খাবারের পাতে কী আছে এ নিয়ে আজকাল সকলেই কম বেশি সতর্ক। এটা অবশ্যই বেশ ইতিবাচক একটি ব্যাপার। কী খাচ্ছি সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া তো সকলেরই প্রয়োজন। কিন্তু ‘কী’ খাচ্ছি এই ধাপের পরই গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘কীভাবে’ তা খাচ্ছি।
যথাযথ মনোযোগ দিয়ে খাদ্য গ্রহণ শরীরের পুষ্টির জোগান ও যথাযথ হজমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারও করেন পুষ্টিবিদরা। পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে খাদ্য গ্রহণের এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘মাইন্ডফুল ইটিং’।
লাইফস্টাইল প্রশিক্ষক এবং ইয়োগা ট্রেইনার লক্ষীকা বৈদ্য বলেন, “যখন আমরা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে খাবার সঠিকভাবে চিবিয়ে খাই, এবং কতটুকু প্রয়োজন তার উপর মনোযোগ নিবদ্ধ করি তখন আমরা অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে পারি।”
তিনি আরও বলেন, “ খাওয়ার সময় পুরো মনোযোগ খাবারের দিকে দিতে হবে। খাওয়ার সময় ফোন, টিভি এবং ল্যাপটপে যেন কোনভাবেই মনযোগ না দেই।”
খাবার নিয়ে ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব পড়ে তার আচরণে। নেতিবাচক আবেগ এবং উদ্বেগের মতো অনুভূতি যখন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে, তখন খাবার খাওয়ার ধরনেও তার ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এমন অবস্থায় খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস হয়ে পড়ে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। তাই সুষম খাদ্য গ্রহণের সঙ্গে মানসিক অবস্থার একটি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে।
এই বিষয়ে লক্ষীকা বলছেন, “যে ধরনের মানসিক অবস্থা নিয়ে আমরা খাবার খাই, তা হতে পারে রাগ কিংবা দুঃখ, এই ধরনের অনুভূতি শরীরে সঠিক এনজাইম এবং হরমোন তৈরিতে বাঁধাগ্রস্থ করে। ফলে খাদ্যের পুষ্টি শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয়না।”
লক্ষীকা বৈদ্য মনে করেন খাদ্যগ্রহণের সেরা অভিজ্ঞতা পেতে হলে নিজের ক্ষেত থেকে সবজি বাছাই করে তারপর তা খাওয়ার আয়োজন করতে হবে।
কিন্তু ব্যস্ত নাগরিক জীবনে তা কি আদৌ সম্ভব! তবে বিকল্প উপায় তো আছেই। তা হলো বাজারে গিয়ে নিজের পছন্দ মতো তরিতরকারি পছন্দ করা। তারপর বাড়ি নিয়ে এসে নিজেই সেসব রান্নাবান্না করে খাওয়ার আয়োজন করা। এতে করে খাবারের সঙ্গে শরীর ও মনের যে বন্ধন তৈরি হয়, তা শরীরে যথাযথ পুষ্টি জোগাতে দারুণ কাজে দেয়।
তবে লক্ষীকা বলেন, “কিন্তু এটি এমন একটি কাজ যেখানে অবশ্যই আমাদের বাচ্চাদের যুক্ত করা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “বাড়িতে একটি ছোট বাগান করে সেখানে নিজের পছন্দ মতো ভেষজ বা শাকসবজি ফলান। বাড়ির ছোট্টদেরও এই কাজে লাগিয়ে দিন। খাবারের সঙ্গে এভাবে তাদের এক বন্ধন গড়ে উঠবে।”
আর এই বন্ধন খাদ্যগ্রহণকে করে তুললে পারে আরও আনন্দদায়ক, যা শরীর ও মনের জন্য নিঃসন্দেহে উপকারী।
আসলে সব কথার মূল কথা হলো, যাই খান, ভালোবেসে খান। খান মন দিয়ে। হতেই পারে তা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত কোন খাবার অথবা বাড়ির হেঁসেলের মোরগ পোলাও।