ফেইসবুকে সক্রিয় আছেন মানে রোজ দুচারটি করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসবেই। এরমধ্যে কারও সঙ্গে হয়তো পেশাগত কারণে বা কোনো আড্ডায় পরিচয় হয়েছে। কেউ আপনার বন্ধু তালিকায় অনেকদিন ধরেই বহাল আছে, তবু একই নামে নতুন করে খোলা আইডি থেকে রিকোয়েস্ট দেওয়া হয়েছে। আবার কোনো রকম চেনাজানা নেই এমন আইডি থেকেও অহরহ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট চলে আসে।
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো অনেক আইডি ঘুরে দেখা যায়, প্রোফাইল একেবারে লক করা। ফলে তাকে চিনে ওঠার কোনো সুযোগই থাকে না। আবার কোনো আইডিতে তেমন কোনো ছবি বা ভিডিও পোস্ট থাকে না, যা দেখে তাকে চেনা যায় অথবা সমমনা কি না তা ধারণা করা যায়।
ম্যাকাফি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ব্লগ পাতায় সাবধান করে বলা হচ্ছে, একবার ভুয়া আইডির খপ্পরে পড়ে গেলে হয়রানির সীমা থাকবে না।
২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দুই হাজার সাতশ ৬৫ কোটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ। গোটা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার সাড়ে তিনগুণ বেশি ভুয়া আইডি ছিল ফেইসবুকে।
গত বছর এক হিসাবে ফেইসবুক ধারণা করে প্রতি মাসে সক্রিয় থাকা ব্যবহারকারীর মধ্যে অন্তত চার থেকে পাঁচ শতাংশই নকল আইডি। ২০২৩ সালের শেষের দিকে ৩০০ কোটি ব্যবহারকারী ছিল ফেইসবুকে; তাহলে ধরে নেওয়া যায়, এরমধ্যে ভুয়া অ্যাকাউন্ট ১৫ কোটি।
ভুয়া অ্যাকাউন্ট কেন করা হয়?
সাইবার হ্যাকাররা ভুয়া অ্যাকাউন্ট দিয়ে অনেককে লক্ষ্যবস্তু করে। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে বোকা বানিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হলো এদের কাজ। অনেকের কাছে অর্থও হাতিয়ে নেওয়া হয়। অনেক ফলোয়ার থাকা অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে নাম পাল্টে চড়া দামে বিক্রিও করা হয়।
ফেইসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট চেনার উপায় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুয়া অ্যাকাউন্ট দুই ভাবে পরিচালিত হতে পারে; ওয়েব রোবট দিয়ে এবং কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষ দিয়ে। যেভাবেই অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা হোক, ফেইসবুকে এসব ভুয়া আইডির কিছু বিশেষ ধরন থাকে।
নারীর প্রোফাইল ছবি
বট, স্ক্যামার অথবা দুষ্টুবুদ্ধির মানুষ পরিচালিত ভুয়া ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে নারীর ছবি দেওয়া থাকে। অনেকে পুরুষের ছবিও ঝুলিয়ে রাখেন এ ধরনের অ্যাকাউন্টে। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো নারী-পুরুষকে সহজে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা থাকে এতে। অনেকেই এমন ফাঁদে পা দিয়ে অচেনা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টে সাড়া দিয়েও বসেন।
মনে রাখবেন, আসল ছবি সাধারণত নিখুঁত হয় না। এরপরও যাচাই করার ভালো পথ আছে; গুগল ইমেজ দিয়ে ওই ছবির তথ্য খুঁজে নিন আগে।
তবে এখন অনেকে এআই দিয়ে আকর্ষণীয় ছবি বানিয়ে নিচ্ছে। এসব ছবি যাচাই করা প্রাথমিক ভাবে সহজ হয়ে ওঠে না।
প্রোফাইলে পোস্ট কম
সাধারণত বট ও স্ক্যামার চালিত অ্যাকাউন্ট থেকে খুব বেশি পোস্ট, ছবি, ভিডিও দেখা যায় না।অথচ কোনো প্রকৃত আইডি ঘুরে এলে তাতে ব্যক্তিগত ছোঁয়া পাওয়া যায়।
অনেকের টাইম লাইন একেবারে খালি থাকে; এমন দেখলে ওই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট থেকে সাবধান থাকুন।
বন্ধু তালিকায় অতিরিক্ত আইডি
ভুয়া অ্যাকাউন্টে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, ভুরি ভুরি বন্ধু যোগ করা থাকে। এতে করে কমন ফ্রেন্ড বেশি হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়; যে কারণে অনেকে বিশ্বাস করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টে সাড়া দিয়ে বসেন। আবার অনেক অ্যাকাউন্টে দেখা যায়, শুধু নারী আইডি দিয়ে ঠাসা। এমন হলে তখনই সতর্ক হতে হবে। অনেক ভুয়া আইডিতে বন্ধু তালিকা গোপন রাখা হয়।
খালি অথবা অদ্ভুত বায়ো
যদি অপরিচিত কোনো অ্যাকাউন্টের বায়ো পড়ে উদ্ভট ও অতিরঞ্জিত মনে হয় অথবা বায়োতে কিছুই লেখা না থাকে তাহলে এমন আইডিতে সাড়া না দেওয়াই নিরাপদ।
মেসেঞ্জারে সাড়া নেই
বট চালিত অ্যাকাউন্টগুলো সাধারণত মেসেঞ্জারে সাড়া দেয় না। তাই যাচাই করে দেখার সময় মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়ে দেখুন উত্তর মেলে কি না।
ফেইসবুকে নাম ও ইউআরএল ভিন্ন
অ্যাকাউন্টে ডিসপ্লে নাম যা দেখাচ্ছে, তা যদি ইউআরএলের সঙ্গে না মেলে তবে আরেকবার সতর্ক হতে হবে।
ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে নিরাপদ থাকার উপায় কী?
প্রথমত, সন্দেহভাজন কোনো অ্যাকাউন্ট বন্ধু তালিকায় রাখা যাবে না। সাবধান থাকতে, এ ধরনের অ্যাকাউন্ট নিয়ে ফেইসবুকে রিপোর্ট করে দিতে হবে।