কারও সঙ্গে সাধারণভাবে ভাল-মন্দ আলাপ করা আর কারও চিন্তাজগতে গভীর ছাপ ফেলার মধ্যে আকাশপাতাল তফাৎ রয়েছে। তবে এর চেয়ে বড় কথা পেছনের উদ্দেশ্য আসলে সৎ না অসৎ?
উদ্দেশ্য গোপন রেখে অনেকে অপরের সঙ্গে সেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আলাপ চালিয়ে যেতে পারে।
স্বতঃস্ফূর্ত আলাপে আন্তরিকতা থাকে। এমনকি অন্যপক্ষের সম্মতি আদায়েও থাকে স্বচ্ছতা ও বন্ধুবৎসল আচরণ।
অন্যদিকে মাইন্ড গেম বা মনস্তাত্ত্বিক ম্যানিপুলেশন হলে কেউ আপনাকে ছলচাতুরি করে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এই কৌশল খুবই নিখুঁত হয়। যারা এমন ফন্দি আঁটেন তারা জানেন কোন শব্দে অপর পক্ষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাবু হবে।
পারসোনাল ব্র্যান্ডিং ব্লগ ডটকম জানাচ্ছে কথার মধ্যে জুড়ে দেয়া ১০ ধরনের বিশেষ কৌশল, যা রীতিমত টোপ ফেলার মত।
ট্রাস্ট মি …
ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওজন মাইন্ড গেম নকশায় বড় ভূমিকা রাখে। সম্পর্কে বিশ্বাস ও ভরসা কখন আর কীভাবে ব্যবহার করা যাবে ফাঁদ পাতা ব্যক্তি খুব ভালো করেই জানান।
মনস্তাত্ত্বিক জুয়াড়িরা জানে কখন ‘ট্রাস্ট মি’ বলে কারও বিশ্বাস জয় করা যায়। যখন কেউ আপনাকে ’ট্রাস্ট মি’ বলে তখন মনে দানা বাঁধা প্রশ্নও হারিয়ে যায়। আপনি প্রস্তুত হয়ে ওঠেন বিনা বাক্য ব্যয়ে তার দেখিয়ে দেয়া পথে চলতে। আর এভাবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রতারণার শিকার হন আপনি।
বিশ্বাস ও আস্থার নির্মাণ হয় সম্পর্কের স্বতঃস্ফূর্ত যোগাযোগে। তাই কেউ যখন বিশ্বাসের কথা বারবার মনে করিয়ে দিতে চায়, তখন তাতে কাবু না হলে মনের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নটি করতে হবে।
আমি অন্য কারও মতো নই
ধরা যাক আপনি কারও সঙ্গে সম্পর্কে আছেন। আপনার পুরুষটি যদি বারবার এ কথা বলে সে অন্য কোনো পুরুষের মতো নয়, তাতে আপনি তার প্রতি আরও দুর্বল হয়ে পড়বেন। কিন্তু আপনার প্রতি তার আচরণ দিয়েই প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করবেন দ্রুত। যদি তার আচরণে বারবার ভ্রুকুটি দেখা দেয় আপনার চেহারায় তাহলে বুঝবেন আপনার সঙ্গী আসলে আপনার প্রতি প্রকৃত দায়িত্ব এড়াতে কিংবা ফায়দা নিতেই এমন কথার ফুলঝুড়ি সাজিয়েছে।
তুমি একটু বাড়াবাড়ি করছ …
কারও ন্যায্য দাবিকে দুর্বল করে দেয়ার মারণাস্ত্র হলো তাকে বলা, ‘তুমি একটু বাড়াবাড়ি করছ’।
একে বলে গ্যাসলাইটিং। ১৯৩৮ সালে ‘গ্যাস লাইট’ শব্দটির প্রথম প্রয়োগ করেছিলেন এক স্বামী। নিজের কৃতকর্ম ও অপরাধ আড়াল করতে স্বামী উল্টো স্ত্রীকে দোষারোপ করে বলছিলেন, তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করছো।
যখন কোনো পুরুষ কোনো নারীকে এমন করে বলে, তখন সে আসলে নারীর অনুভূতির মূল্যায়ন করে না। এতে করে ওই নারী নিজেই নিজেকে নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়।
