পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনও রকমে হার এড়ানোর ম্যাচে চোট পেয়েও মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে শেষ মুহূর্তে গোল করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। যে গোলে ড্রয়ের সুবাদে বাংলাদেশ টিকে রয়েছে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। সেই গোলের পর কাঠমান্ডুর দি সোলটি হোটেলের লবিতে বসে সোমবার নিজের চোট ও ভারত ম্যাচ নিয়ে ভাবনার কথা জানালেন বাংলাদেশ দলের এই স্ট্রাইকার
সকাল সন্ধ্যা : পাকিস্তান ম্যাচের ১০ মিনিটেই চোখের কোণে চোট পেয়েছিলেন। বর্তমানে আপনার চোটের কি অবস্থা?
শামসুন্নাহার জুনিয়র : চোখের চোট নিয়ে ডাক্তার বলেছেন, তেমন সমস্যা নেই। আমি ২৩ তারিখে (ভারতের বিপক্ষে) খেলতে পারব কিনা, এটা জানতে চাইলে উনারা বলেছেন খেলতে পারব। এটা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু পায়ে একটু ব্যাথা আছে। আজ পুরো দিন বিশ্রাম দিয়েছেন কোচ। রিকভারি সেশন করেছি। সারাদিন আইস বাথ, গরম পানি নিয়েছি। ইনশাল্লাহ দেখি মাঠে নামতে পারি কিনা। আগামীকাল (মঙ্গলবার) যদি ভালো বোধ করি তাহলে পরের ম্যাচে ইনশাল্লাহ খেলতে পারব।
সকাল সন্ধ্যা : যখন পাকিস্তান অধিনায়ক মারিয়া জামিলা খানের সঙ্গে ধাক্কা লাগে, এরপর কি মনে হয়েছিল ওই অবস্থায় খেলতে পারবেন?
শামসুন্নাহার : মনে হচ্ছিল চোট নিয়ে অত সমস্যা নেই। আমার বাম চোখের কোণায় কেটে গেছে। আমার সঙ্গে যার কপাল ফেটেছিল পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন (মারিয়া) উনার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে। কিন্তু আমার চোখের কোণায় লাগায় ব্যান্ডেজ করতে পারছিল না।
সকাল সন্ধ্যা : আপনাকে অনেকটা সময় পরে নামতে হয়েছিল মাঠে।
শামসুন্নাহার : আমার মনেই ছিল না যে ব্যথা পেয়েছি। ব্যাথাটা আমি বড় করে দেখিনি। আমার শুধু মনে হচ্ছিল খেলতে হবে। দেশের জন্য কিছু করতে হবে। সুযোগ পেয়েছি কাজে লাগাতেই হবে। সবাই ভরসা করে আছে গোল দিতে পারবো আমি। গোল দিব আমি। আমাদের অ্যাটাক লাইনে যে তিন জন তাদের ওপর বেশি ভরসা ছিল সবার। ওই ভরসার জায়গা থেকেই দেখেছি বলে খেলতে পেরেছি।
সকাল সন্ধ্যা : ৯০ মিনিটে তো বাংলাদেশ ১-০ তে পিছিয়ে ছিল। কখনও মনে হয়েছিল যে ম্যাচটা ড্র হবে?
শামসুন্নাহার : যখন দেখেছি যে ৯০ মিনিট শেষ হয়ে গেছে। রেফারি এক্সট্রা টাইম দিয়েছে ৬ মিনিট। তখন মনে হচ্ছিল, হায় আল্লাহ কি করবো? আর মাত্র ৬ মিনিট আছে। এটা তো দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে। তখন আমরা সবাই শুধু ডিফেন্স থেকে বলছিলাম ওপরে উঠে এসে খেলতে। প্রেসার দিতে। যাতে গোল একটা না একটা বের করতে পারি।
সকাল সন্ধ্যা : ডিফেন্ডাররা নিশ্চয় কিছু বলছিলেন আপনাদের?
শামসুন্নাহার : ডিফেন্ডাররা অনেক কথা বলছিল। ওরা বলছিল একটা গোল করো, একটা গোল করো। আমরা সবাই শেষ দিকে যখন দেখি ৬ মিনিট দিয়েছে তখন আমরা পাগল হয়ে যাই গোলের জন্য। মনে করছিলাম যে যদি এই ম্যাচটি ড্র হয় তাহলেও তো ভালো সুযোগ থাকবে। আর যদি হেরে যাই তাহলে কেমন দেখা যাবে। এটা আসলে শেষ দিকে আমাদের জন্য প্রেসার হয়ে গিয়েছি। তো সবাই এসে শেষ দিকে ওদের আরও প্রেসার দিয়েছে। যে কারণে গোল পেয়েছি।
সকাল সন্ধ্যা : গোলের পর দারুণ একটা উদযাপন করতে দেখেছি আপনাকে।
শামসুন্নাহার : সামান্যই সেলিব্রেশন করেছি গোলের পর। কিন্তু পরে কৃষ্ণা দি (কৃষ্ণা রানী সরকার) ডাকছিল। বলছিল, বল নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসো। সময় নেই একদম। আমি কয়েক সেকেন্ড শুধু ওখানে ছিলাম। এরপরই বল নিয়ে চলে আসি। আর কয়েক মিনিট ছিল ম্যাচের। তখন আমার মাথায় একটাই চিন্তা যদি আরেকটি গোল করতে পারি তাহলে আমরা ৩ পয়েন্ট পাবো।
সকাল সন্ধ্যা : ভারতের বিপক্ষে বাঁচা মরার লড়াই ২৩ অক্টোবর। এই ম্যাচ নিয়ে কি ভাবনা আপনাদের?
শামসুন্নাহার: ভারতে এবার অনেক সিনিয়র ফুটবলার আছে। অভিজ্ঞ ফুটবলার আছে। (সাবিনা) আপুদের সঙ্গে খেলেছে। আমরা তাদের পাইনি। আগের সাফেও উনারা খেলেনি। এবার উনারা খেলবে। অনেক অভিজ্ঞ ফুটবলার ওরা নিঃসন্দেহে। ওরা মাঝ মাঠ থেকে ভালো ভালো বল ছাড়ে। উইঙ্গার আছে। লেফট উইংয়ে যে খেলে (মনিষা) সে অনেক ভালো। এখনও এসব নিয়ে কোচদের সঙ্গে কথা হয়নি। আমরা প্রথম ম্যাচ নিয়েই বেশি কথা বলেছি। কাল আমাদের প্রথম ম্যাচ শেষ হয়েছে। আমরা এরপর দ্বিতীয় ম্যাচ নিয়ে কথা বলব।