্রতিনিধিত্ব করি না। ইসকন হচ্ছে সনাতন ধর্মেরই একটি অংশ, গৌড়ীয় ভাবাদর্শকে লালন করে।
সকাল সন্ধ্যা: এই প্রশ্নটিই আবার করছি, অনেকে বলছেন যে ইসকন কি একটা আলাদা ধর্ম? নাকি এটা সনাতন হিন্দু ধর্মেরই একটি আলাদা মত বা পথ?এটি কি এনজিও? নাকি ধর্মীয় সংগঠন?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: আমি তো আগেই বলেছি, এটা হচ্ছে সোসাইটি অ্যাক্টে নিবন্ধিত একটা ধর্মীয় সংগঠন এবং এটি দাতব্য সংগঠন। যেটা বলেছি যে, শ্রী চৈতন্যদেবের যে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সংস্কৃতি, এই বৈষ্ণব সংস্কৃতিরই প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হচ্ছে ইসকন। সুতরাং সেই সূত্রে একজন ইসকন ভক্ত মূলত একজন সনাতনী। আমি সেই সনাতনী হিসেবে, সনাতন ধর্মের অধিকার নিয়ে কার্যক্রম করছি। সেজন্য আমি (ইসকনের) প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি এবং উনারাও আমাকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
সকাল সন্ধ্যা: আরেকটি কথা অনেক শোনা যায় যে, ইসকন অনেক বিত্তশালী একটা সংগঠন। ইসকন যে পরিমাণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তাতে বিপুল অর্থ প্রয়োজন। ইসকনের এই বিপুল অর্থের উৎস কি?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: সেই বিপুল অর্থের উৎস হচ্ছে—আপনি এবং আমি। কারণ ইসকন বা গৌড়ীয় বৈষ্ণব সংস্কৃতি শেখায় যে আমরা সকলেই স্রষ্টার সৃষ্টি এবং একটি বিশ্বজনীন পরিবারের শিক্ষা দেয়— যে সারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষ ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’— এই নীতিতে সারা পৃথিবীর সব মানুষ আমরা একটা পরিবার। আমরা যদি নিজেদের আদমের সন্তান বলি, বা মনুর সন্তান বলি, সেই হিসেবে কি আমরা একটাই পরিবার নই? সৌভ্রাতৃত্বের কথা শেখায় যার ফলশ্রুতিতে সমস্ত জনগণ এতে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের প্রদত্ত দানেই ইসকনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। প্রতিটি দেশের কর্মকাণ্ড সেই সেই দেশের নাগরিকদের দানেই পরিচালিত হয়। আমাদের যে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো, এখানে কোনও বাইরের অর্থ লেনদেনের কোনও সুযোগই নেই। ইসকন এনজিও নয় এবং এনজিও আইনে নিবন্ধিতও নয়।
সকাল সন্ধ্যা: আপনারা বলছেন এখন অধিকার আদায়ের দাবিতে দেশের সব সাধু-সন্ন্যাসীরা একত্রিত হয়েছেন। যারা সংসারধর্ম ত্যাগ করে স্রষ্টার সাধনায় জীবন উৎসর্গ করেছেন। তারা এখন এই জাগতিক সমস্যার যে সংকট সেই সংকটের জন্য আপনারা পথে নামলেন কেন?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: আমি আপনাদেরকে বলব যে, দেখুন ১৯৭১ সালের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। সেখানে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন। খুলনায় (মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা) জাদুঘরের মাধ্যমে যে ৪০ খণ্ড বই প্রকাশিত হয়েছে এবং আরও ২৪ খণ্ডে যেসব তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে দুই-তৃতীয়াংশ শহীদ হয়েছে হিন্দুরা। এবং ১ কোটি শরণার্থীর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই হিন্দুরা, যেটা জাতিসংঘ, অক্সফামসহ সবাই বলছে। কিন্তু এর কোনও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হয়নি! বাংলাদেশে সেই থেকে আজ পর্যন্ত যত নির্যাতন হয়েছে কোনওটাই কোনও সরকার স্বীকার করেনি। এই ধারা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। আমাদের যারা হিন্দু নেতৃত্ব, এতদিন নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে তারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক চাপে অথবা বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের সুবিধা গ্রহণের জন্য এই সত্যগুলো উপস্থাপন করেনি। এই মানবিক স্থিতি উত্তরণের জন্য এবং সত্যকে প্রকাশ করার জন্য এবং রাষ্ট্রীয় ও জনজীবনে সনাতনীদের অধিকারকে সমুন্নত করার জন্য, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অবদানকে সুনিশ্চিত করার জন্য এবং আমাদের এই মুভমেন্টকে যাতে কেউ রাজনৈতিক রঙ দিতে না পারে, এটাকে কেউ ভিন্ন খাতে নিজেদের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্যই সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীরা যাদের কোনও ব্যাক্তিগত বা রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা নেই তারা এই আন্দোলনে প্রতিনিধিত্ব করছে এবং এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিচ্ছে।
