Beta
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫

বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরীর প্রথম সমুদ্রযাত্রা

মায়ামি থেকে ছেড়ে যাচ্ছে আইকন অব দ্য সিজ। ছবি: এপি।
মায়ামি থেকে ছেড়ে যাচ্ছে আইকন অব দ্য সিজ। ছবি: এপি।
[publishpress_authors_box]

টাইটানিকের চেয়েও পাঁচ গুণ বড় বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরী ‘আইকন অব দ্য সিস’ প্রথম সমুদ্রযাত্রা শুরু করেছে। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যার একটু আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মায়ামি থেকে যাত্রা শুরু করে দানবীয় জাহাজটি। এটি আটলান্টিক মহাসাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ক্যারিবীয় সাগরে সাত দিন ধরে বিভিন্ন দ্বীপে ঘুরে বেড়াবে।

রয়্যাল ক্যারিবিয়ান গ্রুপের মালিকানাধীন আইকন অব দ্য সিস লম্বায় ৩৬৫ মিটার (১ হাজার ১৯৭ ফুট) এবং প্রস্থে ৬৫ মিটার (২১৩ ফুট)। এতে ডেকের সংখ্যা ২০টি। ২ হাজার ৩৫০ জন ক্রুসহ সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬০০ জন যাত্রী ধারণের ক্ষমতা রয়েছে জাহাজটির। সবমিলিয়ে জাহাজটিতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ উঠতে পারবে।

জাহাজটিতে ৭টি সুইমিং পুল, ৬টি ওয়াটার স্লাইড, একটি আইস স্কেটিং রিঙ্ক, একটি থিয়েটার এবং ৪০টিরও বেশি রেস্তোরাঁ, বার ও লাউঞ্জ রয়েছে। এর ওজন ২ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টন।

আইকন অব দ্য সিস লম্বায় ৩৬৫ মিটার (১ হাজার ১৯৭ ফুট) এবং প্রস্থে ৬৫ মিটার (২১৩ ফুট)

যাত্রীদের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য প্রমোদতরিটিতে ৫০ জন সংগীতশিল্পী এবং কমেডিয়ানও রাখা হয়েছে। আছে ১৬টি অর্কেস্ট্রাও।

জাহজটিতে ভ্রমণ করতে জনপ্রতি খরচ পড়ছে ১ হাজার ৮০০ ডলার থেকে ২ হাজার ২০০ ডলারের কাছাকাছি। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে আইকন অব দ্য সিস-এর টিকিট বুকিং শুরু হয়। তখন মাথাপিছু টিকিটের দাম ছিল ১ হাজার ২৫৯ ডলার। তবে একবছরের ব্যবধানে টিকিটের দাম কিছুটা বেড়েছে। জাহাজটিতে বর্তমানে কক্ষ ভাড়া নিয়ে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে সস্তা টিকিটের দাম ১ হাজার ৭৫৬ ডলার।

ছয়টি দ্বৈত-জ্বালানি ইঞ্জিনে চলবে জাহাজটি। এটি তৈরিতে খরচ পড়েছে ২০০ কোটি ডলার এবং সময় লেগেছে ৯০০দিন। ফিনল্যান্ডের তুর্কুতে একটি শিপইয়ার্ডে জাহাজটি তৈরি করা হয়।

জাহাজটিতে ৭টি সুইমিং পুল, ৬টি ওয়াটার স্লাইড, একটি আইস স্কেটিং রিঙ্ক, একটি থিয়েটার এবং ৪০টিরও বেশি রেস্তোরাঁ, বার ও লাউঞ্জ রয়েছে

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, জাহাজটি তৈরিতে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আর এতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হবে পরিবেশবান্ধব তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)।

ক্রুজ লাইনস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন জানায়, প্রচলিত তেলভিত্তিক জ্বালানির তুলনায় এলএনজি বাতাসে অনেক কম পরিমাণে সালফার ও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে।

তেলের মতো পুরোনো সামুদ্রিক জ্বালানির তুলনায় এলএনজি কম পরিবেশ দূষণকারী। তবে পরিবেশবাদীরা বিলাসবহুল জাহাজটি থেকে মিথেন গ্যাস ছড়াতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা সতর্ক করেছেন যে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস-চালিত জাহাজটি থেকে বাতাসে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস লিক হতে পারে।

জাহাজটি তৈরিতে খরচ পড়েছে ২০০ কোটি ডলার এবং সময় লেগেছে ৯০০দিন

মিথেন একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস। ২০ বছরে কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ তাপ আটকে রাখে, মিথেন গ্যাস তার চেয়ে ৮০ গুণ বেশি তাপ আটকে রাখতে পারে।

অনেকে আবার বলছেন, মানুষ সমুদ্র ভ্রমণে ভূভাগে থাকার সময়ের তুলনায় আট গুণ বেশি কার্বন নিঃসরণ করে।

তবে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান বলেছে, জাহাজটিতে ব্যবহৃত প্রতি কিলোওয়াট শক্তি সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহার করা হয় এবং কার্বন নির্গমন সর্বনিম্ন রাখার চেষ্টা করা হয়।

রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের মুখপাত্র বলেছেন, আইকন অব দ্য সিস আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন আধুনিক জাহাজের জন্য যে সীমা বেধে দিয়েছে তার চেয়েও ২৪ শতাংশ বেশি জ্বালানি সাশ্রয়ী। কোম্পানিটি ২০৩৫ সালের মধ্যে এমন একটি জাহাজ চালু করার পরিকল্পনা করছে যেটি থেকে বাতাসে কোনও ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন হবে না।

রয়্যাল ক্যারিবিয়ান জানায়, প্রমোদতরিটিতে মাইক্রোওয়েভভিত্তিক পাইরোলাইসিস প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হচ্ছে। এ প্রযুক্তির সাহায্যে বর্জ্যকে জ্বালানি গ্যাসে পরিণত করা হয়। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য রয়েছে রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতি।

এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী ছিল ‘ওয়ান্ডার অব দ্য় সিস’, সেটিও রয়্যাল ক্যারিবিয়ানেরই তৈরি। সেটিকে পেছনে ফেলে এবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী হল আইকন অব দ্য সিস। ওয়ান্ডার অব দ্য সিস এর দৈর্ঘ্য ছিল ১ হাজার ১৮৮ ফুট, প্রস্থ ২১০ ফুট। আর ওজন ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৭ টন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স ও সিএনএন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত