Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫
জুলাই-আগস্ট গণহত্যা

ট্রাইব্যুনালের প্রথম আসামি সাবেক ডিসি জসীম কারাগারে

সাবেক ডিসি মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
সাবেক ডিসি মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের সাবেক উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশনের আবেদন শুনানির পর বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেয়। জুলাই-আগস্ট হত্যকাণ্ডের বিচার শুরুর পর এই প্রথম কোনও আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিল ট্রাইব্যুনাল। তাকে রংপুর থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হয়।  

রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা জসীম উদ্দীন মোল্লাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তবে আসামির পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিলেন না।

এর আগে রবিবার (২৭ অক্টোবর) প্রসিকিউশনের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে জসীম উদ্দীন মোল্লাও রয়েছেন।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “সেই ১৭ জনের একজন হলেন জসীম উদ্দীন মোল্লা, যিনি মিরপুর জোনের পুলিশের ডিসি ছিলেন। তার অধীনে ছিল মিরপুরের ৭টি থানা। সেই ৭টি থানার অধীনে পুলিশ কয়েকশ ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করেছে এবং নানা এট্রোসিটি (নৃশংসতা) হয়েছে।”

ওইসব নৃশংসতার সঙ্গে পুলিশের এই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে দাবি করেন চিফ প্রসিকিউটর।

তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় তাকেসহ অন্যান্য পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় আমাদের তদন্ত সংস্থা প্রাথমিক তদন্ত শেষে উনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য প্রসিকিউশন এজেন্সিকে বলেছে।

“তার ভিত্তিতে আমরা আদালতে আবেদন করেছিলাম। ২৭ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। পুলিশ তাকে রংপুর থেকে গ্রেপ্তার করে আজকে (বুধবার) আদালতে হাজির করে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।”

থানায় ৩৫টি মামলার বাইরেও মিরপুর অঞ্চলের বিভিন্ন নৃশংসতার ঘটনার অনেক অভিযোগ প্রসিকিউশনের কাছে এসেছে বলেও জানান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি জানান, জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় ছাত্র-শ্রমিক-জনতাকে হত্যা ও নির্মমতার সঙ্গে সম্পৃক্তার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, “এদেশের কিশোর-তরুণদের ওপর যে নির্মমতা হয়েছে এবং এসব নির্মমতার সঙ্গে যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তারা যত ক্ষমতাশালী বা উচুপদের অধিকারী হোক, আমাদের তদন্ত সংস্থা যদি যথাযথ প্রমাণ পায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।”

তবে ওই সময় আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করা নিরপরাধ কর্মকর্তাদের নির্ভয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “আবারও বলছি, এ ধরনের গণহত্যা-মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা নেই, তাদের কোনও ভয়ভীতির কারণ নেই। তাদের নির্ভয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করার জন্য অনুরোধ করব।”

জসীম উদ্দীন মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না—সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “তদন্ত সংস্থা থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন বোধ করছে; আইনের বিধান আছে যে, আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ভবিষতে দরকার হলে আমরা তা করব।”

তবে আসামির পক্ষে কোনও আইনজীবী না থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “কেন আইনজীবী ছিল না, তার জবাব তো আমরা দিতে পারব না। উনি আইনজীবীর প্রয়োজন বোধ করবেন কি না, নিয়োগ করবেন কি না, এটা তার স্বাধীনতা।”

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পুলিশের রদবদলের প্রথমদিকেই গত ১৩ আগস্ট এক আদেশে মিরপুর বিভাগের ডিসি জসীম উদ্দীন মোল্লাকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে বদলি করা হয়।

একাত্তর সালে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইনের অধীনে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ এই ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারককে নিয়ে। তদন্ত শেষে বিচারে আসা মামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দুই বছর পর ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আগের ১৩ জন প্রসিকিউটরের সবাই একযোগে পদত্যাগ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম পুর্নগঠন করে।

প্রসিকিউশন টিম পুনর্গঠনের ১০ দিনের মাথায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর পুনর্গঠন করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

নতুনভাবে গঠিত তদন্ত সংস্থায় পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাজহারুল হক প্রধান সমন্বয়ক এবং সাবেক পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ চৌধুরী সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত