Beta
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

বেশি ভাবতে থাকা আটকাবেন কীভাবে

Overthinking
[publishpress_authors_box]

ঠান্ডা মাথায় যারা চিন্তা করতে পারেন তারা নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। এমন ব্যক্তিরা খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্তে। কিন্তু সবাই কি তা পারেন?

অনেকেই আছেন যাদের চিন্তার ট্রেন যেন চলতেই থাকে। এর যেন নেই কোন থামাথামি। এটা অনেকটা ব্রাউজিং করতে গিয়ে একসঙ্গে অনেকগুলো ট্যাব খুলে রাখার মতো।

যারা চিন্তার এই রাশ টেনে ধরতে পারেন না তাদের বলা হয় ‘ওভারথিংকার’।

মনোবিদরা বলছেন, ‘ওভারথিংকিং’ বা একটি বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর।

মুম্বাই ভিত্তিক থেরাপিস্ট এবং কাউন্সেলর ড. রোশান মানশুখানির মতে, ‘ওভারথিংকিং’ প্রত্যয়টি দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।

তিনি বলেন, “মানুষ চিন্তা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জীবনের ইঁদুর দৌড় আমাদের ভেতরে ওভারথিংকিং প্রবণতা তৈরি করে। আমরা ব্যর্থতা ভয় পাই, ভয় পাই হতাশা। সবসময় জিততে চাই বলে আমাদের চিন্তা সবসময়ই কোন একটা বিষয় নিয়ে ঘুরপাক খেতে থাকে। এটা নিরাপত্তাহীনতা থেকে হতে পারে।”

ইভলভ নামের একটি হেলথ টেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান মনোবিদ এবং গবেষক ড. শুক্রিতি রেক্স ওভারথিংকিং-কে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে- “কোন একটি চিন্তা নিয়ে সারাদিন পরে থাকা আর ওটা নিয়ে নানা আকাশকুসুম ভাবা হলো ওভারথিংকিং। যা কিনা উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ তৈরি করে। সমস্যার সমাধান করতেই কিংবা নেতিবাচক ফলাফল এড়াতেই কেউ ওভারথিংকিং শুরু করে কিন্তু হিতে বিপরীত হয়।”

মনোবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষের শারীরিক এবং মানসিক চাপের অন্যতম কারণ হলো এই ‘ওভারথিংকিং’। যাকে বাংলায় আমরা দুশ্চিন্তাও বলতে পারি।

কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর এমনকি নিজের ‘ওভারথিংকিং’ প্রবণতা কাজের সুন্দর পরিবেশে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। নষ্ট করতে পারে কাজের আনন্দ। ড. শুক্রিতি রেক্স এমন কিছু আচরণিক বৈশিষ্ট্যের কথাই জানিয়েছেন।

তার মতে, বেশি ভাবা ব্যক্তিদের রয়েছে সুনির্দিষ্ট আচরণিক প্যাটার্ন। যার মধ্যে রয়েছে অনিশ্চিয়তা নিয়ে ভাবতে থাকা এবং সম্ভাব্য সব ধরনের ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে খুঁটিনাটি চিন্তা করতে থাকা।

তিনি আরও মনে করেন, এই ধরনের ব্যক্তিদের সব কিছু পারফেক্ট করতে চাওয়ার প্রবণতা প্রবল। ব্যর্থতার প্রবল ভয় তাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে রাখে। পাশাপাশি যারা ওভারথিংকার তাদের আত্মমর্যাদা বোধ কমে যেতে পারে। কারণ এ ধরনের ব্যক্তিরা নিজেদের কাজের ওপর আস্থা কম রাখেন।

সময়ের সাথে সাথে, এইসব আচরণ অভ্যাসে পরিণত হয়। ব্যক্তি যে-কোন কাজ বা দায়িত্বের প্রতিক্রিয়ায় খুঁটিনাটি চিন্তায় অতিরিক্ত মনোনিবেশ করতে থাকেন।

কিন্তু ওভারথিংকিং প্রবণতার কারণে কি অন্যান্য মানসিক এমনকি শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারে। ওভারথিংকিং প্রবণতার কারণে উদ্বেগজনিত সমস্যা, বিষণ্ণতা এবং শুচিবায়ুগ্রস্ততার মতো জটিল মানসিক সমস্যার জন্ম হতে পারে।

এ বিষয়ে ডঃ কৃতীশ্রী এসএস বলছেন, কোন ব্যক্তি যখন কাজের ফলাফল নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনা করেন তখন তার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নিজের ব্যাপারে হতাশাবাদী মানসিকতা গড়ে ওঠে।

কৃতীশ্রী আরও বলেন, ওভারথিংকিং এর সঙ্গে দীর্ঘদিন বসবাস করা ব্যক্তিরা প্রায়ই মাথা, কাঁধ এবং পিঠের নিচের অংশে ব্যথার কথা বলেন। পাশাপাশি তাদের বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ঘাম, উচ্চ রক্তচাপ, বুকে ব্যথা এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বল্পতার সমস্যায়ও ভোগেন।

তাহলে এই ওভারথিংকিং দশা থেকে মুক্ত হবার উপায় কী?

উপায় তো নিশ্চয়ই আছে। বিশেষজ্ঞতার মতামতের ভিত্তিতে তেমন কিছু সমাধান জেনে নেওয়া যাক-

মনে রাখতে হবে ঠিক কখন ওভারথিংকিং প্রবণতা তৈরি হচ্ছে এবং কিভাবে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই নেতিবাচক চিন্তাকে যৌক্তিক চিন্তা দিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে হবে যাতে মাথায় নেতিবাচকতা একেবারেই জায়গা না পায়।

মনোযোগ নিবদ্ধ রাখতে হবে বর্তমানের দিকে। অতীত নিয়ে দীর্ঘশ্বাস কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ, কোনটিকেই মনে স্থান দেওয়া যাবেনা। এর পাশাপাশি যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হবে। ওই সময়ের বাইরে সমস্যা নিয়ে চিন্তিত হওয়া একেবারেই বাদ দিতে হবে।

মনকে প্রফুল্ল রাখে এমন কাজে সময় দিতে হবে। পছন্দের মানুষদের সঙ্গে কাটাতে হবে সময়। নিজের শখের ব্যাপারে হতে হবে মনোযোগী। এতে করে ওভারথিংকিং বা দুশ্চিন্তাকে এক পাশে সরিয়ে রাখা যাবে। যা কখনোই সমাধানযোগ্য নয় তা মেনে নিয়ে বরং সমাধানযোগ্য বিষয় নিয়ে কার্যকর চিন্তা ভাবনাকে উৎসাহিত করতে হবে।

কোনভাবেই যদি ওভারথংকিং প্রবণতা দূর না হয় তবে ঘনিষ্ঠ বন্ধু, পরিবারের সদস্য এবং বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত