ফিলিস্তিনের গাজায় ‘গণহত্যা’ সংঘটনের অপরাধে ইসরায়েলকে জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি।
ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের নামাজ শেষে মানববন্ধনে দাঁড়ায় সংগঠনটি। সেখানেই তারা এই দাবি জানায়। সেই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ইসরায়েলের বিচারের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
মানববন্ধনে ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি বলেছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনে যা করছে তা শুধু গণহত্যা নয়, এটা জাতিগত নিধন। এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষকে দাঁড়াতে হবে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত হন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক মানুষ। একই সঙ্গে সেদিন তারা ২৫৩ ইসরায়েলিকে জিম্মি করে। এর জবাবে ওই দিনই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যা এখনও চলছে।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া গাজায় ইসরায়েলের হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি আয়েজিত মানববন্ধনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, “পত্রিকায় দেখলাম, ফিলিস্তিনে বুধবার ঈদের দিনেও ১৫৭ জন মানুষ নিহত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে ঈদের নামাজের পর এখানে সমবেত হয়েছি। ফিলিস্তিনিদের লড়াইয়ে পাশে আছি আমরা।”
তিনি বলেন, “বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির লড়াই চলছে। এতে মারা পড়ছে সাধারণ মানুষ। এত বড় হত্যাযজ্ঞ চলছে, কিন্তু কেউ তা আটকাতে পারছে না। সারা পৃথিবীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইসরায়েল ও তার মদদদাতা দেশগুলো হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষকে আজ এক কাতারে আসতে হবে। লড়াই করতে হবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে।”
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ঢাকার সল্লিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডা. হারুন উর রশিদ ফিলিস্তিনিদের লড়াইয়ের প্রতি একাত্মতা জানান। তিনি বলেন, “স্বাধীন মাতৃভূমির জন্য ফিলিস্তিনিদের যে লড়াই, সে লড়াইয়ে আমরা তাদের পাশে আছি। আমরা ঈদ উদযাপন করছি, ফিলিস্তিনিরা তা করতে পারছে না। প্রতিনিয়ত সেখানে রক্ত ঝরছে।”
ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও জাতিগত নিধন বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অবিলম্বে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে সংকটের সমাধান করতে হবে।
অধিকারকর্মী মার্জিয়া প্রভা মানববন্ধনে বলেন, “ঈদের দিন মানেই আনন্দের দিন। কিন্তু ফিলিস্তিনে এই দিনে জায়নবাদীদের হত্যাযজ্ঞ চলছে। এ বিষয়ে আমাদের দেশের সরকারের কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা তা দেখতে পাচ্ছি না।”
ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি আগামী ৩ মে নারী ও শিশুদের নিয়ে সমাবেশ করবে বলে জানান তিনি।
বিশ্বব্যাপী ছাত্র-জনতাকে ফিলিস্তিনি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বের মানুষ যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, আমরাও সেভাবে সব দেশের ছাত্র-জনতাকে ফিলিস্তিনি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।”
ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি আয়োজিত এই মানববন্ধনে মূলত বিভিন্ন বামপন্থি দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। তবে ঈদের নামাজ শেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ান। এদের একজন মাহবুব আলম। একসময় তিনি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এখন অবসরে আছেন। স্ত্রীকে নিয়ে শনির আখরা থেকে এসেছিলেন জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়তে।
বাড়ি ফেরার সময় মানববন্ধনটি দেখে দাঁড়িয়ে গিয়ে বক্তব্য শুনছিলেন মাহবুব আলম। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনে মানুষ মেরে ফেলছে। কেউ কিছু বলছে না। ঈদের দিনেও সেখানে মানুষ মরছে। এভাবে চলতে পারে না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সবার এক হতে হবে।”