Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫

সম্পর্কে ধোঁকা হলে আগে মনের শান্তি ফেরান

breakup-290924
[publishpress_authors_box]

পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় ‘আন্টি অগ্নি’ হচ্ছেন পরামর্শদাতা। তার কাছে বেনামে চিঠি পাঠিয়েছেন এক নারী। লিখেছেন প্রেমে কীভাবে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো হয়েছে তাকে। ‘ফ্রড এলার্ট‘ ছদ্মনামে এই নারী আন্টিকে লিখেছেন –    

হাই আন্টি,

আমি ২৮ বছর বয়সের এক তরুণী। দুই বছর ধরে আমার এক চিকিৎসকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক। যে তখন যুক্তরাজ্যের পিল্যাবে কাজ করছিল। ও আমার সঙ্গে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করে। তারপর আমার নম্বর চায়। আমি ছয়-সাত বছর পর ওকে আমার নম্বর দেই।

আমরা দুজন নিয়মিত কথা বলা শুরু করি। একদিন জানতে চাইলাম ও এই সম্পর্ককে পরিণতি দিতে ভাবছে কি না। আরও বললাম, যদি মনে শক্তি থাকে তবেই এগোতে। নয়তো তার নিজের বা আমার কারোরই  সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই। কিন্তু সে কথা বলা বন্ধ করেনি আমার সঙ্গে। আর এভাবেই দুই বছর গড়িয়ে গেল।

আমি আবারও তাকে বিয়ের কথা বলি, তখন সে নিজের গল্প বলে। ওর বাবা-মা চায় কাজিনকে বিয়ে করতে। সে বলল, হয়ত আগামী তিন-চার বছরেও পরিবার তার বিয়ে ঠিক করবে না। সে আমাকে এতদিন আটকে রাখতে চায় না বলে জানালো। আমার নিজের জন্য ভালো হয় এমন যে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতেও বলল।

ইতোমধ্যে সে তার ভাইকে আমার সম্পর্কে জানায় এবং তাকে আমার উপর নজর রাখতেও বলে। তার ভাই আমাদের বাড়িতে এসে আমার ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্ব করে, ফোন নম্বর বাগিয়ে নেয়। ওর ভাই তাদের মাকে দিয়ে আমার মায়ের সঙ্গে কথাও বলে।

আমাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যে সে পাকিস্তান চলে আসে। আরেক মেয়ের সঙ্গে বাগদান হয় তার। মেয়েটি আমার সহকর্মী। আমরা একই জেলায় কাজ করছি। মেয়েটি অনেক সাধারণ।   

এখন আমার মনে হচ্ছে, ওই মেয়েটিকে আমার সাবেক প্রেমিকের সব ঘটনা খুলে বলি। কীভাবে ওই ছেলে দিনের পর দিন আমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা চালিয়ে গেছে, অথচ আমি দুর্বল হয়ে পড়ার পর সে নিজেই সটকে পড়েছে।

অনেকে কাছ থেকে পরে জেনেছি, ওই ছেলে আরও অনেক মেয়েকে এভাবে ধোঁকা দিয়েছে। এমনকি আমার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সময়ও সে আরও অনেক মেয়েকে প্রেমের জালে আটকে রেখেছিল। যে মেয়েটির সঙ্গে বাগদান হয়েছে, তার সঙ্গেও ওই সময় থেকে সম্পর্ক।

এখন আমার কী করা উচিত? আমার কি ওই মেয়েকে সব ঘটনা খুলে বলা দরকার? যদি বলতেই হয়, তাহলে কীভাবে আমি কথা এগোবো মেয়েটির সঙ্গে? আমি চাই না মেয়েটির সঙ্গে আমার পেশাগত সম্পর্কে কোনো টানাপোড়েন দেখা দিক।

ইতি
ফ্রড এলার্ট    

চিঠিতে তুলে ধরা পরিস্থিতির জবাব সবদিক ভেবেচিন্তেই দিয়েছেন আন্টি অগ্নি। ফ্রড এলার্টের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন –

প্রিয় ফ্রড এলার্ট,

আপনার সাবেক প্রেমিকের বাগদত্তাকে এখন সব ঘটনা জানিয়ে দেওয়ার পরের পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই কথা বলার আগে একবার নানা দিক থেকে বিষয়টি নিয়ে ভাবুন।

শুরুতেই নিজেকে প্রশ্ন করুন, কেন তাকে সব জানাতে চান আপনি? আপনার সহকর্মী মেয়েটিকে সতর্ক করতে চান ছেলেটির বিষয়ে? না কি ছেলেটি আপনাকে কষ্ট দিয়েছিল বলে?

যদি দ্বিতীয় কারণটি আপনার বেলায় সত্যি হয়, তাহলে পিছু হটতে হবে আপনাকে। বরং নিজেকে আগে সময় দিতে হবে এই বাজে অভিজ্ঞতা কাটিয়ে উঠতে। নিজের মনের শান্তির জন্য কখনও কখনও অনেক কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হয়।    

যেহেতু আপনি আর মেয়েটি একই কর্মক্ষেত্রে আছেন, তাই এখন কোনো কথা বলা মানে পেশাগত সম্পর্কে এর প্রভাব পড়বে। হয়তো আপনি তাকে সাহায্য করতেই সব কথা খুলে বলতে চান, কিন্তু তাতে দুজনেই পেশাগত ভাবে বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়বেন। বিশেষ করে এই সামাজিক কাঠামোতে সম্মান খুব বড় একটা বিষয়।

তাছাড়া মেয়েটি কীভাবে আপনার সব কথা মেনে নেবে তাও ভেবে দেখতে হবে। এমন তো হতেই পারে, সে আপনার কথা বিশ্বাসই করবে না। বিশেষ করে যেহেতু সে আপনাকে খুব গভীর ভাবে জানেও না। সে হয়তো আপনার কথায় ক্ষেপে যেতে পারে, আপনার উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এতে অফিসে আপনার কাজের পরিবেশ বিগড়ে যাবে।

যদি এসব ভেবে দেখার পরও আপনার মনে হয়, মেয়েটিকে সতর্ক করা জরুরি, তাহলে বেনামি বার্তা পাঠাতে পারেন তাকে। তবে আপনাকেও হুঁশিয়ার থাকতে হবে, এই বার্তা সে ভালো ভাবে নাও নিতে পারে। তাছাড়া মেয়েটি যদি পাঠানো চিরকুট কে পাঠাতে পারে সেসব খোঁজ করতে যায় তাহলে ঝামেলা বাড়বে।

তাই শুনতে কঠিন শোনালেও, কখনও কখনও পিছিয়ে আসাটাই সেরা সিদ্ধান্ত। আপনার সাবেক প্রেমিকের মতো অনেকেই আছে যারা সময়ে তাদের আসল রঙ দেখায়। ওই মেয়েটিকে এই অবস্থা থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আপনার নয়। এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখলে তুমি সামনে এগোতে পারবেন। আপনার মানসিক ও পেশাগত দিকের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

সবকিছু ভেবেচিন্তে কী করতে চান সে সিদ্ধান্ত এখন আপনারই হাতে। আমার একটাই পরামর্শ, নিজের মানসিক ও পেশাগত শান্তি নষ্ট হতে দেয়া ঠিক হবে না।   

ডনে প্রকাশিত দুই চিঠির শেষে রয়েছে একটি ডিসক্লেইমার। তাতে জরুরি বার্তা হিসাবে বলা হয়েছে, যদি কেউ অথবা কারও পরিচিত কোনো ব্যক্তি ভীষণ ভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন অথবা আত্মহত্যার কথা ভেবে থাকেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত