হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ৮ বছর পূর্তির দিন গত ১ জুলাই ফুলে ফুলে ঢেকে গিয়েছিল গুলশান পুরান থানা ভবনের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ এর বেদী।
সেদিন অনেকেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছিলেন জঙ্গি হামলা ঠেকাতে জীবন উৎসর্গকারী দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে।
তবে মাত্র দুই মাস না পেরুতেই সেই ভাস্কর্যটির ঠাঁই হয়েছে ময়লার স্তুপে। আর ভাস্কর্যর পেছনের প্রাচীরে লাগানো হয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের পোস্টার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এমন চিত্র পাওয়া গেল গুলশান পুরান থানা ভবনের সামনে ২০১৮ সালে স্থাপিত ‘দীপ্ত শপথ’ ভাস্কর্যের সেই স্থানের। গুলশান পুরান থানার সেই ভবনে এখন চলছে ভাটারা থানার কার্যক্রম। গুলশান থানা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আরেক স্থানে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানী ঢাকার গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বরে হোলি আর্টিজান বেকারি নামে একটি রেস্তোরাঁয় ওই জঙ্গি হামলা চালায় পাঁচ তরুণ। তারা গুলি চালিয়ে ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে।
হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার তৎকালীন ওসি মো. সালাহউদ্দিন খান।
তাদের মুখাবয়বে ‘দীপ্ত শপথ’ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন প্রয়াত ভাস্কর মৃণাল হক। ২০১৮ সালের ১ জুলাই ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন ডিএমপির তখনকার কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
বৃহস্পতিবার সেখানে ঘুরে আরও দেখা যায়, ফুটপাতের পাশে ভাস্কর্যর ভাঙাচোরা বেদিতে কয়েকটি রড বেরিয়ে আছে। পাশের থানা প্রাঙ্গণের ভেতরে ময়লার স্তুপে পড়ে আছে ভাঙা ভাস্কর্য। ময়লার স্তুপে এক পুলিশ কর্মকর্তার মুখের আদলে করা ভাস্কর্যের মাথা পাওয়া গেলেও আরেক জনেরটা দেখা যায়নি।
সেখানে কথা হয় থানা ভবনের পাশের ভবন ১১৭-গুলশান এভিনিউয়ের গাড়িচালক মো. আশরাফুলের সঙ্গে।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “৫ আগস্ট যখন সারা দেশে ভাস্কর্য ভাঙচুর হয় তখনও এই ভাস্কর্যে কেউ হাত দেয়নি। ৪-৫ দিন পর হঠাৎ দুপুরবেলা ২০-৩০ জন লোক দল বেঁধে এসে ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলে। ৮ বা ৯ আগস্ট এ ঘটনা ঘটে। সঠিক তারিখটা মনে নেই। ভাস্কর্য ভাঙার সময় কেউ তাদের বাধা দেয়নি। তবে পোস্টার কারা লাগিয়েছে তা আমি দেখিনি।”
পুরাতন গুলশান থানার এই ভবনে গত ১১ আগস্ট থেকে ভাটারা থানার কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন এসআই সুমন মিয়া।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আমারা এখানে আসার পর থেকেই ভাস্কর্যটি এমন অবস্থায় দেখছি। এর আগে কী ঘটেছে আমরা জানি না।”
এ বিষয়ে কথা বলতে গুলশান থানার ওসির সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরে কল করে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গৌরব সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি এই থানায় নতুন এসেছি। তাই বিষয়ে কিছু জানি না।”
ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “৫ আগস্টের পর ভাস্কর্যটি ভাঙা হয়েছে বলে জেনেছি। ওই সময় বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে ছিলেন না। যারা ছিলেন তারাও দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এ কারণে কখন কীভাবে কারা এই ভাস্কর্যটি ভেঙেছে সে বিষয়ে এখনও জানতে পারিনি।
জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের স্মরণে ভাস্কর্যটি পুনরায় নির্মাণ করা হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।”