উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খাওয়া-দাওয়া করলেও ঈদের মতো উৎসবে সব নিয়মের একটু ব্যত্যয় হবেই। ঈদে বাড়িতে অথবা দাওয়াতে বন্ধু-স্বজনদের ‘এক টুকরো খেলে কিছু হবে না’ অনুরোধে টানা কয়েকদিন তেল-চর্বি-মশলা যোগে গরু-খাসির মাংস খাওয়া হয়েই যায়।
এমন সব কারণে যাদের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা আছে, তাদের ঈদের এই সময় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী ।
রক্তচাপের আবার নানা ধরন আছে। আদর্শ সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ মিলিমিটার মার্কারি কিংবা এরচেয়ে কিছুটা কম ধরা হয়; আর ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ গড়ে ৭০ থেকে ৮০।
কারও সিস্টোলিক চাপ সর্বোচ্চ ১২০ এমএম এইচজি থেকে কম এবং সর্বনিম্ন চাপ বা ডায়াস্টোলিক ৮০ থেকে কম হলে তার রক্তচাপ স্বাভাবিক রয়েছে।
যদি সিস্টোলিক ১২০ থেকে ১২৯ এমএম এইচজি থাকে এবং ডায়াস্টোলিক ৮০ এমএম এইচজি থেকে বেশি হয়, তাহলে তা হাইপারটেনশন পর্যায়।
যদি সিস্টোলিক হয় ১৩০ থেকে ১৩৯ এমএম এইচজি এবং ডায়াস্টোলিক হয় ৮০ থেকে ৮৯ এমএম এইচজি, তাহলে তা হাইপারটেনশনের স্টেজ ওয়ান।
সিস্টোলিক ১৪০ এমএম এইচজি বা এর থেকে বেড়ে গেলে এবং ডায়াস্টোলিক ৯০ এমএম এইচজি থেকে বেশি হলে রোগী হাইপারটেশন স্টেজ টু পর্যায়ে ভুগছেন।
যদি সিস্টোলিক ১৮০ এমএম এইচজি থেকে বেশি হয় এবং ডায়াস্টোলিক ১২০ এমএম এইচজি থেকে বেড়ে যায়, তাহলে এই পর্যায়কে বলে ‘হাইপারটেনশন ক্রাইসিস’।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ছাড়াও নানা ধরণের শারীরিক জটিলতার আশংকা থাকে।
রক্তচাপ কমাবেন যেভাবে
রক্তচাপ বেড়ে গেলে যদি অন্য কোনো শংকা দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে আগে।
শরীরে অন্য কোনো খারাপ লাগা বোধ না হলে, আগে বেড়ে যাওয়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিতে ঘরোয়া চেষ্টা করা যায়। অবশ্য এসব কৌশলও আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে রাখতে হবে।
যদি রক্তচাপ মেপে দেখে একটু বেশি মনে হয়, তাহলে হাতের সব কাজ বাদ দিয়ে একেবারে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। সব পেশি শিথিল করে গভীর করে দম নিতে হবে।
জবা ফুলের নির্যাসের চা খেলেও রক্তচাপ কমে স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। কেউ কেউ বলেন, বিটরুট ও আপেলের জুস রক্তচাপ কমাতে সহায়ক।
তবে এক গ্লাস স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি খেয়ে নিলেও শরীরের জন্য তা কাজে দেবে।
ঘরে ডার্ক চকলেট রাখার চেষ্টা করুন। রক্তচাপ খানিক বাড়তি মনে হলেই এক টুকরো ডার্ক চকলেট খেয়ে নিন। ডার্ক চকলেটের ফ্লাভোনয়েডস রক্তচাপ কমাতে কাজে দেয়। তেঁতুলের শরবতও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
ধীরে সুস্থে গোসল সেরে নিলে রক্তচাপ কমে আসে; শরীর ভারমুক্ত মনে হয়। তবে গোসলে গিয়ে সরাসরি মাথায় পানি ঢালা যাবে না। বরং আগে হাত-পা ও গায়ে খানিক পানি ঢেলে নিতে হবে।
রক্তচাপ নিয়মিত ভাবে বাগে রাখতে ওষুধ খেতে ভুলে গেলে চলবে না। সেই সঙ্গে জীবন যাপনের দিকে তাকাতে হবে। অর্থ্যাৎ সময় মতো ও পর্যাপ্ত ঘুম দিতে হবে। খাবারের তালিকায় পালং শাক, ব্রকলি, বাদাম, ডিম, মাছ থাকতেই হবে।
জাংক ফুড, তেলে ভাজা এবং সোডিয়াম বা লবণ বেশি দেওয়া খাবার অর্থ্যাৎ স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট থাকা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে সব সময়।
চিনিজাত কোমল পানীয় এবং কেক খাওয়া বাদ দিতে হবে শরীরের সুস্থতার জন্য।
ঘরে রক্তচাপ মেপে দেখার যন্ত্র রাখা ভালো। নিয়মিত রক্তচাপ মেপে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে অবগত থাকা জরুরি।