তাই এমন কথায় দমে যাওয়ার কারণ নেই। যদি মনের অস্বস্তি থেকে প্রতিক্রিয়া এসে থাকে, প্রশ্ন উঠে থাকে তাহলে নিজের উপর ভরসা ধরে রাখুন।
আমি তো তোমার জন্যই এসব করেছি …
সচতুরভাবে সব কৃতকর্মের দায় আপনার উপর চাপিয়ে দিতে কেউ বলবে, “আমি তো তোমার জন্যই এসব কিছু করেছি।”
এই কথায় সে বোঝাতে চায়, আপনার পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে সে অনেক বেশি জানে। শুধু তাই নয়, আপনি পছন্দ করবেন বলেই সে এসব করেছে। ফলাফল, সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী মেনে আপনি নিজেই নিজেই প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে যাবেন।
তাই যে কোনো পরিস্থিতি যদি আপনার বন্ধু, সঙ্গী, সতীর্থ একথা বলে বসে, তখুনি সতর্ক হয়ে বুঝে নিন আপনাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
কথা দিচ্ছি, আমি অবশ্যই নিজেকে পাল্টে ফেলব
আচরণে কোনো পরিবর্তন না এনে মুখে বুলি দিয়ে অনেকে আপনাকে শান্ত রাখতে চাইবে। কিছুদিন খেয়াল করতেই দেখতে পাবেন, এসব প্রতিশ্রুতি একেবারে ফাঁপা ছিল।
আপনি বড় বেশি আবেগপ্রবণ …
আপনার প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে সঠিক সমাধান না খুঁজে উল্টো আপনাকে বন্ধু, সহকর্মী, সঙ্গী বলে বসতে পারে, এসব বড় বেশি আবেগী আচরণ।
আপনি মনে গভীর আঘাত পেতে পারেন, এসব পরোয়া না করেই বলা হবে। তখনই সতর্ক হন। কারণ সামনের জন্য কৌশলী কথায় আসলে সব দোষ আপনাকেই দিতে চাইছে।
আপনার মগজে শুধু এসবই ঘুরপাক খায়
অনেক পরিস্থিতি অথবা কারও আচরণ আপনাকে ব্রিবত করতে পারে। কিন্তু তা বলতে গেলে, উল্টো কথা আপনাকেই শুনতে হবে।
এতে করে আপনি নিজেকে নিয়েও এবার অস্বস্তিতে ভুগবেন। এটাই হলো এ ধরনের কথা বলার সফলতা। তাই নিজের বিবেচনার উপর ভরসা রাখুন সবার আগে।
আমি তো মজা করছিলাম …
কৌতুক করা মানে কোনো কিছু নিয়ে মজা করা, যেন তা সবার কাছে উপভোগ্য হয়। কিন্তু এমন হতেই পারে, কারও কৌতুক ও ঠাট্টা আপনাকে বারবার অস্বস্তিতে ফেলছে।
আর আপনার অস্বস্তি দেখে অন্যজন তখন বলছে, “আরে! আমি তো মজা করছিলাম।”
এই কথার মধ্যে দিয়ে সে আসলে আপনার কৌতুক বোঝার অক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। অর্থ্যাৎ এও একভাবে আপনাকে অপমানিত করা।
আমি কখনই একথা বলিনি …
অস্বীকার করার মধ্যে দিয়ে সবচেয়ে বড় মনস্তাত্ত্বিক খেলা হয়। কেউ যখন বলে, ‘আমি কখনই এ কথা বলিনি’, তখন সে ব্যক্তিগত ফায়দা নেয়ার জায়গা সুরক্ষিত করতে চায়।
এভাবে বলার মধ্যে দিয়ে ঘটনার দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া হয়।
যদি আমাকে ভালোবাসো, তাহলে …
কেউ ভালোবাসা নিয়ে দরাদরি করলে তিনি আসলে সুযোগসন্ধানী। ‘যদি আমাকে ভালোবাসো’ বলে আপনাকে অনেক কাজ করতে দেবে না এই শর্ত সাপেক্ষে। আবার আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নেবে।