সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতের বিতর্কে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পারফরর্মেন্স ছিল এক কথায় নড়বড়ে। এই ঘটনায় কিছু ডেমোক্রেট প্রকাশ্যেই বাইডেনকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হিসেবে রাখা উচিত কিনা, এমন প্রশ্ন তুলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামী নভেম্বরে। ভোটের কয়েক মাস বাকি থাকতেও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে বদলানো যায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে হয়ে উঠতে পারে।
কীভাবে প্রার্থী বদলানো যায়, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে রয়টার্স যোগাযোগ করে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের জ্যেষ্ঠ ফেলো, ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) সদস্য ও প্রেসিডেন্টের মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ‘প্রাইমারি পলিটিক্স’ বইয়ের লেখক ইলেইন কামারকের সঙ্গে।
রয়টার্স ওই বিশেষজ্ঞের বক্তব্যটি মূলত সাক্ষাৎকার আকারে প্রকাশ করেছে।
ডেমোক্রেটদের হাতে এখন কী কী বিকল্প আছে, এ প্রসঙ্গে কামারক বলেন, “ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে বাইডেনের বিপরীতে বিকল্প পরিকল্পনা দলটির ছিল না। তিনি কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ বছর প্রার্থী হয়েছেন।
“আনুষ্ঠানিকভাবে এই গ্রীষ্মের শেষের দিকে মনোনয়ন না দেওয়া পর্যন্ত তার প্রার্থিতা নিশ্চিত নয়। তাই প্রার্থী পরিবর্তনের এখনও সময় রয়েছে এবং এটি বাস্তবায়নে বেশ কিছু সম্ভাব্য পরিকল্পনা রয়েছে। মনোনয়ন পাওয়ার আগেই স্বেচ্ছায় প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন বাইডেন। প্রতিনিধিদের সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে তাকে চ্যালেঞ্জও করতে পারেন অন্যরা।
কেন বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর আলোচনা
“অথবা তিনি আগস্টে শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক কনভেনশনের পরে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটিকে (ডিএনসি) তার জায়গায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কাউকে নির্বাচন করতে ছেড়ে দিতে পারেন।”
তার মতে, এর পরের প্রক্রিয়াটি মূলত বাইডেনের উপর নির্ভর করে। তাকে পদত্যাগ করতে রাজি হতে হবে বা এই প্রক্রিয়ায় একজন চ্যালেঞ্জারের মুখোমুখি হতে হবে, যে তাকে এটি করতে বাধ্য করার চেষ্টা করবেন। এখন পর্যন্ত বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর কোনও ইঙ্গিত মেলেনি এবং কেউ তাকে চ্যালেঞ্জও করেনি।
বাইডেনের জায়গায় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজমের নাম শোনা যাচ্ছে। এই দুজনেই বৃহস্পতিবারের বিতর্কের পর বাইডেনের পক্ষে কথা বলেছেন। তারা চেষ্টা করেছেন, বাইডেনের এলোমেলো আচরণ ছাপিয়ে তার বক্তব্যকে ডেমোক্রেটদের সামনে তুলে ধরতে।
বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর কী হবে, এবিষয়ে কামারক বলেন, “বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য ও অঞ্চলগুলোর প্রাইমারি নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রায় ৪ হাজার ডেমোক্রেট প্রতিনিধির সমর্থন জোগাতে পেরেছেন গত কয়েক মাসে। এই প্রতিনিধিরা স্বভাবতই তাকে ভোট দেবেন।
“কিন্তু নিয়ম তাদের তা করতে বাধ্য করে না। প্রতিনিধিরা তাদের বিচার বিবেচনা অনুসারে ভোট দিতে পারেন। এর অর্থ হলো, তারা অন্য কাউকে তাদের ভোট দিতেই পারেন। বাইডেন তার প্রতিনিধিদের তাকে ভোট দেওয়ার দায় থেকে মুক্ত করতে পারেন। এতে করে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতে পারে।”
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে বাইডেনের জায়গায় বেশ কয়েকজনের নাম আছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নিঃসন্দেহে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। তবে তার জনপ্রিয়তার রেটিং অতটা ভালো নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্ট মারা বা অক্ষম হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেবেন। তবে প্রেসিডেন্ট পদে একজন প্রার্থী নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে দেশটির সংবিধানে কোনও নির্দেশিকা নেই।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নিউজম, মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার, কেন্টাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেশিয়ার ও ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকারকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে তারা সবাই বাইডেনের সমর্থক এবং প্রচারণায় তাকে নির্বাচিত করতে কাজ করছেন।
ট্রাম্প-বাইডেন প্রথম বিতর্কে জিতল কে
মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে ডেমোক্রেটদের হেভিওয়েটদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতে পারে।
ব্যালটপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, প্রার্থীদের দলের মনোনয়ন পেতে ন্যূনতম ৬০০ প্রতিনিধির স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হবে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ৪ হাজার ৬৭১ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রতিনিধি ৩ হাজার ৯৩৩ এবং সুপারডেলিগেট রয়েছেন ৭৩৯ জন।
কোনও প্রার্থী প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে একটি ‘ব্রোকার্ড কনভেনশন’ হবে। সেখানে প্রতিনিধিরা স্বাধীন এজেন্ট হিসেবে কাজ করে দলের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী মনোনীত করবেন। এরপর নিয়ম প্রণয়ন এবং মনোনিতদের নামের জন্য ভোটগ্রহণ করা হবে।
মনোনয়নের জন্য একাধিকবার ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৫২ সালে ডেমোক্রেটরা প্রথম ভোটে কোনও প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর ব্রোকার্ড কনভেনশনের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছিল।
আগস্টে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) কনভেনশন হবে। এই কনভেনশনের পর বাইডেন সরে দাঁড়ালে ডিএনসি নতুন প্রার্থী বাছাই করবে। এক্ষেত্রে ডিএনসি বিশেষ সভার আয়োজন করবে।
ডিএনসির সদস্য সংখ্যা ৪৩৫। এদের মধ্যে নারী, পুরুষ, এলজিবিটিকিউ ও সংখ্যালঘুরাও রয়েছেন। সদস্যদের মধ্যে ৭৫ জনকে নির্বাচিত করেন চেয়ার। আর বাকিরা নির্বাচিত হন রাজ্যের মাধ্যমে।
বাইডেনের জায়গায় অন্য একজনকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করতে হলে, সেই ব্যক্তিকে ডিএনসির অন্তত ৬০ জনের ভোট পেতে হবে। তবে এই সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে ডিএনসি কমিটি। এমনকি নতুন কোনও নিয়ম আরোপের ক্ষমতাও আছে কমিটির।
পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ডিএনসি ওয়াশিংটন ডিসিতে সভা করবে। সেখানেই ভোটগ্রহণ ও গণনা করা হবে। ব্যালটে স্বাক্ষর থাকবে এবং সেটি হাতে হাতে সংগ্রহ করা হবে। যদি নির্বাচনের তারিখ খুব নিকটে চলে আসে, সেক্ষেত্রে এই ভোট অনলাইনেও হতে পারে।
তথ্যসূত্র : রয়টার্স।