সকাল সন্ধ্যা: আপনি যেমন একজন ইসকন ভক্ত হয়ে এখন আন্দোলনের মাঠে আছেন, আরও অনেকেই আছেন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে আপনারা যুক্ত হয়ে গেছেন। পৃথিবীর আর কোনও দেশে কি ইসকন ভক্তরা এরকম রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: এটাকে রাজনৈতিক আন্দোলন বলা যাবে না। কারণ আমরা কোনও পদ-পদবী চাইছি না, ভোটের রাজনীতিতে নামছি না। আমরা শুধু আমাদের মৌলিক দাবি আর আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলছি। এটাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উপস্থাপন অনুচিত হবে। আর বিশ্বে ইসকন কোথাও-ই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করে না।
সকাল সন্ধ্যা: এবার কিছু অভিযোগের কথা বলি। ইসকন সম্পর্কে প্রায়ই একটা অভিযোগ তুলতে দেখা যায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নজন অভিযোগ তুলছে যে— ইসকন কি সিআইএ-এর তৈরি? তুলসী গ্যাবার্ড যিনি সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান হলেন তার সঙ্গে ইসকনের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি? ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যিনি গোয়েন্দাদের প্রধান হলেন, এই কারণে কি বাংলাদেশে আপনাদের আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে? এরকম মনে করছেন আপনারা? বা এ অভিযোগ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: শুধু ইসকন নয়, সনাতনী মাত্রই দেশমাতৃকাকে ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’ নিজের মা এবং জন্মভূমিকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করে থাকি। প্রতিদিন ভোরে আমরা প্রণাম করি জন্মভূমিকে, ঘুম থেকে উঠেই— প্রথম প্রণামটা, স্রষ্টার পূর্বেই আমরা জন্মভূমিকে করি। আমি একজন বাংলাদেশি হিসেবে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখব, একজন তুলসী গ্যাবার্ড সে আমেরিকান হিসেবে আমেরিকার স্বার্থ দেখবেন। একজন রাশিয়ান ভক্ত রাশিয়ার স্বার্থ দেখবেন। আর যে কথাটি আপনি বলছেন, বাস্তবিক অর্থেই বিশ্বে যতগুলো সনাতনী জনগোষ্ঠী আছে, যতখানে ইসকনের ভক্তরা আছেন, সেখানে প্রতিটি দেশেই সেই সেই রাষ্ট্রের আইন এবং সেই দেশের প্রগতির প্রতি লক্ষ্য রেখেই সৌভ্রাতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি লালন করেই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। তাই আমেরিকায় তুলসী গ্যাবার্ডের ক্ষমতায়ন হওয়ায় তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার কোনও কারণ থাকে না। আর একটা কথা আমি না বললেই নয়, আপনারা বলছেন যে সিআইএ-এর সৃষ্টি! সিআইএ হচ্ছে আমেরিকার একটা এজেন্সি। আমেরিকা আর রাশিয়া হচ্ছে চরম বৈরি। ইসকনের কার্যক্রম এখন বিশ্বে সবেচেয়ে বেশি প্রচারিত হচ্ছে রাশিয়ায়। রাশিয়া কি তাহলে সিআইএ-কে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে? চায়নার সঙ্গেও আমেরিকার সাংঘর্ষিক নীতি আছে। চায়নাতেও ভালো প্রচার হচ্ছে। তাহলে চায়নাও কি জেনে শুনে সিআইএ-কে রিসিভ করছে? মূলত, ইসকন বিশ্বের প্রতিটি গ্লোবাল শক্তি, যতগুলো আছে, এমনকি প্রতিটি আরবীয় দেশগুলোতেও সমাদৃত তার মানবিক কর্মকাণ্ড এবং সৌভ্রাতৃপূর্ণ মূল্যবোধের কারণে।
