দীর্ঘ দেড় দশক পর আড়ম্বরের সঙ্গে ৭ নভেম্বর পালন করছে বিএনপি। দিনটি তাদের কাছে বিপ্লব ও সংহতি দিবস। অবশ্য আওয়ামী লীগ শাসনামলে এই দিনকে বলা হতো ‘মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা হত্যা দিবস’।
দিনটি বিএনপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের উত্থান সূচিত হয়েছিল ১৯৭৫ সালের এই দিনে।
বিএনপি শাসনামলে প্রতি বছরই ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হতো, থাকত সরকারি ছুটিও।
তবে এবার আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় লম্বা সময় স্বাচ্ছন্দ্যে দিবসটি পালন করতে পারেনি বিএনপি। কেবল জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেওয়া আর আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের সব ধরনের উদ্যোগ নেয় দলটি। এজন্য ঘোষণা করা হয় ১০ দিনের কর্মসূচিও।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকার শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে দলের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। মঙ্গলবার হয়েছে আলোচনা সভা, বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়েছে পোস্টার।
শুক্রবার ঢাকায় বিশাল র্যালির প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, এটি হবে দেশের ইতিহাসে স্মরণকালের সেরা র্যালি। জামায়াতও দিনটি উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল।
অন্যদিকে ৭ নভেম্বর ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করা কর্নেল তাহেরের দল জাসদও আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। তবে এতদিন ‘মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা আওয়ামী লীগের কোনও কার্যক্রম দেখা যায়নি। কোনও বিবৃতিও দেয়নি দলটি।
উপযুক্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে, বিশ্বাস ফখরুলের
জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ নভেম্বরের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের এই দিনে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনতা দ্বিতীয়বারের মতো এই দেশে আধিপত্যবাদ ও তাদের দোসরদের পরাজিত করে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল, তাদের পরাজিত করে জিয়াউর রহমানকে সামনে নিয়ে এসে তারা নতুন এক রাজনীতির সূচনা করেন।
“সেই রাজনীতি ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাজনীতি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের রাজনীতি, বাংলাদেশে আধিপত্যবাদকে পরাজিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি। তারই ধারাবাহিকতায় ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পান।”
রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে নানা পরিবর্তন আনতে শুরু করেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে নিয়ে আসেন। রুদ্ধ-বদ্ধ অর্থনীতিকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পরিণত করেন। সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটা নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেন।”
তার দল বিএনপি এখনও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে বলেও উল্লেক করেন তিনি।
এসময় নির্বাচন প্রসঙ্গেও কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি উপযুক্ত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দিতে সক্ষম হলে এই জাতির সামনে যে চ্যালেঞ্জ আছে তা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।”
এসময় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়াপারসন উপদেষ্ঠা আমান উল্লাহ আমান, দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নতুন করে তদন্তের আহ্বান জামায়াত আমিরের
‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালনে ঢাকার মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখা আলোচনা সভার আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতা যুগপৎভাবে রাজপথে নেমেছিল। সংগ্রামী জনতা ফুলের পাপড়ি দিয়ে দেশপ্রেমী বিপ্লবীদের বরণ করে নিয়েছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীরা দেশটাকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু বীর জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি।
“৭ নভেম্বর ব্যর্থ হওয়ার পর তারা কথিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশের ৫৭ জন দেশপ্রেমী ও চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তকে অরক্ষিত করে ফেলেছে।”
তিনি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।
মাইনাস ফর্মুলা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চলছে : জাসদ
সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষ্যে জাসদের আলোচনায় অভিযোগ করা হয়, দেশে মাইনাস ফর্মুলা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক শূন্যতার অভিযোগ এনে বক্তারা নির্বাচিত সাংবিধানিক সরকারের হাতে দেশের শাসনভার ন্যস্ত করার প্রতি আহ্বান জানান।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির উদ্যোগে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
বক্তারা জাসদ সভাপতি জননেতা হাসানুল হক ইনুসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি এবং রাজনৈতিক নেতাদের নামে দায়ের করা ঢালাও মিথ্যা মামলায় সাজানো আদালতে প্রহসনমূলক বিচার বন্ধের দাবি জানান।
জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর্জা মো. আনোয়ারুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন খান জকি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত রায়হান, নইমুল আহসান জুয়েল, মোহাম্মদ মোহসীন, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান বাদশাসহ অন্যরা।