বেশ কিছুদিন ধরেই ডায়াবেটিসসহ নানা রকমের শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন হকি সংগঠক মোহাম্মদ ইউসুফ। এর ওপর হঠাৎ করেই হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। বৃহস্পতিবার তাকে ভর্তি করা হয়েছিল চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালে।
চিকিৎসকেরা ইউসুফের হার্টে রিং পরিয়েছিলেন। ৭২ ঘন্টার পর্যবেক্ষণে ছিলেন আইসিইউতে। কিন্তু সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি। শনিবার সকাল ৯টা ৩৪ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মোহাম্মদ ইউসুফ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।
চট্টগ্রাম হকি কেন্দ্রের কোচ মহসিন উল হক চৌধুরী মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অসুস্থ অবস্থায় কয়েকদিন আগে ইউসুফকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। একটু আগে আমরা তার মৃত্যুর খবর পেয়েছি।” তিনি জানিয়েছেন বাদ আসর চট্টগ্রামের সিডিএ মসজিদে ইউসুফের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর চট্টগ্রাম শহরের হযরত গরীবউল্লাহ শাহ (রাঃ) কবরস্থানে দাফন করা হবে তাকে।
মোহাম্মদ ইউসুফের বড় পরিচয় তিনি একজন হকি সংগঠক। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের বর্তমান নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি। এর আগের কমিটিতে ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অতি পরিচিত মুখ মোহাম্মদ ইউসুফ। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সঙ্গে অনেক দিন থেকে জড়িত। তিনি ছিলেন সিজেকেএসের সর্বশেষ নির্বাহী কমিটির সদস্য। ছিলেন চট্টগ্রাম মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক।
ইউসুফের মৃত্যুতে একজন ক্রীড়া অন্তঃপ্রাণ সংগঠক হারিয়েছে বাংলাদেশ, এমনটাই বললেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, “তিনি চট্টগ্রামের একজন জনপ্রিয় সংগঠক ছিলেন। চট্টগ্রামের হকিটাকে একলাই জিইয়ে রেখেছিলেন। হকির চর্চা করতেন। সবচেয়ে বড় কথা পদ পদবীরে চেয়ে কাজ বেশি পছন্দ ছিল তার। গত নির্বাচনে যুগ্ম সম্পাদক ও সদস্য ফরম তুলেও অভিমানে সেটা তুলে নেন। খুব নীরবে নির্ভৃতে কাজ করতেন। সত্যিকার অর্থে তৃণমূল সংগঠক বলতে যা বোঝায় তিনি ছিলেন সেটাই।”
সিরাজ উদ্দিন যোগ করেন, “ জেলা ও বিভাগের জন্য অন্তঃপ্রাণ ছিলেন ইউসুফ। তিনি যখন হকির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তখন প্রতি জেলায় গিয়ে গিয়ে এন্ট্রি করানো, জেলাগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ানো এই কাজগুলো করেছেন। ক্রিকেটের পর আমাদের জেলার সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ ছিল হকিতে। এটাও উনার কারণে।”
এমন সংগঠক আর আসবে না বলেই জানান তিনি, “ হকির জন্য তো বটেই ক্রীড়াঙ্গনের জন্যই ক্ষতি হলো। আমরা এখন সংগঠক শূন্যতার মধ্যে কাটাচ্ছি। এরকম সময়ে এদের মতো সংগঠক আর আসবে না। “
হকি ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ইউসুফ হাসিমুখে কাজ করেছেন। নিবেদিতপ্রাণ সংগঠকের পাশাপাশি অমায়িক ব্যবহারের জন্য ক্রীড়াঙ্গনে সবার প্রিয় ছিলেন তিনি।
ইউসুফের মৃত্যুতে হকি অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।