সকাল সন্ধ্যা: আপনি আমেরিকা, চীন, রাশিয়ায় কার্যক্রমের কথা বললেন। কিন্তু আমরা একটা কথা প্রায়ই শুনি যে, ইসকন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষকে ধর্মান্তরিত করছে। এটা একটা অভিযোগ রয়েছে আপনাদের বিরুদ্ধে। আপনাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরকম প্রচার করা হয়, বিশেষত বাংলাদেশে ইসকনের বিরুদ্ধে নানা যায়গায় ভূমি দখলের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কেউ কেউ বলেছেন যে আপনারা ভূমি দখল করেন না কিন্তু কোনও মন্দির বা দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেলে আপনার সেসব পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেন, আবার কেউ বলছেন আপনারা সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করেন ঠিকই কিন্তু সেখানে এরপর একটি ইসকন মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করবেন কি? এই অভিযোগগুলো কেন ওঠে?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: প্রথম কথা হচ্ছে, ইসকন কোনও ধর্মান্তর করে না। সারা বিশ্বে কোথাও করে না। কারণ ধর্মান্তর মানে হচ্ছে, একটা ধর্মীয় মূল্যবোধ বা বিশ্বাসকে নষ্ট করে আরেকটি বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়া অথবা সেটি গ্রহণ করার জন্য প্ররোচিত করা। এই দুটি কাজ ইসকন গ্লোবালি কোথাও করে না। ইসকন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, সৌভ্রাতৃত্বের আদর্শ, অহিংসাকে লালন করে এবং বিশ্বপ্রেম শেখায়। এই আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করার কারণে কেউ যদি তার অনুসারী হয়; যেমন স্টিভ জবস, তিনি একজন বড় ধনী একজন বড় সফটওয়্যার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক, আপনি তার বক্তব্যে শুনবেন ইসকনের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, ইসকনের খাবার খেতে খেতে তিনি ইসকনের ভক্ত হয়ে গেছেন, যখন তার খাবার জুটত না। সারা বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষকে ইসকন বিনামূল্যে খাবার খাওয়ায়। এখন ইসকনের মানবিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হয়ে কেউ সেই কর্মকাণ্ড অনুসরণ করলে আপনি তাকে ধর্মান্তকরণ বলতে পারেন না।
সকাল সন্ধ্যা: অর্থাৎ আপনি বলছেন যে এখানে কোনও বলপ্রয়োগের অথবা কোনও কৌশলের ব্যাপার নেই।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: না, না। একেবারেই না। আরেকটা কথা বলছি যে, আপনি দেখেন যে বাংলাদেশেও এরকম কাউকে করা হয়েছে কি না? বা অন্য কোনও দেশে? তারা স্বতস্ফূর্ত অনুশীলন করছে ইসকনের অ্যাক্টিভিটিগুলো। এখন কেউ যদি স্বতস্ফূর্ত অনুশীলন করে সেটাকে আপনি যেমন ধর্মান্তকরণ বলতে পারেন না আবার বাধাও দিতে পারেন না। সেটা তার মৌলিক অধিকার।
সকাল সন্ধ্যা: আর মন্দির বা সম্পত্তির বিষয়টি?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: সম্পত্তির বিষয়টি আমি ক্ল্যারিফিকেশন দিচ্ছি। আমাদের বাংলাদেশে অধিকাংশ দেবোত্তর সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। এবং বাংলাদেশে ইসকনের নিজস্ব মন্দির দুয়েকটিও নেই। অধিকাংশ মন্দির হচ্ছে দেবোত্তর সম্পত্তি, দেবতার মন্দির। কৃষ্ণ মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, কালী মন্দির এইরকম। যেগুলো বেহাত হয়ে যাচ্ছে, স্থানীয় জনসাধারণ সেগুলো পুনরুদ্ধারও করতে পারছে না, পরিচালনাও করতে পারছে না। সেটার সেবাভার তারা ইসকনকে প্রদান করছে। আমাদের হিন্দু ল’ অনুযায়ী সেবায়েত হচ্ছে দেবতার প্রতিনিধি। দেবতার প্রতিনিধির কর্তব্য হচ্ছে দেবতার সম্পদ এবং তার সেবাসুশ্রুষাকে সুসংরক্ষণ করা। এখন যেখানে দেবতার যেসব সম্পদ বেহাত হয়ে গেছে আমরা যদি সেগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে যাই আপনি আমাদেরকে ভূমিদস্যু বলতে পারেন না। আপনি বাংলাদেশে একটাও নজির দেখাতে পারবেন না যেখানে ইসকন তার ডকুমেন্টারি দেবোত্তর সম্পত্তিবিহীন কারও সম্পত্তি দখল করেছে। এগুলো গুজব, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সকাল সন্ধ্যা: আপনারা তো এখন বড় ধরনের আন্দোলনের মধ্যে রয়েছেন। দাবি আদায়ে কোন কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে আপনারা আলোচনা করেছেন? জামায়াত, বিএনপি বা এরকম কোনও দলের সঙ্গে কি আপনাদের আলোচনা হয়েছে?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: আমরা এই ৮ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছি, এগুলো আমাদের মৌলিক দাবি। এটা পরিপূরণ করবে রাষ্ট্র। