Beta
সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

পরিবারতন্ত্রমুক্ত চট্টগ্রাম চেম্বারের দাবিতে মানববন্ধন

চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান কমিটির পদত্যাগসহ নানা দাবিতে সকালে আগ্রাবাদে মানববন্ধন করেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান কমিটির পদত্যাগসহ নানা দাবিতে সকালে আগ্রাবাদে মানববন্ধন করেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান কমিটির পদত্যাগ চান সাধারণ ব্যবসায়ীরা। সেইসঙ্গে এর নেতৃত্বকে পরিবারতন্ত্রমুক্ত করারও দাবি উঠেছে।

রবিবার সকালে আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি উঠে আসে।

মানববন্ধনে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক নেতা ও গার্মেন্ট ব্যবসায়ী নেতারা। যোগ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে চাকরিচ্যুত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীও।

দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এই প্রথম কোনও বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে যোগ দিলেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।

তবে এতে চেম্বারের বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কমিটির কেউ ছিলেন না।

চট্টগ্রাম চেম্বারের ইতিহাস ১১৮ বছরের। ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনে ২০০৮ সালে প্রথম মেয়াদে এম এ লতিফ চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি হন। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি সভাপতি হন। ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার মাহবুবুল আলম সভাপতি ছিলেন। ২০২৪ সালে এফবিসিসিআই সভাপতি নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম চেম্বার ছেড়ে দেন মাহবুবুল আলম।

সেই থেকে এই দুই নেতার বলয়ের বাইরের কারও পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ ছিল না।

সবশেষ ২০২৩ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ২৪ পরিচালক। যাদের প্রায় সবাই লতিফ ও মাহবুবুলের বলয়ের বা পরিবারের সদস্য। চেম্বারে এই পরিবারতন্ত্রের জের ধরে কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর। চট্টগ্রাম চেম্বারের ১১৮ বছরের ইতিহাসে সেটি ছিল প্রথম ঘটনা, যা জন্ম দেয় বিপুল আলোচনার।

এ বিষয়টি নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলে এম এ লতিফের আত্মীয়তার সুবাদে সেই ফাঁকা পরিচালক পদটিতে বিনাভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেন ওয়েল গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

চেম্বারের বর্তমান কমিটির সভাপতি এম এ লতিফের ছেলে ওমর হাজ্জাজ, আরেক ছেলে ওমর মুক্তাদির পরিচালক। অন্যদিকে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের মেয়ে রাইসা মাহবুব চেম্বারের সহ-সভাপতি, ভাই আলমগীর পারভেজ পরিচালক।

এই কমিটিতে পরিচালক হয়েছেন নির্বাচনী বোর্ডের প্রধান নুরুন নেওয়াজ সেলিমের মেয়েজামাই বেনাজির চৌধুরী নিশান ও ছেলে মোহাম্মদ সাজ্জাদ উন নেওয়াজ।

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই পরিবারতন্ত্র নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ এবারই প্রথম প্রকাশ্যে এল।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, “১৭ বছর ধরে এই চেম্বারকে স্বৈরশাসনের আজ্ঞাবহ এবং পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন দুই নেতা এম এ লতিফ এবং মাহবুবুল আলম। এর ফলে চট্টগ্রাম চেম্বার অনেকটা ‘মৃত বাঘে’ পরিণত হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে এই চেম্বার তার ঐতিহ্যবাহী ভূমিকাও হারিয়েছে।

“অনেকদিন আপনারা লুটেপুটে খেয়েছেন আর নয়। এবার সম্মান থাকতে পদত্যাগ করুন। তা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেব।”

পরিবারতন্ত্রের কবল থেকে চট্টগ্রাম চেম্বারকে মুক্ত করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বশীল চেম্বারে পরিণত করতে চান বলে জানালেন চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম নুরুল হক।

সমাবেশে বক্তব্য দেন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী, চেম্বার পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, সাবেক নেতা আবদুল মান্নান রানাসহ ব্যবসায়ী নেতারা।

চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা কর্মকর্তা-কর্মচারীও চাকরি পুনর্বহালের দাবিতেও বিক্ষোভে যোগ দেন।

সমাবেশের পর হাবিবুর রহমানকে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে চট্টগ্রাম চেম্বার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা সবাই চেম্বারের কর্মী, কারও দলীয় বা পরিবারের কর্মী নন। আগে যা হয়েছে হয়েছে, আজ থেকে চেম্বারের কর্মী হিসেবে কাজ করতে শিখুন।”

তবে এসময় চেম্বারে নেতাদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, “আমরা বলেছি মান-সম্মান থাকতে অতিদ্রুত পদত্যাগ করেন। এখন থেকে আমরা ক্ষনগণনা শুরু করেছি।”

সমাবেশে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম চেম্বার সংস্কারে বেশ কিছু দাবি তোলা হয়।

যার মধ্যে রয়েছে, সদস্যপদ পাওয়া সহজ করা, বর্তমান সদস্য তালিকা যাচাই করে সেখান থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির ভোট ব্যাংক বিলুপ্ত করে সঠিক তালিকা তৈরি, দক্ষ নেতৃত্ব বাছাইয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা, একই নেতৃত্ব যেন একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে বিষয়ে আইন সংশোধন, গত ১৬ বছরের চেম্বারের আর্থিক লেনদেনের নিরপেক্ষ অডিট করা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত