Beta
সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪

শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে ঢুকল মিছিল নিয়ে, বের হলো প্রিজন ভ্যানে

সেনাবাহিনীর গাড়িসহ কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে আটক শিক্ষার্থীদের নেওয়া হয় রমনা থানায়। ছবি : হারুন অর রশীদ
সেনাবাহিনীর গাড়িসহ কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে আটক শিক্ষার্থীদের নেওয়া হয় রমনা থানায়। ছবি : হারুন অর রশীদ
[publishpress_authors_box]

এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই বিক্ষোভে নামে একদল শিক্ষার্থী। ফল তৈরিতে বৈষম্য হয়েছে অভিযোগ তুলে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ঘেরাও করেছিল তারা। তাদের চাপে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। এরপর সেই শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে ঢুকে পেল উল্টো অভিজ্ঞতা।

বুধবার মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে ঢুকে পড়ার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বাধার মুখে পড়ে তারা। ধাওয়া খেয়ে অনেকে পালিয়ে রক্ষা পেলেও অর্ধশতকে আটক করা হয়। পরে পুলিশ ভ্যানে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে এদিন দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত উত্তপ্ত ছিল জনপ্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়।

এই শিক্ষার্থীদের দাবি, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার অপূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা নিয়ে এসএসসির ফলের ভিত্তিতে যে ফল তৈরি করা হয়েছে, তাতে বৈষম্য হয়েছে।

তাই এই ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে বুধবার দুপুরে শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হয় সচিবালয়ের সামনে। সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের নিচে মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয় তারা। ওই ভবনেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েকজন অভিভাবকও ছিল। তাদের একজন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, তার ছেলে কবি নজরুল কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশা ছিল ‘এ প্লাস’ পাওয়ার।

ছেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় এই কর্মসূচিতে আসতে পারেননি জানিয়ে এই অভিভাবক বলেন, “আমরা এই ফলাফল মানতে পারছি না বলেই এসেছি। আমার ছেলে যদি এখন আত্মহত্যা করে বসে! আমরা সেই আশঙ্কায় আছি।”

শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছিল- ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘মুগ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘তুমি কে আমি কে ছাত্র-ছাত্র’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম-সংগ্রাম’।

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা যখন সচিবালয়ের ভেতরে তখন বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকরা চেষ্টা করছিলেন খবরাখবর নিতে। তবে সচিবালয়ের গেইটে ছিল কড়া নিরাপত্তা। ছবি : হারুন অর রশীদ
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা যখন সচিবালয়ের ভেতরে তখন বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকরা চেষ্টা করছিলেন খবরাখবর নিতে। তবে সচিবালয়ের গেইটে ছিল কড়া নিরাপত্তা। ছবি : হারুন অর রশীদ

দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শতাধিক শিক্ষার্থী ফটক ঠেলে সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এক প্রকার জোর করে সচিবালয়ের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। সেখানে থাকা পুলিশ ও সেনা সদস্যরা প্রথমে শিক্ষার্থীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করে। তারা সরে না যাওয়ায় ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা শুরু করে।

এরপর ভেতরে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের আটক করে পুলিশ। তখন অন্যরা সেখান থেকে দ্রুত সরে পড়ে।

বৈষম্যহীন ফলাফলের দাবিতে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের নিচে মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন একদল শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ছবি : জীবন আমীর
বৈষম্যহীন ফলাফলের দাবিতে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের নিচে মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন একদল শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ছবি : জীবন আমীর

বিকাল ৪টার দিকে আটক শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচিবালয় থেকে বেরিয়ে আসে পুলিশের দুটি প্রিজন ভ্যান।

নিয়ে যাওয়ার সময় প্রিজন ভ্যানের ভেতর থেকে শিক্ষার্থীরা বলছিল, তাদের মারধর করা হয়েছে।

এই শিক্ষার্থীদের আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়া আন্দোলনরতদের মধ্যে অন্তত ৫০ জনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

সবিচালয়ে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের আটক করে প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি : হারুন অর রশীদ
সচিবালয়ে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের আটক করে প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি : হারুন অর রশীদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ে ঢুকে পড়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। এনিয়ে সচিবালয়ের কর্মচারীরা অসন্তোষ জানিয়ে আসছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে এই বছর এইচএসসি পরীক্ষা আটকে যায়।

ওই আন্দোলনে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও শিক্ষার্থীরা আপত্তি তোলে। ফলে পরীক্ষা আর না নিয়ে অনুষ্ঠিত কয়েকটি পরীক্ষা এবং এসএসসির বিষয়গুলোর ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ করে ফল তৈরি হয়।

গত ১৫ অক্টোবর ফল প্রকাশের পর বিক্ষোভে নামে সেই শিক্ষার্থীরা, যাদের ফল প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি।

গত ২০ অক্টোবর এই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত