হেলমেট মাথায় পরে থাকা সহজ কোনো কথা নয়। গরমে মাথা ঘেমে যায়, চুল এলোমেলো হয়ে যায়। এসব উছিলায় রোলার স্কেটিং, বাইসাইকেল এবং মটর সাইকেল চালাতে গিয়ে হেলমেট পরায় অনীহা দেখান অনেকে।
কিন্তু নিকল প্রাইমারি কেয়ার স্পোর্টস মেডিসিন স্পেশালিস্ট নিকল বনিকুইট লেভি হুঁশিয়ার করেই বলছেন, কোনো উছিলা দিয়ে এই সুরক্ষা কবচ এড়িয়ে চলাকে যৌক্তিক বলার সুযোগই নেই।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, সড়কে দুর্ঘটনা থেকে মাথায় বিপৎজনক আঘাত থেকে সুরক্ষা দিতে পারে হেলমেট।
তবে যে কোনো হেলমেট পরে নিজেকে নিরাপদ বলে ধরে নেওয়া হবে আরও
সব হেলমেট এক নয়
বাজারে আসলে নানা রকম হেলমেট কিনতে পাওয়া যায়। দাম ও নকশার ভিন্নতায় এর কার্যকারিতার মানও ভিন্ন। হেলমেট সাধারণত সড়ক দুর্ঘটনা ও কিছু কিছু খেলার সময় নিজেকে শারীরিক ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পরা হয়। তাই কাজের ধরন অনুসারে হেলমেট বাছাই করতে হবে। এ নিয়ে লেভির পরামর্শ হলো, হেলমেট কেনার আগে ব্যবহারবিধি ভালো মতো পড়ে নিতে হবে।
সঠিক মাপের হেলমেট
হেলমেট ঢিলা হলে উল্টো দুর্ঘটনার সময় ক্ষতির পরিমাণ বেশিই হতে পারে। তাই দোকানে হেলমেট কেনার সময় আগে পরে দেখুন স্বস্তি মিলছে কি না। হেলমেট অবশ্যই মাথায় ঠিক মত বসে থাকা জরুরি। হেলমেট হেলে মাথার পেছনে চলে গেলে তা সঠিক মাপ নয়। বেশি ঢিলেঢালা হেলমেট নিলে তা মাথায় পরার পর এদিকসেদিক নড়াচড়া করতে থাকে। এরকম মাপের হেলমেট কেনা ঠিক হবে না।
শিশুদের হেলমেট আলাদা
শিশুরা হেলমেট পরা এড়াতে নানা তালবাহানা করবেই। অভিভাবকদের এখানে খুব স্পর্শ নিয়ম বেঁধে দিতে হবে।
হেলমেট পরায় অভ্যাস গড়ে তোলা ছাড়া শিশুদের হাতে দ্বিতীয় কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না। যদি তারা হেলমেট পরতে রাজি না হয়, তবে মটর বাইকে শিশুদের নেওয়া ঠিক হবে না। শিশুরা অবশ্যই বড়দের নয় বরং তাদের জন্য বানানো বিশেষ হেলমেটই পরবে।
সন্তানের পোশাক একটু বড় দেখে কেনা যেতেই পারে; কিন্তু হেলমেট কেনার বেলায় এই সূত্র কাজ করে না। শিশুর মাথার মাপ অনুসারে হেলমেট কেনা জরুরি। প্রয়োজনে দোকানে গিয়ে শিশুকে একাধিক হেলমেট পরিয়ে দেখে নিতে হবে। যে কোনো দুর্ঘটনায় বড় ক্ষতি এড়াতে শিশুর কপাল ঠিক মতো ঢেকে রাখে এমন হেলমেট বাছাই করা আবশ্যক।
আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস বলছে, এক বছরের কম বয়সী শিশুদের কখনই বাইসাইকেলে চড়ানো ঠিক নয়।
“বাচ্চাদের সাইসাইকেলে নেওয়া একেবারেই নিরাপদ নয়। হাড় ও পেশি সুগঠিত না হওয়াতে একেবারে শিশু বয়সীরা সঠিক ভাবে বসে থাকতে পারে না। তাছাড়া এই বয়সী শিশুদের ঘাড় এমনকি হালকা হেলমেটের ভার নেওয়ার মতোও সুগঠিত নয়”, বললেন লেভি।
হেলমেট আজীবনের জন্য নয়
ধরন বুঝে হেলমেটের কার্যকারিতায় ফারাক রয়েছে। বাইসাইকেল চালকের জন্য বানানো হেলমেটের ফোম ফুটপাতে একবার পড়ে গেলে সেই আঘাত সামলাতে পারে। তাই বাইরে থেকে ক্ষতি বোঝা না গেলেও একবার ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলে নতুন হেলমেট কেনা দরকার।
ফুটবল ও হকি খেলার সময়ও হেলমেট পরেন খেলোয়াড়রা। এসব হেলমেট অবশ্য একাধিক মাঝামাঝি পর্যায়ের আঘাত সামলাতে পারে। এরপরও যদি বড় কোনো ধাক্কা লাগে তাহলে এই হেলমেট বদলে নিতে হবে। আর যদি হেলমেটের কোথাও ফাটল দেখা যায়, তাহলে ওই হেলমেট কোনোভাবে পরা যাবে না।
হেলমেটই শেষ কথা নয়
মনে রাখতে হবে হেলমেট পরার পরেও দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত লাগতে পারে; সবাইকে সতর্ক করতে এ কথা বলছেন লেভি।
আর তাই মটর সাইকেল বা বাইসাইকেল চালাতে গিয়ে সড়কের নিয়ম মেনে চলা ছাড়া বিকল্প নেই। বাহনের গতি সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং ট্রাফিক সিগনাল মেনে চলতে হবে।
“বড় গাড়ি, পথচারী, পথের আশেপাশে ছুটোছুটি করা প্রাণি, উঁচুনিচু ফুটপাত এমন সবকিছুতে বিশেষ নজর দিতে হবে যে কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে।”