ঘটনা ২০১৩ সালের। সে বছরই প্রথম সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন দেখেছিল মানুষ। হামলা, ভাঙচুরের পাশাপাশি সেবারের আন্দোলনে আহত ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে।
এক দশকের বেশি সময় আগে হওয়া সেই আন্দোলনে সফলতা মেলেনি। পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালে আবার তা ফিরে আসে। সে বছরের জানুয়ারিতে মানববন্ধন, মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে কোটাবিরোধীরা। সেবার মামলা-হামলা হলেও আন্দোলনে সফলতা পায় কোটাবিরোধীরা।
২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত দেশ সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল। বিন্যাস ছিল এমন- মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ (ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি), নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ ও ক্ষুদ নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান ছিল।
২০১৮ সালের ওই আন্দোলনের মুখে সরকার কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে। ওই কমিটি সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনও কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে সুপারিশ দেয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি হয়।
ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নেতা অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে আবেদন করেন। তার শুনানি শেষে গত ৫ জুন ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্ট রায় দেয়।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার ১১ জুলাই আংশিক রায় প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটাই শুধু নয়, জেলা, নারী, প্রতিবন্ধীসহ সব কোটাই পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে। রায়ের এই আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে কোটা পুনর্বহাল করতেও নির্বাহী বিভাগকে বলেছে হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের যে রায়ের পর থেকে আন্দোলন হচ্ছে, সব কোটা পুনর্বহালের সেই রায়ে বলা হয়েছে যে চাকরিতে নিয়োগে কোটার হার সরকার প্রয়োজনে বাড়াতে-কমাতে পারে। গত ৫ জুন দেওয়া রায়ে এই মত দেয় উচ্চ আদালত। রায়টির লিখিত সংক্ষিপ্ত রূপ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়।
তবে সরকার ও দুই শিক্ষার্থীর আবেদনে এই রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ একদিন আগেই দিয়েছে আপিল বিভাগ। ফলে হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহালের আদেশ দিলেও এই মুহূর্তে কোনও নিয়োগে কোটা প্রয়োগ এখন কার্যকর হচ্ছে না বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়টি দিয়েছিল। রায়টি লিখেছেন বিচারক খিজির হায়াত, তাতে সম্মতি দেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক কামরুল কাদের।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত দিয়ে হাইকোর্ট বলেছে, প্রয়োজনে কোটার অনুপাত পরিবর্তন কিংবা কমানো-বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই রায় সরকারের জন্য কোনও বাধা হবে না। কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের কথাও বলেছে উচ্চ আদালত।
আংশিক রায়টি প্রকাশের খবর দিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান (জামান) সকাল সন্ধ্যাকে বলেছেন, “কোটা বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ সরকারের থাকবে, বলে রায়ে বলা হয়েছে।”
তবে কোটা সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়া পর্যন্ত রাজপথেই থাকার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।
পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার ঢাকার শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি পালনের পর বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “জরুরি অধিবেশন ডেকে সংসদে আইন পাস করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।”
সব মিলে দেশে এক দশকের বেশি সময় ধরে থেমে থেমে চলছে কোটাবিরোধী আন্দোলন। পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো এবারের আগের দুই আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি।
প্রথম কোটাবিরোধী আন্দোলন
৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল পুনমূর্ল্যায়নের দাবিতে ও কোটা তুলে দিতে ২০১৩ সালের ১০ জুলাই সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগের দিন ৯ জুলাই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল স্থগিত করে তা পুনমূর্ল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন। তবে শিক্ষার্থীরা তা নাকচ করে দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এ আন্দোলনের শুরুতে একটি আহ্বায়ক কমিটি থাকার কথা বলা হলেও পরে শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের কোনও নেতা নেই।
রণক্ষেত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২০১৩ সালের ১১ জুলাই কর্মসূচি পালনের সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এ সংঘর্ষ। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কোটাবিরোধীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগও ওঠে। হামলায় ৩৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। প্রতিক্রিয়ায় উপাচার্যের কার্যালয়-বাসভবন ও প্রক্টর অফিস ভাঙচুর করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
১২০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ এবং উপাচার্যের কার্যালয়-বাসভবন ও প্রক্টর অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় ২০১৩ সালের ১২ জুলাই মধ্যরাতে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।
এরপর ধীরে ধীরে এ আন্দোলন থেমে যায় কোনও ফল ছাড়াই।
দ্বিতীয় কোটাবিরোধী আন্দোলন
২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৫ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। দাবি না মানা হলে সে বছরের ৪ মার্চ থেকে পুনরায় আন্দোলনের ঘোষণা দেয় তারা।
পুলিশের লাঠিপেটা
কোটা সংস্কারে ৫ দফা দাবি সরকার না মানায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ৪ মার্চ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ১৪ মার্চ লাঠিপেটা করে পুলিশ। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়। আটকৃতদের ছাড়িয়ে আনতে রমনা থানায় গেলে আন্দোলনরত চাকরিপ্রত্যাশীদের ৫০ জনকে আটক করা হয়।
এর প্রতিবাদে সেদিনই শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। ১৮ মার্চ সারাদেশে সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচির ডাক দেয় তারা।
শাহবাগে সংঘর্ষ
কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল বিকালে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। রাত ৮টার দিকেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছিল। এমন প্রেক্ষাপটে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটার পাশাপাশি ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের সঙ্গেও সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। শাহবাগ এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে আহত হয় ৩৫ জন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রী হল থেকে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। এই রাতেও উপাচার্যের বাসায় হামলা হয়।
ওই ৮ এপ্রিলের বিভিন্ন ঘটনায় শাহবাগ থানায় চারটি মামলা হয়। এর একটি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে; বাকি তিনটি করে পুলিশ।
পরদিন ৯ এপ্রিল সকালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকে আন্দোলনকারীরা। ১০ এপ্রিলও তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যায়। এই দুই দিনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
কোটা বাতিলের ঘোষণা
পরদিন ১১ জুলাইও পাঁচ দফা দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে কোটাবিরোধীরা। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেন, ‘‘পরিষ্কার কথা। কোটা পদ্ধতিই থাকার দরকার নাই।’’
৩ নেতাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ
কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতাকে ১৬ এপ্রিল তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র নুরুল হক নুর, এমবিএর (ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগ) ছাত্র রাশেদ খান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ফারুক হোসেন।
তিনজনই কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক।
অভিযোগের বিষয়ে সেদিন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নুরুল হক নুর, রাশেদ খান ও ফারুক হোসেনকে তুলে নেওয়া হয়নি। তাদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে।
প্রায় দুই ঘণ্টা পর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ওই তিন যুগ্ম আহ্বায়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন
২ মে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘ছাত্ররা কোটা ব্যবস্থা বাতিল চেয়েছে। বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ে এখন প্রশ্ন আনার দরকার কী?’’
কোটা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেন, “ছাত্ররা দাবি করেছে। সেটি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন হা-হুতাশের কী আছে? কোটা সংস্কার ছাত্রদের বিষয় না। এটা সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়।”
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ১৪ মে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। একই দাবিতে সেদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনও বন্ধ রাখা হয়।
প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা।
তাদের একের পর এক কর্মসূচিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে সেদিন মন্ত্রিপরিষদের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমি তো একটা কথা বলেছি। কমিটি কাজ করছে। কেউ বসে নাই। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছু সময় লাগে। এরপরও তারা থ্রেট দেয়। এটা সম্পূর্ণ বাড়াবাড়ি।’’
পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি স্থগিত
রমজান মাস ও সেশন জট বিবেচনায় নিয়ে ১৯ মে পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি স্থগিত করে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। তবে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকার ঘোষণা দেওয়া হয় সেদিনের এক সংবাদ সম্মেলন থেকে।
ছাত্রলীগের হামলা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালের ৩০ জুন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়।
হামলার প্রতিবাদে পরদিন বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে মানববন্ধন এবং ২ জুলাই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় আন্দোলনকারীরা।
যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ গ্রেপ্তার
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ১ জুলাই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছাত্রলীগের এক নেতার করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে রাশেদ খানের আত্মীয় ও বন্ধুরা অভিযোগ করে বলেছিলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাশেদকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় রাশেদের সঙ্গে থাকা মাহফুজ খান নামে আরেকজনকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
ছাত্রলীগের ফের হামলা
আন্দোলনকারীদের ওপর ২ জুলাই সকালে ফের হামলা করে ছাত্রলীগ। কোটা সংস্কার দাবিতে সেদিন তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হতে গেলে ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালায়।
আন্দোলনকারীদের কিল, ঘুষি, লাথি মেরে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের মানববন্ধন
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে পরদিন ৩ জুলাই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর হামলার বিচার দাবি করে।
সেদিন রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে আরেকটি মানববন্ধন করা হয়। এই ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও বিভিন্ন হল কমিটির নেতারা।
বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী
১২ জুলাই জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় আছে। সরকার এই রায় অমান্য করতে পারছে না। এই রায় অমান্য করলে আদালত অবমাননা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুরে জড়িত ছিল, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।”
৯ম-১৩তম গ্রেডে কোটা বাতিল
এর আগেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২ জুন একটি কমিটি করে সরকার।
এই কমিটি সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনও কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ জমা দেয়।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর ৩ অক্টোবর তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে সেখানে কোটা বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। পরদিন ৪ অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করেন জনপ্রশাসন সচিব।
৩ অক্টোবরের বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, “এখন থেকে ৯ম-১৩তম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে আর কোনও কোটা থাকছে না। অর্থাৎ আগে যা প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি হিসেবে বিবেচিত হতো, সেসব শ্রেণিতে কোটার ভিত্তিতে কোনও নিয়োগ হবে না।
“তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে আগের মতোই কোটাব্যবস্থা থাকছে। সেখানে পরিবর্তনের কোনও ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আগের মতোই কোটা বহাল থাকছে।”