মধ্যপ্রাচ্যে চার দশকের বেশি সময় ধরে লড়াই করছে শিয়া মুসলিম রাষ্ট্র ইরান আর ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল। কখনও সরাসরি, কখনও মিত্রদের মাধ্যমে, যাকে বলে ‘প্রক্সি ওয়ার’।
শেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পর ইরান জায়নবাদী ইসরায়েলকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের অভিযোগ, মিত্রদের ব্যবহার করে ও প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সহিংসতা ছড়াচ্ছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)।
মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতাধর এই দুই শক্তি এখন আবার রণাঙ্গনে। কারণ একাধিক। ফিলিস্তিনের গাজায় গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে নাখোশ ইরান। ঘনিষ্ঠ মিত্র ফিলিস্তিনের হামাসকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়তে তারা সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে।
ইরানের আরেক মিত্র লেবাননের হিজবুল্লাহ গত বছর থেকেই গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সীমান্তে হিজবুল্লাহ আর ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল, যা গত মাসে প্রকট আকার ধারণ করে।
এক পর্যায়ে ইসরায়েল লেবাননে হামলা চালিয়ে বসে। তাদের হাতে নিহত হন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। তারও আগে তেহরানে হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়াকে খুন করে ইসরায়েল।
লেবাননে ইসরায়েলের হামলার শুরুতেই ইরান বলেছিল, বৈরুতে হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরাল্লাহ ও তেহরানে হামাস প্রধান হানিয়া হত্যার বদলা নেওয়া হবে এবং তা হয়েছেও।
মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ও তার সবচেয়ে কাছের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইরানকে উচ্চ মূল্য চুকাতে হবে।
এই হুমকি শুনে ইরান চুপ থাকেনি। সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব জায়নবাদী রাষ্ট্র দিলে সেক্ষেত্রে হামলা আরও তীব্র হবে।
প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের অধিকারী ইসরায়েলকে ইরান প্রতিহত করবে কীভাবে? তার বিমানবাহিনীর সক্ষমতা সেই মান্ধাতার আমলের। এই বিমানবাহিনী দিয়ে ইরান কতক্ষণ ইসরায়েলের সামনে টিকে থাকতে পারবে? যেখানে চার মাস আগে তার প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি লক্কড়-ঝক্কড় হেলিকপ্টারে চড়ে অকালে প্রাণ হারান।
এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অবশ্য ইরানকে একেবারে নিঃস্ব ভাবছেন না বিবিসির সাংবাদিক ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার।
তার মতে, ইরানের বিমানবাহিনী সময়োপযোগী না, এটা ঠিক। তবে এও ঠিক, দেশটির আছে বিপুল পরিমাণে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিকসহ নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র। আছে বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন।
আর আছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য যোদ্ধা, যারা ইরানের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে দুবার ভাববে না।
এছাড়া আছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) নৌবাহিনী। উপসাগরে এই বাহিনীর জাহাজগুলোতে রাখা আছে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী নৌকা, যা দ্রুত প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সক্ষম। তারা চাইলে হরমুজ প্রণালীতে মাইনও পুঁতে রাখতে পারে।
তাই সামরিকভাবে ইসরায়েলকে পরাজিত করতে না পারলেও এসবের সাহায্যে শক্তিশালী রাষ্ট্রটিকে ইরান সহজেই বেকায়দায় ফেলতে পারে বলে মনে করেন ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার।
তার ধারণা, মঙ্গলবারের পর ইরান হয়তো ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটির চেয়ে তাদের আবাসিক এলাকাগুলোতেই হামলা চালাবে বেশি।