সোশাল মিডিয়াতে দেশ-বিদেশের বিশেষ মুহূর্তে এবং বিশেষত কোনো সংকটকালে হাজারো পাল্টাপাল্টি তথ্য দেখে ক্লান্তি ও বিভ্রান্তি চলে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেকেই তখন ভাবেন, কোনটা রেখে কোনটা বিশ্বাস করবেন?
গুজব যাচাই করার উপায় ও অভ্যাস নিয়ে ১০টি পরামর্শ দিয়ে থাকেন সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্কের গ্রাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজমের সহকারী অধ্যাপক ও প্রধান গ্রন্থাগারিক বারবারা গ্রে।
খুঁতখুঁতে হতে হবে
সোশাল মিডিয়াতে কোনো কনটেন্ট, ভিডিও, ছবি খবরের লিংক চট করে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন সাংবাদিকরা আগে ধরে নেন তারা ভুল; এরপর তথ্য-প্রমাণ একাট্টা করে সিদ্ধান্তের দিকে পৌঁছান।
যাচাই করার অভ্যাস
যে দেশেই বাস করুন না কেন, সত্য যাচাই করা নাগরিক হিসাবে একজনের বড় দায়িত্ব। কারণ অসত্য তথ্য বিভাজন গড়ে তোলে এবং তাতে সমাজ ও দেশে দেখা দিতে পারে বড় রকমের বিশৃঙ্খলা। তাই সব সময় যাচাই ছাড়া কোথায় কিছু শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার অভ্যাস ধরে রাখতে হবে।
নিজেকে প্রশ্ন করুন
কোনো ছবি দেখে, লেখা পড়ে অথবা ভিডিও দেখে আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন। বক্তা বা লেখক কে? তারা কী সুপরিচিত? তাদের বিশ্লেষণ কী গ্রহণযোগ্য? তারা একপাক্ষিক বক্তব্য নিয়ে হাজির হচ্ছে না তো? বক্তা বা লেখক সম্পর্কে খোঁজ করুন। খবরের বেলায় খেয়াল করতে হবে, ওই তথ্য কোনো গ্রহণযোগ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে কি না। খবরে বর্ণনায় অতিরঞ্জন আছে কি না তাও ভাবার বিষয়। গুজব মেশানো লেখা সাধারণত অনেকখানি বাড়িয়ে লেখা হয়। এই খবর বা কনটেন্টের বিরোধীতা করে নির্ভরযোগ্য কেউ পাল্টা বক্তব্য রেখেছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে।
শুকে দেখুন
খবর বা কনটেন্ট কি বিশ্বাস করার মতো নয়? যাচাই ছাড়া এখানে আর কোনো সমাধান নেই।
সূত্র খুঁজুন
খবর, কনটেন্ট, ছবি এবং ভিডিওতে কি তথ্যসূত্র স্পষ্ট করে বলা আছে? তারিখ, স্থান, নাম ইত্যাদি দেখে নেওয়া খুব জরুরি। ওই তথ্যসূত্রে সরাসরি গিয়ে দেখে নিতে হবে উপস্থাপনায় কোনো গড়মিল আছে কি না।
সচেতন থাকুন
তথ্য-প্রমাণ খোঁজ করার পরেই ওই খবর ও কনটেন্টে ভরসা করার মতো সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে নিজের মধ্যে।
কনটেন্ট কি রাগিয়ে তুলছে অথবা আবেগ তাড়িত করছে?
উড়ো খবর ও গুজব সাধারণত আপনার আবেগ নিয়েই খেলা করে। ফলে এসব দেখে বা পড়ে আপনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। আর এখানেই সচেতন হয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে নিজেকে।
অনুসন্ধানী হয়ে উঠুন
নিজেকে তত্ত্বতালাশ করার মানসিকতায় অভ্যস্ত করে তুলতে হবে ধীরে ধীরে। কিছু পড়ার সময় সন্দেহজনক অংশে দাগ দিয়ে রাখুন। প্রয়োজনে কাগজে প্রিন্ট আউট করে তারপর সত্য ও মিথ্যা মনে হওয়া তথ্যে গোল দাগ দিন। জোরে জোরে পড়ে দেখতে পারেন। কোথাও খটকা লাগলে থামুন। কিছু বিশেষ ভুলে নজর রাখুন; যেমন – নাম, শিরোনাম, জায়গার নাম, পরিসংখ্যান, সময়, দূরত্ব, শারীরিক বর্ণনা সঠিক ভাবে আছে কি না। ‘একমাত্র’, ‘প্রথম’, ‘সর্বোচ্চ’ এমন বিশেষণ কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে নজর দিন।
যাচাই করবেন কোথায়
প্রাথমিক ভাবে সরকারি প্রতিবেদন, ওয়েবসাইটে তথ্য মিলিয়ে দেখুন। আদালতের প্রতিবেদন-রায় পড়ে দেখুন। মূল গবেষণা প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের ডেটাবেজ থেকেও তথ্য নেওয়ার সুযোগ থাকলে তা যাচাই করে নিন। কোনো বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া অবশ্যই কাজে দেবে এসব ক্ষেত্রে। পাশাপাশি অনলাইনে ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইটে সম্পুরক বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন থাকলে পড়ে নিন।
শেষ কথা
সব সময় তথ্যসূত্র দিন এবং তথ্য লেনদেনে স্বচ্ছ থাকুন।