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কিছু (সংস্কার) কার্যক্রম শুরু করেছে। আবার কিছু কার্যক্রম আছে যেখানে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে, যেখানে আইন সংশোধনের প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে তো রাজনৈতিক দলগুলোর কোনও বিকল্প নেই। যার ফলশ্রুতিতে আমরা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ সমস্ত জনগোষ্ঠীর কাছেই আমরা যাচ্ছি। সবার কাছে আমাদের দাবিগুলোর যৌক্তিকতা উপস্থাপন করছি এবং তাদের শুভদৃষ্টি আমরা প্রত্যাশা করছি। আমরা যে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পরিপূরক হয়ে একসাথে একটা রাষ্ট্র বিনির্মাণের অংশীদার হতে চাই, সেই বার্তাটা আমরা পৌঁছে দিচ্ছি।
সকাল সন্ধ্যা: কারও সাথে কি কোনও সমঝোতা হয়েছে? বা আপনারা কেমন সাড়া পেলেন?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: পরিপূর্ণ না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা তাদের সহানুভূতিসুলভ মনোভাব দেখেছি এবং তারা আমাদের প্রতি সংবেদনশীল। এই দাবিগুলোর যৌক্তিকতা কিন্তু তারা স্বীকার করেছে।
সকাল সন্ধ্যা: এ মাসেরশুরুতেই দেশের বিশিষ্ট রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার চট্টগ্রামের পুন্ডরীক ধামে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে কেমন আলোচনা হলো? আপনার অভিজ্ঞতা কেমন হলো? এ বিষয়ে কিছু বলুন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: প্রথমেই বলে নিচ্ছি, এটা তো শুধু ইসকন মন্দির নয়, এটা হচ্ছে শ্রী চৈতন্যদেবের এবং তার চব্বিশ জন পার্ষদের লীলাস্থল এবং রাধারাণীর পিতা বৃষভাণু মহারাজ পুন্ডরীক বিদ্যানিধির জন্মস্থান। এটি ঐতিহাসিক তীর্থস্থান। যার ফলে সবার জন্যই এর দরজা উন্মুক্ত। সে হিসেবে, তিনি একজন আদর্শিক-প্রাবন্ধিক-দার্শনিক, কবি হিসেবে তিনি চান একটা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে। তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মেও বিষয়টা পরিষ্কার করেছেন। সম্প্রীতির বাংলাদেশ বিনির্মাণ তো কাউকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। সবাইকেই নিয়েই সেটা গড়তে হবে। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে আমরাও তো একটা অংশ। সেই জন্যই এই বার্তা নিয়েই তিনি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
সকাল সন্ধ্যা: সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট এখন সারা দেশে আরও বিভাগীয় মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা করছেন। নানারকম আন্দোলনের কর্মসূচি চলছে। এমন একটি আন্দোলন পরিচালনায় তো বিপুল অর্থ প্রয়োজন। কোন প্রক্রিয়ায় আপনারা এই অর্থ সংগ্রহ করছেন? আপনাদের অর্থের উৎস কি?
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: প্রথমত, সাধুদেরকে সন্ন্যাস গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করতে হয়। এজন্য আমরা ভিক্ষা করেই আমাদের সমস্ত দেবালয় প্রতিষ্ঠানগুলো চালাই। সে হিসাবে আমরা প্রতিটি সাধারণ জনগণের কাছে ভিক্ষা চাইছি। আপনারা দেখবেন রংপুরেও, বা এমন সব জায়গাতেই আমাদের লোকেরা ছোট ছোট বাক্স নিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছেন। সেখানে দেখবেন অনেক বৃদ্ধও হয়ত এক কেইস দুই কেইস করে জল নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের হয়ত শুধু স্টেজ এবং কিছু ব্যানার ফেস্টুন এগুলোর জন্য কিছু খরচ হয়। সেগুলো সাধু-সন্তুরা ভিক্ষা করেই ব্যবস্থা করছি। আর মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে নিজেদের অর্থায়নেই গাড়ি নিয়ে নিয়ে সমাবেশে আসছে। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের আন্দোলনে কোনও ব্যাপক অর্থায়নের প্রয়োজন হচ্ছে না। এটা জনমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা অর্থনৈতিক কারণে যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছি না তেমনি কারও মুখাপেক্ষী হওয়ারও প্রয়োজন হচ্ছে না।
সকাল সন্ধ্যা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী: আপনাকে এবং সকাল সন্ধ্যাকেও ধন্যবাদ।