দেশে সংখ্যালঘুর অধিকার রক্ষায় সরকারের নেওয়া কর্মসূচি পর্যাপ্ত বলে মনে করছেন না লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদ্য বিদায়ী এই সভাপতি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি। সরকার যদি তা করতে না পারে তাহলে আমরাই জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করব।”
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির নাম ঘোষণা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে ৯১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়।
ক্ষমতাসম্পন্ন সংখ্যালঘু কমিশনের দাবি জানিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন রয়েছে। বাংলাদেশে যদিও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রয়েছে, তবে তাদের তেমন ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। আমরা এখনও সরকারের কাছে বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন সংখ্যালঘু কমিশনের দাবি জানাই।”
সরকার না পারলে নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা কমিটির এই সদস্য।
নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আগের কমিটির আইসিটি সেলের প্রধান শহিদ সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়।
নতুন কমিটিতে নির্বাহী সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল। সাত জন সহ-সভাপতির মধ্যে রয়েছেন তিন শহীদ সন্তান মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, শমী কায়সার। সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন সমাজকর্মী কেশব রঞ্জন সরকার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন অ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল।
কমিটির উপদেষ্টা মুনতাসীর মামুন বলেন, “নির্মূল কমিটিকে পরিচালনা করতে গিয়ে পদে পদে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি। উচ্চ পর্যায় থেকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে আমাদের। আমাদের পরিত্যাজ্য করার একটা সিন্ডিকেট রয়েছে।”
দেশে সাম্প্রদায়িকতা ও জাতিগত বিদ্বেষের বিস্তার ঘটছে উল্লেখ করে নতুন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ রসূল বলেন, এ বিষয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় হবেন তারা।
দেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনায় নির্যাতিত নারীরা যেন আইনি সহায়তা পাW সেজন্য কাজ করার কথাও জানিয়েছে নবনির্বাচিত কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৬২টি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এসব এলাকায় নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে কাজ শুরুর জন্য প্রস্তুত থাকবে ১৩টি মেডিকেল টিম। কারণ হিসেবে বলা হয়, নির্যাতনের শিকার নারীদের মাত্র ১০ ভাগ বিচার চাইতে যান। তখন দেখা যায়, ঘটনার আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়েছে বা ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষার সময় পেরিয়ে গেছে। ফলে মামলা পরিচালনায় জটিলতা দেখা দেয়।
এজন্য কমিটির মেডিকেল টিম সক্রিয়ভাবে কাজ করবে বলে জানানো হয়। নির্মূল কমিটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানির শিকার ভিকটিমদের আইনি সহায়তা দেবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, “নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত করতে একাত্তরের ১১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামে তরুণ বিগ্রেড গঠন করা হয়েছে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পাঠদান কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।”
পামাপাশি একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র এবং নথিপত্রগুলোকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করার দাবি নিয়েও কাজ করার কথা জানাল নবনির্বাচিত কমিটি।
৫৫ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতির পদে রয়েছেন শাহরিয়ার কবির। সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক অনুপম সেন, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সংসদ সদস্য ও শহীদ পরিবারের সন্তান মানবাধিকারকর্মী আরমা দত্তসহ অন্যরা।