Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

হুমায়ুন আহমেদের যে ৫ সিনেমা সময়ের সাথে বদলায় না

হুমায়ুন আহমেদ
জীবদ্দশায় হুমায়ুন আহমেদ সাতটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন।
[publishpress_authors_box]

নন্দিত লেখক-চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই গল্পের জাদুকর। ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা।

ভিজ্যুয়াল মিডিয়ায় হুমায়ুন আহমেদের শুরুটা ছিল টেলিভিশন নাটকের গল্পকার হিসেবে। ৮০-৯০ দশকে টেলিভিশনে প্রচারিত হয় তার লেখা ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আজ রবিবার’-এর মতো জনপ্রিয় নাটক।

চলচ্চিত্রের জগতেও পা রাখেন গল্পকার হিসেবেই। ১৯৯২ সালের ‘শঙ্খনীল কারাগার’ সিনেমার গল্প তাকে এনে দিয়েছিল সেরা গল্পকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও।

এরপর ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’। তারপর একে একে বানিয়েছেন আরও সাতটি সিনেমা। যেগুলো দর্শক থেকে সমালোচক, সবার মন জয় করেছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার জিতেছে।

তবে এই পাঁচটি সিনেমা আজও চিরসবুজ, আজও ছুঁয়ে যায় দর্শকের মন।

আগুনের পরশমণি (১৯৯৪)

‘আগুনের পরশমণি’-এর মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদ বাংলা চলচ্চিত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত, ডলি জহুর এবং শিলা আহমেদদের অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল।

যুদ্ধের ভয়াবহতাকে সরাসরি না দেখিয়েই চিত্রায়নের মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদ দর্শকদের মনে মুক্তিযুদ্ধের চিরস্মরণীয় একটি চিত্র উপহার দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ সরকারের অনুদানের এই সিনেমা শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।

শ্রাবণ মেঘের দিন (২০০০)

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রগুলির একটি।

ভাটি অঞ্চলের গ্রামীণ পরিবেশে নির্মিত এই সিনেমার মূল চরিত্র মতির প্রেমকাহিনী দর্শকদের মন ছুঁয়েছে। জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ এবং মেহের আফরোজ শাওনের অভিনয় দারুণ প্রশংসিত হয়।

সুবীর নন্দীর কণ্ঠে গাওয়া ‘এক যে ছিল সোনার কন্যা’ গানটি এই সিনেমাকে চিরস্মরণীয় করে তুলেছে।

এই সিনেমার জন্যও সেরা গল্পকার এবং সেরা গীতিকারের পুরস্কার অর্জন করেন হুমায়ূন আহমেদ।

শ্যামল ছায়া (২০০৪)

এই সিনেমাটিও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত। ২০০৬ সালে সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কারের জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল সিনেমাটি।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানুষের প্রাণের ভয়ে পালানো, নিরাপত্তাহীনতা আর মুক্তির সংগ্রামে যোগ দেয়ার গল্প নিয়ে এই সিনেমায়।

একটি নৌকায় করে পালাতে কিছু মানুষের ঘটনা নিয়ে সিনেমার কাহিনি এগিয়ে যায়। রিয়াজ, মেহের আফরোজ শাওন, স্বাধীন খসরুসহ অনেক শিল্পী এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এই সিনেমাটি মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষের যাতনা, আশা এবং সাহসকে তুলে ধরেছে।

সিনেমার শেষ অংশে ছদ্মবেশী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের চরিত্রে অতিথি হিসেবেও দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি।

আমার আছে জল (২০০৮)

এই সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় পা রাখেন বিদ্যা সিনহা মিম। বলা হয় হুমায়ুন আহমেদের অন্যান্য সিনেমার তুলনায় ‘আমার আছে জল’ কিছুটা আধুনিক।

সিনেমার গল্পে মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক, বোনদের মধ্যে ভালোবাসার ও বিসর্জনের সম্পর্কসহ বেশ কয়েকটি মানবিক সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে।

মিম ছাড়াও এতে অভিনয় করেছেন শাওন, জাহিদ হাসান, ফেরদৌস। সিনেমাটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্মাননাও অর্জন করেছে।

ঘেঁটুপুত্র কমলা (২০১২)

নিজের নির্মিত শেষ সিনেমায় হুমায়ুন আহমেদ তুলে এনেছিলেন দেড় শতাব্দী আগে কীভাবে জমিদারদের যৌনলালসার শিকার হতো ঘেঁটু গানের দলের শিশুরা।

সিনেমাটির মুক্তির আগেই নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে জীবনাবসান হয় হুমায়ুন আহমেদের। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মারা যান তিনি। এর আগে একমাসের জন্য দেশে ফিরে মে মাসের ৩০ তারিখে তিনি সিনেমাটি দেখে গিয়েছিলেন।

হুমায়ূন তার বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন লেখায় এই সিনেমাটি তৈরির ইচ্ছা প্রকাশ করে গিয়েছিলেন। এই সিনেমার জন্য সেরা নির্মাতা এবং সেরা চিত্রনাট্যকারের মরণোত্তর জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। অস্কার প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশ থেকে মনোনয়নও দেওয়া হয়েছিল এই সিনেমাটিকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত