কাঁচাবাজারে পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। শুক্রবার থেকে সরকারের এই নির্দেশ মানার কথা থাকলেও ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে অবাধেই এর ব্যবহার হচ্ছে।
সরকারের নির্দেশ যারা অমান্য করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে—পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়েছে। তবে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েরই প্রশ্ন, পলিথিনের বিকল্প না পেলে কীভাবে তারা এই নিষেধাজ্ঞা মানবেন?
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার খিলগাঁও গোড়ান বাজার থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন মেহেদী। তার হাতে পলিথিন ব্যাগে দুই কেজি আলু।
তাকে জিজ্ঞেস করা হলো- নিষিদ্ধ করার পরও পলিথিন ব্যাগ কেন ব্যবহার করছেন? প্রশ্ন শুনে মেহেদী বললেন, “আমি তো জানি না। পলিথিন ব্যাগ ছাড়া আর তো ব্যাগ নাই দোকানদারদের কাছে।”
গোড়ান বাজারে গেলে মেহেদীর মতো আরও অনেকের হাতেই দেখা গেল পলিথিন ব্যাগ। স্বাভাবিকবাবেই বাজারটির দোকানিরাও পলিথিন ব্যাগে পণ্য দিচ্ছেন।
পলিথিন ব্যাগ যে নিষিদ্ধ হয়েছে, তা জানেন কি না জিজ্ঞেস করতেই দোকানদার আসাদউল্লাহ বললেন, “সরকার যেটা ব্যবহার করতে কইব, সেটাই ব্যবহার করুম। বিকল্প তো নাই।”
শুধু গোড়ান বাজার নয়, ঢাকা শহরের প্রায় সব বাজারেই পরিস্থিতি একই রকম। অবাধেই পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে।
ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের সঙ্গেই কথা বলে জানা যায়, পলিথিন ব্যাগের বিকল্প কিছু তাদের কাছে নেই।
বিকল্প ব্যাগ না এনে পলিথিন নিষেধাজ্ঞা কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দিহান সবাই।
এদিকে নির্দেশনা মানাতে অভিযান শুরু করেছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও আইন অনুবিভাগ) তপন কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের দল পলিথিন ব্যবহারবিরোধী অভিযান তদারক করছে।
নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে শুক্রবার সকাল ১০টার পর ঢাকার মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে তপন কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে মনিটরিং কমিটির ৭ থেকে ৮ সদস্য অভিযান শুরু করেন।
পলিথিন বন্ধে দেশব্যাপী উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে রবিবার থেকে অভিযান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস।
এ সময় বাজার করতে আসা সাধারণ মানুষকে পলিথিন ব্যবহার না করে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়। একইসঙ্গে দোকানিদের পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এদিন কোনও আইনি ব্যবস্থা না নিলেও পরবর্তী অভিযানে পলিথিন ব্যাগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন বা পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়। ইতিমধ্যে রাজধানীর সুপারশপগুলোতে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড় ও কাগজের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবে এসব ব্যাগের সরবরাহ পর্যাপ্ত নয় বলে জানা গেছে।
গত ২৭ অক্টোবর সচিবালয়ে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ সভা হয়।
সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন, ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে কঠোর মনিটরিং চালু করা হবে। পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
এবার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে কি
পলিথিন ব্যাগের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার ঘটনা এবারই প্রথম না। এর আগে ২০০২ সালের ১ মার্চ আইন করে বিষাক্ত পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। তবে দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি; বরং গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়তে দেখা গেছে। এরপর সরকার ২০১০ সালে আরেকটি আইন করে। কিন্তু এই আইনও বাস্তবে কোনও কাজ দেয়নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সমন্বয়কারী লিংকন গায়েন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাজারে বিকল্প সামগ্রী না দেওয়ায় বিভিন্ন সময় সরকারের নেওয়া পলিথিন বন্ধের ঘোষণা সুফল পায়নি। এবারও আমরা মনে করি যে, সাধারণ মানুষ এখনও প্রস্তুত হয়ে উঠতে পারেনি।”
তবে এই প্রক্রিয়া চালানোর বিকল্প নেই বলে অভিমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলামের।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সরকার এরকম বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার কারণে কিন্তু এখন জনসচেতনতা বাড়বে। সরকার এখন এটা নিয়ে মাঠে যায়, তাহলে তো মানুষকে প্রস্তুত করতে পারবে।
“মানুষকে প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া হিসেবে এই ঘোষণাকে আমি দেখতে চাই। এটা তো সত্য যে, পলিথিন পরিবেশ, খাল-নদী ও মাটির জন্য বিপজ্জনক। সেজন্য এটি বন্ধ হওয়া দরকার।”
একইসঙ্গে তিনি মনে করেন, দেশের পরিবেশবিদ, নীতি নির্ধারক এবং পলিথিন প্রস্তুতকারী ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্বনয় হওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, “এই তিনপক্ষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তিনপক্ষের মধ্যে কালেক্টিভ কাজের ফ্রেম ওয়ার্ক দাড়া করাতে হবে। যারা এখন প্লাস্টি ব্যাগ বানাচ্ছেন, তারা কীভাবে অন্য জিনিস বানাবে তার নীতিমালা লাগবে। একবারে হবে না, তবে ধীরে ধীরে এটা করতে হবে।”