কেবিনে রুশ কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর ঢাকার ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
দায়িত্বশীল এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, বেসরকারি এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ড বয়কে শাস্তি দিলেও স্পর্শকাতর এই ঘটনাটি পুলিশের কাছে গোপন রেখে ঠিক কাজ করেনি।
নারীর ওই কেবিনে পুরুষ ওয়ার্ড বয়কে পাঠানো নিয়েও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এসেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে. ওই পুরুষ ওয়ার্ড বয় নিজেই গিয়েছিলেন ওই কেবিনে। তবে ওয়ার্ড বয়ের স্বজনরা বলছেন ভিন্ন কথা।
ফোঁড়ার চিকিৎসার জন্য নিজের কিশোরী মেয়েকে কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত এক রুশ নারী।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার দিকে হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই আবুল কাশেম নামে এক ওয়ার্ড বয়ের বিরুদ্ধে মেয়েকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন তিনি। এরপর সকালে ঢাকার বনানীর আরেকটি হাসপাতালে তিনি মেয়েকে নিয়ে যান।
রুশ ওই নারী মেয়ের চিকিৎসা শেষে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মিরপুর মডেল থানায় গিয়ে মামলা করলে ঘটনাটি প্রকাশ পায়।
অভিযোগ পাওয়ার পরপরই কেবিন বয় আবুল কাশেমকে তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নিজেদের তদন্তে দোষ পাওয়ায় কাশেমকে চাকরিচ্যুত করে ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এই ঘটনায় আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারত ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষ। কারণ বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এখানে দেশেরও সন্মানও জড়িত। ভুক্তভোগীর মা একজন বিদেশি নাগরিক।
“এছাড়া যৌন হয়রানির অভিযোগ আইনগতভাবে ছাড়া অন্য কোনোভাবে সমাধানের সুযোগ নেই। তাই আমার মনে হয়, ঘটনার পর বিষয়টি পুলিশকে না জানিয়ে নৈতিকভাবে ঠিক করেনি ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।”
পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পর ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মামলার মাত্র ৮ ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্তকে ফরিদপুরের মধুখালীর গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে সে কারাগারে।”
ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি না- প্রশ্ন করা হলে সহকারী কমিশনার মুহতারিম বলেন, “তদন্তে যদি ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষের কোনো দায় পাওয়া যায়, সেটাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার এসআই মো. নাসির আহমেদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অভিযোগের তদন্ত চলছে, তাই এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। ঘটনায় যাদেরই দোষ পাওয়া যাবে, সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যা বলছে ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষ
এই ঘটনায় নিজেদের যেটুকু ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূরে আলম সবুজ।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ঘটনার পরই আমরা রোগীর অভিযোগ আমলে নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করি। কমিটি দোষ খুঁজে পাওয়ায় অভিযুক্ত আবুল কাশেমকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।”
যৌন নিপীড়নের মতো অভিযোগ পুলিশকে না জানানোর কারণ জানতে চাইলে সরাসরি কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি সবুজের কাছে।
তিনি বলেন, “আমরা তো রোগীর অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযুক্তকে চাকরিচ্যূত করেছি। এ বিষয়ে যদি আপনার আরও কোনোকিছু জানার থাকে, তাহলে হাসপাতালে আসতে পারেন।”
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
ওই কিশোরীর কেবিনে পুরুষ ওয়ার্ড বয় কাশেমের যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা কখনোই নারী রোগীর কেবিনে পুরুষ ওয়ার্ড বয়কে দায়িত্ব দেয় না। কাশেম কারও অনুমতি ছাড়াই ওই রোগীর কেবিনে ঢুকেছিলেন।
তবে কাশেমের স্ত্রী রেখা সুলতানা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমার স্বামী কইছে সে ওই মহিলার কেবিনে যাইতে পারব না। এরপরও তারে জোর করে পাঠাইছে নার্স আফায়। এখন সব দোষ হচ্ছে আমার স্বামীর। আমার স্বামী যদি কাউরে না জানাইয়া যাইত, তাইলে তারে বাধা দিল না ক্যান?”
রুশ নারীর অভিযোগ, বগলের ফোঁড়া অপসারণে হাসপাতালে ভর্তির পর কাশেম চিকিৎসার কথা বলে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কয়েক দফায় তাদের কেবিনে ঢুকেছিলেন। চিকিৎসার কথা বলে মলম লাগানোর ছলে তার ১৫ বছর বয়সী মেয়ের শ্লীলতাহানি ঘটান।
ওই নারী বলেন, এক পর্যায়ে তাকে কেবিনের বাইরে যেতে বলায় তিনি উল্টো কাশেমকে বের করে দিয়েছিলেন। তখন তার চেঁচামেচিতে হাসপাতাল কর্মকর্তারা আসেন।
তখন হাসপাতালের অ্যাডমিন ইনচার্জ মোহাম্মদ নুরে আলম (সবুজ) এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে ওই নারীকে বলেন, দোষী ব্যক্তিকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সেদিনই ওই নারী তার মেয়েকে নিয়ে আরেক হাসপাতালে চলে যান। পরে তিনি থানায় মামলা করেন।
নূরে আলম সবুজ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ওয়ার্ড বয় আবুল কাশেমকে ওই রোগীর কেবিনে যেতে বলেনি কেউ, সে নিজেই গেছে। আপনার কাছে যারা এই অভিযোগ করছে তারা মিথ্যা বলছে।”
কাশেম গত ১৫ বছর ধরে ইবনে সিনা হাসপাতালের ধানমণ্ডি শাখায় চাকরি করেছেন। ১৫ দিন আগে তাকে কল্যাণপুর শাখায় বদলি করা হয়।
চাকরি জীবনে কাশেমের বিরুদ্ধে এর আগে কখনও কোনও কোনো অভিযোগ ওঠেনি বলে স্বীকার করেন সবুজ।