নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডারে নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকার দাবি করেছে ইরানসমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা।
অজ্ঞাতপরিচয় এক কর্মকর্তার বরাতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তি।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকার বিষয়ে হুতি বিদ্রোহীদের দাবির পক্ষে অবশ্য কোনও প্রমাণ হাজির করেনি আরআইএ নভোস্তি।
রাশিয়ার রাষ্ট্র মালিকানাধীন সংবাদ সংস্থাটির খবর এমন সময় এল যখন ইউক্রেনের সঙ্গে দীর্ঘায়িত যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে চলেছে মস্কো।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার জেরে নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে চলাচলরত আন্তর্জাতিক জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে হুতিরা। এর মধ্য দিয়ে গাজায় আগ্রাসন বন্ধে ইসরায়েলকে চাপ দিতে চাইছে তারা।
অবশ্য যেসব জাহাজ লক্ষ্য করে লোহিত সাগরে হামলা চালাচ্ছে হুতিরা, সেগুলোর সঙ্গে ইসরায়েল বা তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ তেমন একটা নেই বা থাকলেও খুব সামান্য।
হামলার একপর্যায়ে এ মাসের শুরুতে লোহিত সাগরের পার্শ্ববর্তী এডেন উপসাগরে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি বাণিজ্যিক জাহাজের তিন ক্রু প্রাণ হারান। ওই প্রথম লোহিত সাগরে ইয়েমেনের গোষ্ঠীটির হামলায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
লোহিত সাগরে হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলের দিকেও ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়ে হুতিরা। যদিও সেগুলোর বেশির ভাগই প্রতিহত করা হয়।
লোহিত সাগরকে কেন্দ্র করে হুতিদের হামলা বৃদ্ধির একপর্যায়ে এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য একযোগে ইয়েমেনে হুতিনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে হামলা চালায়।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তির খবর যদি সত্য হয়, তাহলে লোহিত সাগর ও এর আশপাশের অঞ্চলে পশ্চিমা বিশ্ব ও হুতিদের মধ্যকার উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র শক্তিদের মোকাবিলায় ‘চমকে ওঠার মতো’ পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে হুতিরা।
সেই পরিকল্পনা কী হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যে আরআইএ নভোস্তি হুতিদের কাছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকার খবর দিল।
হুতি মুভমেন্টের নেতা আব্দুল মালিক আল-হুতি বৃহস্পতিবার বলেছেন, আফ্রিকার একেবারে দক্ষিণে উত্তমাশা অন্তরীপের দিকে অগ্রসর হওয়া জাহাজ লক্ষ্য করে হুতিরা হামলা চালানো শুরু করবে।
উত্তমাশা অন্তরীপে যদি হুতিরা শেষ পর্যন্ত আক্রমণ করে বসে, তাহলে ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে পড়বে। কারণ এখন পর্যন্ত লোহিত সাগর দিয়ে সুয়েজ খাল অভিমুখী জাহাজের দিকে হামলা করে আসছে হুতিরা।
ওই অঞ্চলে নভেম্বর থেকে তাদের উপর্যুপরি হামলার জেরে নিরাপত্তা সংকটে পড়ায় মেডিটারেনিয়ান শিপিং কোম্পানি, মায়েরস্কের মতো বিশ্বের বড় শিপিং কোম্পানিগুলো তাদের জাহাজ লোহিত সাগর থেকে সরিয়ে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে পশ্চিম দিক দিয়ে ইউরোপে যেতে শুরু করে।
বিকল্পপথ বেছে নিতে বাধ্য হওয়ায় জাহাজগুলোর গন্তব্যে পৌঁছতে একদিকে যেমন বেশি সময় লাগছে, তেমনি খরচও হচ্ছে বেশি। তারপরও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ যাত্রাপথ শিপিং কোম্পানিগুলোকে স্বস্তি দিয়েছিল।
আরআইএ নভোস্তির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুতিদের ঘনিষ্ঠ এক সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, “ইয়েমেনের গোষ্ঠীটি সফলভাবে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। কঠিন জ্বালানি দিয়ে পরিচালিত ওই ক্ষেপণাস্ত্র ম্যাক ৮ (শব্দের গতির আট গুণ) পর্যন্ত গতি তুলতে সক্ষম।”
লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরের পাশাপাশি ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যে আঘাত হানতে হুতিরা ওই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন করতে চাইছে বলেও জানান ওই সামরিক কর্মকর্তা।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থার ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে পেন্টাগনের মুখপাত্র সাবরিনা সিংকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “হুতিদের কাছে এ ধরনের সামরিক সক্ষমতা আছে বলে আমরা মনে করি না।”
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।