বরেণ্য লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. গোলাম মুরশিদ মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট এই প্রাবন্ধিক পুরানো বাংলা গদ্য নিয়ে গবেষণা করতেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) তপন বাগচী সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্ট তার মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, “আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টা এবং লন্ডন সময় সকাল ১১টায় ইংল্যান্ডের লন্ডনে কুইন্সে হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এ সময় পাশে ছিলেন স্ত্রী এলিজা মুরশিদ এবং কন্যা বিপাশা গার্গী মুরশিদ (অমিতা)।”
ফেইসবুকের ওই পোস্টে তপন বাগচী আরও লিখেছেন, “তার ছেলে পাণিনি মুরশিদ (অন্তু) বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। তিনি লন্ডনে পৌঁছানোর পর গোলাম মুরশিদকে লন্ডনেই সমাহিত করা হবে বলে জানা গেছে।”
১৯৪০ সালের ৮ এপ্রিল বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন গোলাম মুরশিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি।
এরপর ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় দুই দশক তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন।
লন্ডনের বিবিসি বাংলা বিভাগে ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া ১৯৯১ সাল থেকে লন্ডনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণায় জড়িত ছিলেন।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের গবেষণা-সহযোগী ছিলেনও তিনি। ভয়েস অব আমেরিকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি কণ্ঠ দিতেন। অবসর জীবনে মূলত তিনি লন্ডনেই বাস করছিলেন।
১৯৭৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ থেকে পিএইচডি করেন গোলাম মুরশিদ। তার গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন অধ্যাপক ডেভিড কফ। ‘হিন্দু সমাজ সংস্কার আন্দোলন ও বাংলা নাটক’ নামে এই গবেষণাকর্মটি প্রকাশিত হয় বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৮৪ সালে।
২০২১ সালে ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে একুশে পদক লাভ করেন গোলাম মুরশিদ। এর আগে প্রবন্ধ সাহিত্যের জন্য ১৯৮২ সালে তিনি পান বাংলা একাডেমি পুরস্কার। তিনি ‘হাসান মুরশিদ’ ছদ্ম নামেও লিখতেন।
তার লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘রবীন্দ্রবিশ্বে পূর্ববঙ্গ, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রচর্চা’, ‘রাসাসুন্দরী থেকে রোকেয়া: নারী প্রগতির একশো বছর’, আশার ছলনে ভুলি, ‘আধুনিকতার অভিঘাতে বঙ্গরমনী’ ‘বাংলা ভাষার উদ্ভব ও অন্যান্য’, ‘বাংলা গানের ইতিহাস’, ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত: নজরুল-জীবনী’, ‘আঠারো শতকের গদ্য: ইতিহাস ও সংকলন’, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর: একটি নির্দলীয় ইতিহাস’, ‘সংকোচের বিহুলতা’, ‘যখন পলাতক’, ‘কালান্তরে বাংলা গদ্য’, ‘বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার আদি-পর্ব’ ইত্যাদি।
এছাড়া বাংলা একাডেমি থেকে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’।