হংকংয়ের একটি আদালত সেখানবার প্রধান গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কারাদণ্ড দিয়েছে।
বেনি তাই ও জশুয়া ওয়াং এই নেতাদের মধ্যে অন্যতম। তারা ‘হংকং ৪৭’ নামের একটি গ্রুপের সদস্য ছিলেন। গ্রুপটি স্থানীয় নির্বাচনের জন্য বিরোধী প্রার্থীদের নির্বাচিত করার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন।
আদালত বেনি তাইকে ১০ বছরের ও জশুয়া ওয়াংকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
গ্রুপটির অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে এদের মধ্যে দুজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এই বিচার চীনের কঠোর জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএল) প্রয়োগের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। আইনটি ২০১৯ সালের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের পর হংকংয়ে চালু করা হয়।
সেই আন্দোলনে কয়েক মাস ধরে লাখো মানুষ হংকংয়ের রাস্তায় নেমেছিলেন। আন্দোলন শুরু হয় একটি প্রস্তাবিত সরকারি চুক্তির বিরোধীতা থেকে। চুক্তিটি হংকং থেকে চীনের মূলভূমিতে অপরাধী প্রত্যর্পণের সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিল।
ওই প্রতিবাদ তখন দ্রুত গণতান্ত্রিক সংস্কারের বৃহত্তর দাবিতে রূপ নেয়।
পর্যবেক্ষকদের মতে, জাতীয় নিরাপত্তা আইন ও এই বিচার প্রক্রিয়ার ফলাফল হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন ও আইনের শাসনকে দুর্বল করেছে। এর মাধ্যমে চীন হংকংয়ের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এই বিচারকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের বিষয়ে ‘কঠোর আপত্তি’ জানিয়েছে। এছাড়া তাদের নাগরিক গর্ডন এনজির দণ্ডাদেশে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে।
বেইজিং ও হংকং প্রশাসনের দাবি, স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই আইন প্রয়োজন। তারা সায়ত্ত্বশাসন দুর্বল হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তাদের মতে, দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিরা চীনের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছে।
এদিকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার এই মামলাটি হংকংয়ের জনগণের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনেকে দণ্ডাদেশ ঘোষণার কয়েক দিন আগে থেকেই আদালতের বাইরে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করেন।
সাবেক অধ্যাপক বেনি তাই একটি অনানুষ্ঠানিক প্রাথমিক নির্বাচনের পরিকল্পনা করেছিলেন। বিচারকরা তার এই চেষ্টাকে ‘বিপ্লবের আহ্বান’ হিসেবে দেখেছেন।
দোষ স্বীকার করায় জশুয়া ওয়াংয়ের সাজা এক তৃতীয়াংশ কমানো হয়েছে। তবে অন্য আসামিদের মতো তিনি অতিরিক্ত কোনও ছাড় পাননি। বিচারকরা তাকে ‘চরিত্রবান’ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করেননি।
দণ্ডিত অন্য গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সাংবাদিক ও রাজনীতিক গুইনেথ হো, সাবেক আইনপ্রণেতা ক্লডিয়া মো ও লিউং কুয়োক হং। তাদের ৪ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি।