শরীর ও মুখের অবাঞ্ছিত লোম নিয়মিত সাফ রাখতে গিয়ে বেশ সময় দিতে হয়। প্রতিবার কী উপায়ে লোম দূর করবেন তা সিদ্ধান্ত নেওয়াও এক ঝক্কি।
যারা শরীরে ও মুখে অবাঞ্ছিত লোমের অস্তিত্বকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিচ্ছেন, তাদের সাধুবাদ। কিন্তু অনেকেই চান এই লোম দূর করতে।
এখন বাজারে অনেক সমাধান হাতছানি দেবে আপনাকে; সব উপায়েরই রয়েছে কিছু সুবিধা ও কিছু অসুবিধা।
সেলুনে ওয়্যাক্সিং করানো হয়; যা কারও কারও কাছে অস্বস্তিকর। আবার যদি শেভ করা হয়, তবে দ্রুতই লোম গজিয়ে যায়।
এসবের মধ্যে লেজার দিয়ে একেবারে অথবা দীর্ঘদিনের জন্য লোম তুলে ফেলা অনেকের মনঃপুত উপায় হয়ে উঠেছে।
অবাঞ্ছিত লোম দূর করার নানা উপায়ের ভালো-মন্দ দিক নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ইন্ডিয়া টুডে; যেন আপনি খুব সহজেই নিজের জন্য উপযোগী উপায়টি বেছে নিতে পারেন।
ওয়্যাক্সিং
“ত্বকে আঠালো মিশ্রণ মাখানো হয়, যা হাত-পায়ে গজানো চুলের সঙ্গে লেপ্টে যায়। ওই আঠালো মিশ্রণ টেনে তুলে নেওয়ার সময় গোড়া থেকে অবাঞ্ছিত চুল উঠে আসে। এতে করে দীর্ঘসময় অবাঞ্ছিত লোমমুক্ত মসৃণ ত্বক ধরে রাখা যায়।”
নয়ডা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের মেডিকেল সায়েন্সের ডার্মাটোলজিস্ট রিষব রাজ শর্মা লোম তুলে ফেলার জনপ্রিয় ওয়্যাক্সিং পদ্ধতি নিয়ে এভাবেই জানালেন।
ওয়্যাক্সিং দুই রকমের হয়। সফট ওয়্যাক্স পদ্ধতিতে একটি কাপড় বা এক ধরনের কাগজ ত্বকের ওয়্যাক্স স্তরের উপর চেপে চেপে বসিয়ে তারপর টেনে তোলা হয়। আর হার্ড ওয়্যাক্স পদ্ধতিতে কোনো কাপড় বা বিশেষ কাগজ ছাড়াই ত্বকের উপর থেকে ওয়্যাক্সের স্তর তুলে ফেলা হয়।
গুরুগ্রামের সিকে বিড়লা হসপিটালের কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিস্ট সিমা ওবেরয় লাল মনে করেন, ওয়্যাক্সিং হলো দ্রুত সমাধান। একবার ওয়্যাক্সিং করালে আবারও চুল গজাতে সময় নেয় অনেকদিন।
“কেউ কেউ মনে করেন, কাপড় দিয়ে ওয়্যাক্সের স্তর টেনে তোলার সময় মরা চামড়াও উঠে আসে। এতে ত্বক আরও চকচকে দেখায়।”
“নিয়মিত ওয়্যাক্সিং করানো হলে ত্বকে গজানো চুলের ফলিকল দুর্বল হয়ে আসে। এতে করে অবাঞ্ছিত লোম পাতলা হয়ে আসে।”
তবে অনেকের কাছে ওয়্যাক্সিং করানোর মুহূর্তটি খুব ভয়ের। এমনকি নিয়মিত ওয়্যাক্সিং করান এমন অনেকেও কাপড় দিয়ে ত্বক থেকে ওয়্যাক্স টেনে তোলার সময় চোখ বন্ধ করে থাকেন।
ওয়্যাক্সিং করানোর পর হাত-পায়ের ত্বক দেখতে যতই মসৃণ মনে হোক, অনেকের ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে। কারও কারও ত্বকে চুলকানিও দেখা দিতে পারে।
যদি ওয়্যাক্সিং করানোর উপকরণ মানসম্মত না হয়, তাহলে কারও কারও এলার্জি দেখা দিতে পারে।
ভালো মানের ওয়্যাক্সিং করাতে গেলে খরচ হবে একটু বেশি। বাজারে কিছু পণ্য পাওয়া যায়, যা দিয়ে ঘরেও ওয়্যাক্সিং সেরে নেওয়া যায়; যদিও তা ভালো সেলুনে গিয়ে ওয়্যাক্সিং করানোর মতো নাও হতে পারে।
শেভ করা
অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে সহজ ও কম খরচের একটি উপায় হলো রেজর দিয়ে ত্বকের উপর থেকে লোম সাফ করে ফেলা।
এতে ত্বকের মরা চামড়াও পরিস্কার হয়ে যায়। তবে স্পর্শকাতর ত্বক হলে তাদের চুলকানি, লাল হয়ে যাওয়া সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বাড়িতেই নিজে নিজে শেভ করা সম্ভব। শেভ করতে ব্যথাও হয় না সাধারণত।
তবে শেভ করা মানে যেহেতু ত্বকের উপর থেকে চুল সাফ করে ফেলা, তাই ভেতর থেকে দ্রুত নতুন লোম গজাবেই। যদি রেজরে ধারালো ব্লেড না থাকে তাহলে চাপ দিয়ে লোম কাটার সময় ত্বক কেটে যেতে পারে। আবার ধারালো ব্লেড দিয়ে শেভ করার সময়ও ত্বক কেটে যেতে পারে।
লেজার চিকিৎসা
লেজার রশ্মি ফেলে ত্বকের তলে লোম গজানোর প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে দেওয়া যায়। এতে পরে আর লোম গজাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাদের গায়ের রঙ ফর্সা এবং ঘন কালো লোম আছে তাদের বেলাতে লেজার চিকিৎসা কার্যকর হয়ে ওঠে। কারণ তখন সহজেই লোমের গোড়ায় গোড়ায় খেয়াল করে রশ্মি ফেলা যায়।
লেজার চিকিৎসায় লোম গজানো কমিয়ে আনা যায়। অথবা লোম গজানোর প্রক্রিয়া একেবারে বন্ধও হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ বলেন, লেজার ভালো কাজে দিলেও লোম একেবারে নির্মূল করা সম্ভব হয় না।
তাছাড়া একাধিক সেশন নিতে হয় লেজার চিকিৎসায়; কখনও কখনও ছয় থেকে আটটি সেশনের দরকার হয়।
লেজার করানোর পর কার্যকারিতা বুঝতেও কয়েক সপ্তাহ লেগে যায়। উপরন্তু লেজার করানো মানে খরচ একটু বেশিই হয়ে যায়।
কারও কারও বেলায় লেজারের পর ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে।
এপিলেশন
ভারতের গোয়াতে মানিপাল হসপিটালের ডার্মাটলোজিস্ট ও কসমেটলোজিস্ট সিমান্তিনি আর সাখারদান্দ জানালেন, ওয়্যাক্সিংয়ের মতোই লোম টেনে তোলার একটি পদ্ধতি হলো এপিলেশন।
এতে এপিলেটর দিয়ে, প্লাক করে বা থ্রেডিং করে লোম তুলে ফেলা হয়।
শেভ করার চেয়ে এপিলেশনে বেশি দিন লোমমুক্ত থাকা যায়। তবে স্পর্শকাতর ত্বক হলে তারা এপিলেশনের সময় ভীষণ অস্বস্তি বোধ করতে পারেন।
চিকিৎসক শর্মা বলেন, “এপিলেশনে একেবারে গোড়া থেকে লোম তুলে ফেলা হয়, তাই টানা কয়েক সপ্তাহ আর লোম গজানোর ঝামেলা থাকে না।”
লোম দূর করার ক্রিম-পাউডার
চিকিৎসক লাল জানালেন, ক্রিম ও পাউডার দিয়ে লোম নির্মূল করা যায়।
“এ ধরনের ক্রিম-পাউডারে এক ধরনের এনজাইম মেশানো থাকে। শেভ করা মানে ত্বকের উপর থেকে লোম কেটে ফেলা। কিন্তু ক্রিম-পাউডার ত্বকের উপর লোম আলগা করে দেয়। এরপর মুছে নিলেই হলো।”
লোম তুলে ফেলার ক্রিম-পাউডার পণ্যে ক্যালসিয়াম থিওগ্লািইকোলেট অথবা পটাসিয়াম থিওগ্লাইকোলেট থাকে। এ কারণে চুলের ফলিকল ত্বকের উপর আলগা হয়ে আসে, বললেন চিকিৎসক শর্মা।
ক্রিম ও পাউডার দিয়ে লোম তুলে নেওয়ার সময় কোনো ব্যথা হয় না। ত্বক দেখতে অনেক মসৃণ দেখায়। যদিও অবাঞ্ছিত লোম দ্রুতই গজিয়ে উঠবে।
আবার ক্রিম ও পাউডার মানে এতে কেমিকেল আছে; তাই অনেকের ত্বকে এলার্জি, লাল হয়ে যাওয়া সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এতো এতো উপায় থেকে অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে কোনটি বেছে নেওয়া যায়?
চিকিৎসক শর্মা বললেন, “নিজের আরাম অনুযায়ী কোনো একটি সমাধান বেছে নেওয়া যেতে পারে।”
আর সাখারদান্দ মনে করেন, “লেজার চিকিৎসা আসলে সেরা উপায়। কারণ এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম এবং দীর্ঘমেয়াদে লোমমুক্ত থাকা যায়। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ মত নিয়েই লেজার সেবার কথা ভাবা যেতে পারে।”
একই কথা বললেন চিকিৎসক লাল।
“যদি অবাঞ্ছিত লোম ঘন হয় ও দ্রুত গজায় তাহলে লেজার ছাড়া আর কোনো উপায় কাজে দেবে না।”
আর কেউ যদি লোম তুলে ফেলতে ক্রিম ব্যবহার করতে চায়, তাহলে আগে অবশ্যই ত্বকে সামান্য লাগিয়ে দেখতে হবে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না।