Beta
বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

আইসিজের আদেশ : কেন বিপক্ষে ভোট দিলেন উগান্ডার বিচারক

Julia
[publishpress_authors_box]

গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে ইসরায়েলকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দিয়েছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু শুক্রবারের ওই আদেশে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি প্রাধান্য দেয়নি আদালত।

দক্ষিণ আফ্রিকা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা করেছিল। দেশটির অভিযোগ ছিল, ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে।

আইসিজে’র ১৭ জন বিচারকের একটি প্যানেল অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষায় ছয়টি ‘অস্থায়ী পদক্ষেপ’ নেওয়ার নির্দেশ দেন। প্যানেলের একজন ইসরায়েলি বিচারক ছয়টির মধ্যে দুইটি পদক্ষেপের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

কিন্তু একমাত্র উগান্ডার বিচারক জুলিয়া সেবুতিন্ডে ছয়টি পদক্ষেপের বিরুদ্ধেই ভোট দেন।

কে এই জুলিয়া সেবুতিন্ডে

উগান্ডার এই বিচারকের জন্ম ১৯৫৪ সালে। আইসিজে’তে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০২১ সালের মার্চ থেকে আইসিজেতে বিচারক হিসেবে আছেন।  এছাড়া তিনিই প্রথম আফ্রিকান নারী যিনি আইসিজের বিচারকের পদে রয়েছেন।

ইনস্টিটিউট ফর আফ্রিকার উইম্যান ইন ল সংস্থা বলছে, জুলিয়া একটি সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন। উগান্ডা যখন ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে, তখন তার জন্ম।

উগান্ডার এন্টেব্বে অঞ্চলের লেক ভিক্টোরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন জুলিয়া। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে তিনি গায়াজা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়েন। পরে তিনি ১৯৭৭ সালে মাকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক করেন।

১৯৯০ সালে ৩৬ বছর বয়সে তিনি স্কটল্যান্ডে যান। সেখানে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স করেন। ২০০৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের উপর ডক্টরেট করেন তিনি।

আইসিজেতে যুক্ত হওয়ার আগে জুলিয়া সিয়েরা লিওনের বিশেষ আদালতের বিচারক ছিলেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন।

পেশাগত জীবনে বিতর্ক তার জন্য নতুন কিছু না।

সিয়েরা লিওনে যুদ্ধপরাধের দায়ে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট চার্লস টেইলরের বিচারে বিচারক হিসেবেও ছিলেন জুলিয়া। ওই বিচারে তার সঙ্গে আরও দুই বিচারক ছিলেন।

সিয়েরা লিওনের ওই বিশেষ আদালত চার্লস টেইলরকে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, হত্যা, ধর্ষণ এবং শিশু সৈন্য ব্যবহারের ১১টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। আদালত তাকে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

আদালতে চার্লস টেইলরের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন লন্ডনের ব্যারিস্টার কোর্টনে গ্রিফিথস। তিনি তার মক্কেলের পক্ষে একটি লিখিত জবানবন্দীর সারসংক্ষেপ আদালতে পেশ করতে চান। কিন্তু আদালত অস্বীকৃতি জানায়। এরপর তিনি ওই বিচার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাড়ান।

এ কারণে আদালত গ্রিফিথসের বিরুদ্ধে একটি শাস্তিমূলক শুনানির আয়োজন করেছিল। কিন্তু বিচারক জুলিয়া ওই শুনানিতে ‘নীতিগত’ কারণ দেখিয়ে উপস্থিত হননি। তিনি মনে করেন, এই শুনানি বা এর ফলাফল ন্যায্য নয়।

২০২৪ সালে জুলিয়া আবারও সংবাদের শিরোনামে। কারণ হল- ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলায় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার দাবি করা সব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।

তার মতে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব মূলক একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ঘটনা। এটি কোনও আইনী বিরোধ নয় যে আদালতের মাধ্যমে এর নিষ্পত্তি হবে।

তিনি আরও জানান, ইসরায়েল যে গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়েই অভিযান চালিয়েছে তা প্রমাণ করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার আনীত অভিযোগগুলো গণহত্যা সনদের আওতায় পড়ে না।

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুলিয়া পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ ও ফ্রেজার ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মার্ক কার্স্টেন আল জাজিরাকে বলেন, “আন্তর্জাতিক আদালতের এই ভিন্নমতের মূল সমস্যাটা হলো- এটা গণহত্যাকে রাজনৈতিক ঝামেলা হিসেবে দেখছে, আইনগত বিষয় হিসেবে নয়। আসলে এটা আইনি বিষয়। ১৯৪৮ সালে গণহত্যা সনদে স্বাক্ষর করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েল উভয়ই চুক্তি লঙ্ঘনের এবং গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে আইনি বিচারব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত