বন্ধু কিংবা আত্মীয়ের আমন্ত্রণ রক্ষা করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। ব্যক্তিগত অনীহা অথবা গুরুত্বপূর্ণ কাজ এ ক্ষেত্রে কারণ হতে পারে। আবার অফিসের কাজ শেষ করে রাতের নিমন্ত্রণে অংশ নেওয়া ভীষণ ক্লান্তিকরও ঠেকে অনেকের কাছে।
কিন্তু বিপত্তি বাঁধে ‘না’ বলায়। ইচ্ছে নেই ষোল আনা, অথচ হেসে হেসে রক্ষা করতে হচ্ছে আমন্ত্রণ। আবার না বলতে গিয়ে কেউ কেউ করে ফেলেন রূঢ় আচরণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইসব আচরণের পেছনে কাজ করে সামাজিক উদ্বেগ।
সাইকোথেরাপিস্ট ড. চাদনি তুগনাইটের মতে, সামাজিক উদ্বেগে ভোগা ব্যক্তিরা সম্পর্কের অবনতির কথা ভেবে এতই দিশেহারা হয়ে থাকেন যে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা নিমন্ত্রণ রক্ষা না করে পারেন না।
এই ধরনের মানসিক সংকটে ভোগা ব্যক্তিদের ‘না’ বলতে না পারার পেছনে কাজ করে আরও কিছু ভয়-
- নিমন্ত্রকারী হয়তো রেগে যাবেন এবং কষ্ট পাবেন
- নিমন্ত্রণকারীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হবে
- নিমন্ত্রণকারী বন্ধু অথবা আত্মীয় হয়তো সমালোচনা করবেন
- না বলাটা হয়তো ‘খারাপ’ শোনাবে অথবা স্বার্থপর ইমেজ তৈরি করবে
- সম্পর্কে দ্বন্দ্ব, সংঘাত এবং অস্বস্তির সৃষ্টি হবে
- ‘না’ বললে অপরাধবোধ, উদ্বেগ এবং আফসোস তৈরি হয়
সামাজিক অনুষ্ঠান বা আড্ডাও আমাদের সমৃদ্ধ করতে পারে। অবশ্য এটা নির্ভর করে আমন্ত্রিত অতিথি অথবা আড্ডায় উপস্থিত ব্যক্তিরা কেমন তার ওপর। তারপরও কোন কোন আড্ডা কিংবা অনুষ্ঠানে যাওয়ার অনাগ্রহ যে কারও হতেই পারে। ফলে সামাজিক উদ্বেগ ঠেকিয়ে কি করে অনাকাঙ্ক্ষিত আমন্ত্রণ ঠেকিয়ে দেওয়া যায় সে বিষয়ে ড. তুগনাইট দিয়েছেন কিছু পরামর্শ।
জেনে নেওয়া যাক সেগুলো-
নিমন্ত্রণে অনাগ্রহ দেখানোর অন্যতম সেরা তরিকা হলো কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আলাপ শুরু করা। এরপর অত্যন্ত বিনয় এবং ভদ্রতার সঙ্গে অপারগতার কথা জানানো।
আরও একটু ভালো উপায় হলো অপারগতার শুরুতেই ‘আমি’ ব্যবহার করা। যেমন- “ আমি আসলে যেতে পারছিনা কারণ…”। অপারগতার কারণ যদি হয় আমন্ত্রিতদের মধ্যেই অন্য কেউ তবে তার ব্যাপারে সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকুন।
নিমন্ত্রণে যাওয়ার অপারগতার কথা বলতে হয় স্পষ্ট ভাষায় এবং সংক্ষেপে। অজুহাত দেখানো থেকে থাকতে হবে বিরত।
অনেক সময় সরাসরি অপারগতা না দেখিয়ে বিকল্প কিছুর প্রস্তাব হতে পারে উত্তম উপায়। ডিনারে না-ই বা যাওয়া গেল, তবে কোন একদিন একসঙ্গে কফি খাওয়ার প্রস্তাব তো করাই যাই।
অপারগতা প্রকাশ করতে গিয়ে অবশ্যই বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত ব্যাখ্যা বেশিরভাগ সময়ই নিমন্ত্রণকারীর কাছে ‘বানোয়াট’ ঠেকতে পারে।
অপারগতা প্রকাশের শেষে অবশ্যই জানাতে হবে ইতিবাচক কিছু। দিতে হবে ধন্যবাদ। দেখাতে হবে খুশির প্রকাশ।
বিনয় প্রকাশ করে না এমন কিছু একেবারেই বলা যাবেনা।
অপারগতা জানাতে শরীরী ভাষা এবং গলার স্বরের করতে হবে যথাযথ ব্যবহার। গলার স্বরে থাকতে হবে কৃতজ্ঞতার ছাপ, শরীরী ভাষায় থাকবে বিনয়।