Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধে ভারতের ক্ষতি কতটা

airindia-flight
[publishpress_authors_box]

পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের জেরে সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত, যা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে। এর পাল্টায় পাকিস্তান তার আকাশসীমা ভারতের জন্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছে, যা আবার ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ায় এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিগোকে তাদের বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের রুট ঘোরাতে হচ্ছে, যাতে যাত্রার সময় বাড়ার পাশাপাশি জ্বালানি খরচও বাড়ছে।

এতে ভারতীয় বিমানসংস্থাগুলোর খরচ কী পরিমাণ বাড়বে, তার কোনও হিসাব পাওয়া না গেলেও পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারারকে উদ্ধৃত করে জিও নিউজ জানিয়েছে, বাড়তি খরচের অঙ্কটি হবে লাখ লাখ ডলার।

গত মঙ্গলবার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একদল বন্দুকধারী পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়। তাদের গুলিতে ২৬ জন নিহত হয়।

এই হামলার পেছনে পাকিস্তান রয়েছে দাবি করে ভারত পরদিনই সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করাসহ পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করে তাদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়।

তার পাল্টায় পরদিন পাকিস্তানও দ্বিপক্ষীয় সব চুক্তি স্থগিতের পাশাপাশি ভারতের বিমান সংস্থাগুলোর জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয়। এই নিষেধাজ্ঞা ২৩ মে পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে ইসলামাবাদ জানিয়েছে।

পহেলগাম হত্যাকাণ্ডে ইসলামাবাদকে জড়িত করার নিন্দা জানিয়ে শুক্রবারই পাকিস্তান সেনেট একটি প্রস্তাব পাস করে। সেখানে পানিকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের নিন্দাও জানানো হয়।

অন্যদিকে আকাশসীমা নিয়ে পাকিস্তানের সিদ্ধান্তের প্রভাব বৃহস্পতিবার দিনের শেষার্ধ্ব থেকে দৃশ্যমান হতে শুরু করে। ফ্লাইটরাডারে দেখা যায়, এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিগোর নিউ ইয়র্ক, আজারবাইজান ও দুবাইয়ের ফ্লাইটগুলোর পথ পরিবর্তন করেছে, যেখানে আগে তাদের ফ্লাইটগুলো পাকিস্তানের আকাশের ওপর দিয়ে যেত।

ভারতের বিমান সংস্থাগুলোর ফ্লাইট এখন পাকিস্তান এড়িয়ে চলছে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আকাশসীমা বন্ধে ভারতের বিমানসংস্থাগুলোই বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। কারণ দিনে তাদের ২০০ থেকে ৩০০টি ফ্লাইট পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে বিভিন্ন গন্তব্যে যেত।

দিল্লি, মুম্বাই, অমৃতসর, আহমেদাবাদ থেকে এই বিমানসংস্থাগুলোর ফ্লাইট মধ্যপ্রা্চ্য থেকে শুরু করে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন গন্তব্যে যেত পাকিস্তানের ওপর দিয়েই।

বিপরীতে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের কেবল একটি ফ্লাইট ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করে জানিয়ে জিও নিউজ লিখেছে, ওই রুটটিও পরিবর্তন করে চীনের ওপর দিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

রয়টার্স লিখেছে, পাকিস্তানের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হবে নয়াদিল্লি বিমানবন্দরকে। ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়ার এপ্রিল মাসের সূচিতে দেখা যাচ্ছে যে সেখান থেকে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকার ১,২০০টির মতো ফ্লাইট নির্ধারিত রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় একটি বিমান সংস্থার কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, নয়া দিল্লি থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটগুলোকে এখন প্রায় এক ঘণ্টা বেশি উড়তে হবে। ফলে জ্বালানি খরচ বাড়বে, অথবা অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ কমাতে কম কার্গো বহন করতে হবে।

ইন্ডিগো শুক্রবার জানিয়েছে, পাকিস্তানের সিদ্ধান্তের প্রভাব তাদের অল্প কিছু ফ্লাইটের ওপরই পড়বে। তবে এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, উত্তর আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কিছু ফ্লাইট একটি বিকল্প দীর্ঘ পথ ধরবে।

বিমান চলাচল-ভিত্তিক ওয়েবসাইট লাইভফ্রমএলাউঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা অজয় ​​আওয়ানে রয়টার্সকে বলেন, এয়ার ইন্ডিয়াই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

একটি বিমান সংস্থার পরিচালন ব্যয়ের ৩০ শতাংশই যায় জেট ফুয়েল এবং তেলের পেছনে। সেই হিসাবে ভারতের বিমানসংস্থাগুলোর খরচ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

ফ্লাইটঅয়্যার ডেটা দেখিয়েছে, বৃহস্পতিবার নয়া দিল্লি থেকে বাকুতে ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইট দীর্ঘ পথ ধরে ৫ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট সময় নেয়। পাকিস্তানকে এড়াতে এটি ভারতের গুজরাট রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং তারপর আরব সাগরের উপর দিয়ে ইরান হয়ে আজারবাইজানে পৌঁছে। অথচ গত বুধবার এই ফ্লাইটটি পাকিস্তানের আকাশসীমা দিয়ে ৫ ঘণ্টা ৫ মিনিটে পৌঁছেছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় পাইলট রয়টার্সকে বলেন, পাকিস্তানের পদক্ষেপে বিমানের শিডিউল ঠিক রাখতে সবকিছু আবার নতুন করে সাজাতে হবে।

ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ এবারই প্রথম করল না পাকিস্তান। ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধ এবং ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হত্যাকাণ্ডের পরও উত্তেজনার মধ্যে একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসলামাবাদ।

সেবার ভারতগামী সব ফ্লাইটের জন্য নিজেদের আকাশপথ বন্ধ করলেও এবার শুধু ভারতের বিমান সংস্থাগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তান।

এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় ভারতের বিমানগুলোকে যে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে, নয়া দিল্লি অনুরূপ পদক্ষেপ নিলে পাকিস্তানের জন্য সেই ঘুরপথের দৈর্ঘ্য আরও বেশি হবে। অর্থাৎ, ভারতের আকাশ এড়াতে তুলনামূলক বেশি পথ অতিক্রম করতে হবে পাকিস্তানি বিমানকে। এর ফলে ক্ষতি হতে পারে পাকিস্তানের বাণিজ্যেও।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত