শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের অন্য ক্রীড়া ফেডারেশনের মতো টালমাটাল অবস্থা ফুটবল ফেডারেশনেও। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চলতি মৌসুমের দলবদল নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, আসন্ন প্রিমিয়ার লিগে অংশ নেবে না তারা। শঙ্কা রয়েছে ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অংশগ্রহণ নিয়েও। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম আবাহনীও দল গড়ার কোনও উদ্যোগ নেয়নি। সব মিলিয়ে পেশাদার ফুটবলাররা পড়েছে বিপাকে।
যেহেতু ফুটবলই তাদের রুটি রুজির বড় উৎস, তাই ক্যারিয়ার বাঁচাতে শনিবার বাফুফে ভবনে জড়ো হয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন ক্লাবে অংশ নেওয়া ৫০ জন ফুটবলার।
যেহেতু এক সঙ্গে এতগুলো ক্লাব লিগে অংশ না নিলে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়বেন দেশের ফুটবলাররা- তাই এই অবস্থায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে এক ছাতার নিচে এসে দাঁড়িয়েছেন এই ফুটবলাররা। শনিবার ৭ দফা দাবি নিয়ে বাফুফে ভবনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
এছাড়া রবিবার আরও বৃহৎ কর্মসূচি নিয়ে বাফুফে ভবনে জড়ো হবেন তারা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানাতে জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলাররা থাকবেন বলেও নিশ্চিত করেছেন মানববন্ধনে অংশ নিতে আসা ফুটবলাররা।
ফুটবলারদের প্রতিনিধি দল বাফুফে ভবনে এসে তাদের ৭ দফা দাবি বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির কাছে হস্তান্তর করে। লিগ কমিটির প্রতিনিধিরা ভবনে না থাকায় খেলোয়াড়দের দাবির চিঠিটি গ্রহণ করেb বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার।
খেলোয়াড়দের দেওয়া ৭ দফা দাবিগুলো হলোর অন্যতম হচ্ছে- অনতিবিলম্বে দলবদল পেছানো নিশ্চিত করা। প্রত্যেক দলের লিগে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, দায়সারা লিগ চালানো ঠেকানো, যে দলগুলো লিগে অংশ নেবে না ওই দলের ফুটবলারদের দায়িত্ব নেওয়া, বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়া লিগ চালানো, পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্লাবের স্পন্সর আবারও দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এছাড়া তাদের গুরুত্বপূর্ণ দাবি হচ্ছে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে সব ফুটবলারদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা।
দাবিগুলো বাফুফে ভবনে জমা দেওয়ার পর আবাহনীর ফুটবলার রেজাউল করিম বলেন, “এখন হাতে দলবদলের সময় নেই। হঠাৎ করে এতগুলো খেলায়াড় কোথায় যাবে? আমরা প্রয়োজনে পারিশ্রমিক কম নিয়ে খেলতে রাজি আছি। তবুও খেলা হোক। মাঠে ফুটবল থাকুক।”
জাতীয় দলের ডিফেন্ডার রায়হান হাসান বলেন, “দিনকে দিন প্রিমিয়ার লিগে দলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ৫ বছর আগে ১৩ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রিমিয়ার লিগ। এরপর প্রতি বছর দল কমতে কমতে সবশেষ লিগে অংশ নেয় ১০টি দল। এখন যদি সেই সংখ্যা কমে ৬-৭ টিতে দাঁড়ায় তাহলে কিভাবে খেলব আমরা? এমন দায়সারা লিগে আমরা অংশ নিতে চাই না। আমরা চাই সবার অংশগ্রহণ। ফুটবল বাঁচাতে সবার এগিয়ে আসা উচিত। কারণ আমরা ফুটবলার। এর বাইরে আমাদের কোনও পরিচয় নেই। এটাই আমাদের রুটি-রুজি।”
ফুটবলারদের দাবি দাওয়া শুনে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেন, “আমরা খেলোয়াড়দের কথা বিবেচনা করে ফিফায় লিখেছিলাম। দলবদলের সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছিলাম। তারা সেটা মানেনি। শুধু ২২ আগস্ট পর্যন্ত দলবদল বর্ধিত করেছে। তারপরও আমরা চাই সবাই খেলুক। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ করেছি। কালকের মধ্যে হয়তো ফুটবলারদের নিয়ে তার সঙ্গে বসতে পারি।”