ম্যাচ শেষে জয়ের আনন্দে যেন আগের দিনের চোটের সব যন্ত্রণা ভুলে গেলেন শামার জোসেফ। এমন ভোঁ দৌড় দিলেন, কে বলবে পায়ের চোট নিয়েই খেলেছেন এই উইন্ডিজ পেসার।
টেস্ট অভিষেকে কীর্তি গড়া বোলিং, দ্বিতীয় ম্যাচে চোটের সঙ্গে লড়াই করে রবিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়েছেন। তাও আবার যেমন তেমন জয় নয়, ২৮ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যে ম্যাচে জয়ের বড় ভিত গড়ে দিয়েছেন জোসেফ। ১১.৫ ওভারে জোসেফ নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেট।
শুধু তাই নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের চতুর্থ বোলার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় ৭ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন তিনি। ১৯৯৩ সালে সর্বশেষ ৭ উইকেট নিয়েছিলেন কার্টলি অ্যামব্রোস।
ব্রিসবেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই পেসার যা করলেন তা অসাধারণ, দুর্দান্ত। এসবের সঙ্গে তার টেস্ট ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প তো রূপকথাকেও হার মানায়।
আগের দিন মিচেল স্টার্কের ইয়র্কার পায়ের অগ্রভাগে আঘাত করলে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়েন জোসেফ। ব্যাটিং তো আর করতেই পারেননি, সেদিন আর মাঠেই নামেননি তিনি। রাতে যান হাসপাতালে, করা হয় স্ক্যান।
পায়ে ব্যথার তীব্রতা এতই ছিল যেন মনে হচ্ছিল না খেলা সম্ভব। তবে ব্যথানাশক ইনজেকশনের পর ব্যথা কমলে চতুর্থ দিন মাঠে নামেন জোসেফ। ম্যাচ শেষে জোসেফ বলছিলেন সব কৃতিত্ব চিকিৎসকের, “আমি সকালে ভয়ে মাঠে নামতেই পারছিলাম না। এ জন্য চিকিৎসককে আমি অবশ্যই একটা ধন্যবাদ দিতে চাই। উনি অবিশ্বাস্য রকমের চিকিৎসা দিয়েছেন। তিনি আমাকে মাঠে যেতে বলেছিলেন যাতে ছেলেদের একটু হলেও সহযোগিতা করতে পারি।”
জোসেফ বল হাতে নেওয়ার আগে ম্যাচ ঝুঁকে ছিল অস্ট্রলিয়ার দিকেই। নিজের চোট, অস্ট্রেলিয়ার ভালো অবস্থান, গোলাপী বলে বোলিংয়ের অনভিজ্ঞতা সব রকমের প্রতিকুল পরিস্থিতি উড়িয়ে দিয়ে চোখ ধাঁধানো বোলিং করলেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিততে হলে ৮ উইকেট নিতে হবে। অস্ট্রেলিয়া তখন লক্ষ্য থেকে মাত্র ১৫৬ রান দূরে। অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েট বল তুলে দেন ‘নিরাপত্তা রক্ষী’র হাতে ! এই চাকরি করতে করতেই তিনি শখের বসে ক্রিকেট খেলতেন। জোরে বল করতেন। শেষমেষ রক্ষীর হাতেই ওয়েস্টইন্ডিজের রক্ষা। অধিনায়কের হাত থেকে বল নিয়ে তিনি চেয়েছিলেন অজিদের অল আউট না করা পর্যন্ত বল করতে, “আমি অধিনায়ককে বলেছিলাম যে, সব কটি উইকেট না পড়া পর্যন্ত বল করে যেতে চাই। আমি ইতিবাচক ছিলাম। সতীর্থরা বল করার সময় বলছিল, যাও উইকেট নিয়ে এসো।”
সতীর্থদের অনুপ্রেরণায় জোসেফ আরো উজ্জীবিত, “এটা শুধু আমাদের ইতিবাচক মানসিকতার ফল। আমি তত ক্লান্ত ছিলাম না, কারণ এটা আমার দলের জন্য করতে চেয়েছিলাম ।” অথচ পায়ে ছিল চোট, রক্তাক্ত হয়েছিল আঙুল। নিজের চোট নিয়েও তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন না, “ আমার আঙুলের অবস্থা কেমন ছিল সেটা ব্যাপার না। আমি ঠিক আছি। আমি তার (অধিনায়ক) জন্য করেছি এটা এবং আমি আনন্দিত যে আমার কারণে সে এখন গর্বিত।” শেষ ৮ উইকেটের ৭টি নিয়েই তিনি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন।
জোসেফের এমন কীর্তি ছুঁয়ে গেছে সাবেক ক্যারিবিয়ান পেসার ইয়ান বিশপকে। ম্যাচ শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই গতি তারকা বলছিলেন, “ডানপায়ে চোট নিয়ে অসাধারণ সাহসী ও সেরা বোলিং করার জন্য তরুণ শামার জোসেফকে ধন্যবাদ জানাই। তুমি যা অর্জন করেছ এবং ভবিষ্যতেও যা করে যাবে, সব কিছুর কৃতিত্ব তোমার এবং তোমার প্রিয়জনদের।”
অধিনায়ক ব্রাথওয়েট এখানেই থেমে থাকতে চান না। তিনি ম্যাচ শেষে বলেছেন, “এটা ছিল অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কিন্তু এমটা নিয়মিতই করতে হবে।”