সকালে ঘুম থেকে জেগে অনেকেই চোখের সামনে মেলে ধরেন ফোন। এমনকি বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গেলেও, অনেকেই সঙ্গে করে নিয়ে যান ফোনটা। রাস্তায় চলতে ফিরতে একটু পর পর চোখ রাখছেন ফোনে, এমন মানুষ তো নিত্যই দেখা যায়। কেননা, কেবল কথা বলার মাধ্যম হিসেবে নয়, সংবাদ দেখা, বিনোদন, অফিসিয়াল বা আউটসোর্সিং এর কাজ করা- ইত্যাদি সব কিছুই করা যায় ফোনে।
কিন্তু ফোনের এই অতি ব্যবহার মানুষের ভেতর তৈরি করে উদ্বেগের অনুভূতি। কমায় মনোযোগ। তাই মানসিক চাপ কমাতে ফোন ব্যবহারে সচেতন হতে বলছেন মনরোগ বিশেষজ্ঞরা। ঘুম থেকে জেগেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনে মনযোগ না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখতেই মানুষ সকাল সকাল ফোন হাতে নেন। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নানা নেতিবাচক খবর এবং পোস্ট মানুষের উদ্বেগ বাড়ায়।
দিনের শুরুতেই ফোন ব্যবহার না করার গুরুত্ব সম্পর্কে ক্যালিফোর্নিয়ার মিডিয়া সাইকোলজি সেন্টারের পরিচালক ডাঃ পামেলা রুটলেজ বলেন, “আপনি তখন ইতিবাচক মনোভাব (সকাল সকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় মনযোগ না দিলে) নিয়ে দিন শুরু করতে পারেন। যা আপনার ভেতর সহনশীলতা, সৃষ্টিশীলতা এবং নতুন কিছু করার আগ্রহ বাড়ায়। চারপাশের প্রতি আপনি আরও আন্তরিক হয়ে ওঠেন।”
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা অ্যান্ড্রয়েড ফোন, কোনটাই জীবন থেকে বাতিল করে দেওয়া সম্ভব না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফোন ব্যবহারে ছোটখাট কিছু পরিবর্তন নিয়ে এলেই নাকি ঘটে যাবে দারুণ কিছু। যেমন, ঘুম ভাঙামাত্রই চট করে ফোন হাতে না নিয়ে দিন শুরু করা।
মনোবিজ্ঞানী ড. শার্লট আর্মিটেজ এর মতে, ঘুম থেকে উঠেই ফোনের দিকে তাকিয়ে দিন শুরু করা স্বাস্থ্যকর নয়। এর কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আর্মিটেজ বলেন, “ফোন থেকে যে নীল আলো নির্গত হয় তা কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়। কর্টিসল হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয় এবং উদ্বেগের অনুভূতি তৈরি করে।”
আর্মিটেজ আরও বলেন, “শুধু আলোই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কনটেন্টও দিনের শুরুতেই আপনাকে অসহায় করে তুলতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “সকালে, যখন আপনি পুরোপুরি জেগেই উঠেননি, তখন নানা ধরনের কনটেন্ট আপনার দিনটাই মাটি করে দিতে পারে। একটি নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে আপনার দিন শুরু হতে পারে। তাছাড়া অনলাইনে অতিরিক্ত সময় কাটানোর ফলে সকালের সময়টা আপনি ক্লান্ত এবং উদাসীন বোধ করতে পারেন।”
আপনি ফোনের নন, ফোনটি আপনার!
ফোন ব্যবহার মাত্রই যে নেতিবাচক তা কিন্তু নয়। এ ব্যাপারে ড. রুটলেজ বলেন, “সময় দেখা বা আবহাওয়ার খবর জানার জন্য যদি ফোন ব্যবহার করেন, তবে তা আপনার সিদ্ধান্তের ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়। এক্ষেত্রে ফোন ব্যবহার করে আপনি কাজে দেরি করা পরিহার করতে পারেন এবং আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে সঠিক পোশাক গায়ে জড়িয়ে নেন।”
রুটলেজ আরও বলেন, “অন্যদিকে, যদি ইমেইল চেক করা, সোশ্যাল মিডিয়া আর খবরের ভেতর আটকে যান, তবে আপনি আপনাদের দিনের পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে পড়ছেন আর নিজের ওপর উপর চাপ বাড়াচ্ছেন।”
আপনি হয়তো সকালবেলা সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন থেকে দূরে থাকতে চান। কিন্তু নোটিফিকেশনে একবার ডুব দিয়ে দিলে আপনার হয়তো হারিয়ে যাওয়ার ভয়ও আছে। তাহলে কী করা?
আর্মিটেজের পরামর্শ হলো ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোন রাখতে হবে এয়ারপ্লেন মুডে। পরদিন ঘুম থেকে উঠে, নিজের আনুষাঙ্গিক কাজ সেরে কর্মস্থলে প্রবেশের আগ পর্যন্ত ফোন এয়ারপ্লেন মুডে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
অন্যদিকে ড. রুটলেজ বন্ধুদের কিংবা পারিবারিক আড্ডায় সম্পূর্ণ মনযোগ বন্ধু, পরিবারের সদস্য এবং কাছের মানুষদেরই দিতে বলছেন।তার মতে এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
রুটলেজ আরও বলেন, “মস্তিষ্ককে ব্যস্ত করে রাখা কন্টেন্টগুলো আপনাকে ঘুমোতে দেয়না। মনকে বিক্ষিপ্ত এবং উত্তেজিত করে রাখে এমন কন্টেন্ট থেকে দূরে থাকা আদর্শ ঘুমের জন্য দরকার।”
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সীমারেখা মেনে চলা উচিত। ফোনের হোম স্ক্রিনে অ্যাপগুলো না রেখে, সেগুলো যদি অ্যাপ ভল্টে রাখা যায় তাহলে ফোন হাতে নেওয়া মাত্রই সেগুলো চোখে পড়বে না। এক্ষেত্রে আরও একটি কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সেটি হলো প্রয়োজন ছাড়া ইন্টারনেট সংযুক্ত না করা। আর এই বিষয়গুলো মেনে চলতে পারলে ফোনের ওপর নিজের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করা যাবে।