শিক্ষার্থীদের সরব প্রতিবাদের মধ্যে ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধূরী।
মাগুরায় ধর্ষিত শিশুটিতে দেখতে রবিবার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) গিয়ে তিনি একথা জানান বলে বাসস জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর বলেন, “আমি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নারী হয়রানি ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।
“এ যাবত নারীর প্রতি যত সহিংসতা হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত তদন্ত সম্পন্নপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছি।”
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার আট বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে তার পরিবারের অভিযোগ।
শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শনিবার তাকে সিএমএইচে আনা হয়। শিশুটি এখনও সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।
শিশুটির খবর জানতে পেরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গত ৬ মার্চ শিশুটির মাকে ফোন দিয়ে খোঁজ-খবর নেন ও সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের আশ্বাস দেন।
সিএমএইচে গিয়েও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। তিনি সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
ধর্ষণের ঘটনার তিন দিন পর শনিবার শিশুর মা বাদী হয়ে মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।
সেই মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজিব শেখের ভাই রাতুল শেখ (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগমকে (৪০) আসামি করা হয়। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দোষীরা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায় এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক রয়েছে।”
এটিসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত এবং তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাস দেন তিনি।
“নারীরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ঘরে-বাইরে দায়িত্ব পালন করবে। এতে যারা তাদের বাধা দিতে আসবে, সহিংসতা করতে আসবে, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।”
মাগুরার শিশুটি ধর্ষণের খবর প্রকাশের পর শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রতিবাদ জানানো হয়। রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের মিছিল বের হয়।
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে রবিবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজেয় বাংলার সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা মুখে ও কপালে লাল কাপড় বেঁধে বিক্ষোভে নামে। তাদের মুখে স্লোগান ছিল- ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘আমার মাটি আমার মা, ধর্ষকদের হবে না’ ইত্যাদি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
নারীর প্রতি সহিংসতা ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় বিক্ষোভ করে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাড্ডায় বিক্ষোভে নামে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকার বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নেমেছে।