Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

সেই ছাগলটির এখন কী হবে

আলোচিত এই ছাগল কিনতে গিয়ে ভাইরাল হন তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত।
আলোচিত এই ছাগল কিনতে গিয়ে ভাইরাল হন তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত।
[publishpress_authors_box]

ওজন ১৭৫ কেজি, উচ্চতা ৬২ ইঞ্চি। সচরাচর দেখা যায় না এত বড় ছাগল। এবারের কোরবানির ঈদে ঢাকার সাদিক এগ্রো এই ছাগলটি এনে দাম হেঁকেছিল ১৫ লাখ টাকা। এত দামের পেছনে তাদের ব্যাখ্যা ছিল উন্নত জাত ও বংশ মর্যাদা।

১২ লাখ টাকায় ছাগলটির ক্রেতাও মেলে। ক্রেতার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় সোশাল মিডিয়ায়। আলোচনা শুরু হয়ে যায় এত দামি ছাগলটি নিয়ে।

বয়সে তরুণ সেই ক্রেতার নাম জানা যায় মুশফিকুর রহমান ইফাত। ভিডিওতে তাকে হাসিমুখে বলতে শোনা যায়, “স্বপ্ন ছিল এরকম একটা খাসির। এরকম খাসি আগে কখনও দেখিনি। এই প্রথম দেখা। এটা আমার হবে জানা ছিল না। আল্লাহ নসিবে রাখছে তাই হইছে।”

তার কথা থেকে জানা যায়, বাড়ি তার ধানমণ্ডি ৮ নম্বর সড়কে। সেই ভিডিওতেই তিনি জানিয়েছিলেন, এখনই ছাগলটি বাড়ি নিচ্ছেন না তিনি। থাকবে সাদিক এগ্রোর খামারে। আগামী ১১ জুন বাড়িতে নিয়ে যাবেন তিনি।

কিন্তু এর মধ্যে সেই ছাগলের রশি ধরে টান পড়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের। ইফাত তার ছেলে বলে ফেইসবুকে আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। আর এই ছাগলের সঙ্গে ইফাতের নানা ব্র্যান্ডের গাড়ির ছবিও আসে ফেইসবুকে। তা ধরে মতিউর রহমানের সম্পদ নিয়ে ওঠে প্রশ্ন।

তুমুল আলোচনার মধ্যে মতিউর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ইফাত তার ছেলে নন।

এদিকে ইফাতেরও দেখা পাচ্ছে না সাদিক এগ্রো। ১৭ জুন কোরবানির ঈদ হলেও ছাগলটি আর নেননি তিনি।

ঈদের আগে ১২ জুন থেকে সাদিক এগ্রো যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে ক্রেতা ইফাতের সঙ্গে। কিন্তু বিফল হওয়ায় ঈদের দুদিন বাদে বুধবারও ছাগলটি রয়ে গেছে মোহাম্মদপুরের খামারটিতে।

সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসাইন বুধবার সন্ধ্যায় সকাল সন্ধ্যার জিজ্ঞাসায় বলেন, “সেই ১২ তারিখ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করতে এখনও পারি নাই।”

ইমরান হতাশা নিয়ে জানালেন, এমন ঘটনার মুখোমুখি আগে হননি তারা। তার কাছ থেকেই জানা গেল, বায়না হিসাবে ১ লাখ টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন ইফাদ। ছাগল নেওয়ার সময় বাকি ১১ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

ইমরান বলেন, “তিনি বুকিং মানি ১ লাখ টাকা দিলেও বাকি টাকা পরিশোধ করেননি। আমরা তো তার সাথে যোগাযোগ করেও পাচ্ছি না। আমরা এটা তাকে দেব, নাকি অন্য কিছু করব, কোনও ডিসিশনই নিতে পারছি না।”

পুরো ঘটনায় বিভ্রান্ত এই খামারি বলেন, “এ ঘটনার দুইটা পার্ট আছে। সে আমাদের ১ লাখ টাকা দিছে, আমরা তার জন্য খাসিটা বুক করে রাখছি। এ রকম ১ লাখ, ২ লাখ টাকা দিয়ে আমরা আমাদের কাস্টমারদের জন্য কিন্তু গরুও বুকড রাখি। এইভাবে তার জন্যও রাখছি।

“কিন্তু কোরবানির পশু নিয়ে আমাদের সাথে এরকম প্রতারণা কেউ আমাদের সাথে করেনি। এইটাই প্রথম। টাকা বুকিং নিয়েও তিনি ছাগলটা নেন নাই, এটা সাদিক এগ্রোর ইতিহাসে প্রথম।”

এখন ছাগলটির কী হবে- জানতে চাইলে ইমরান বলেন, “আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যোগাযোগ করতে পারলে ওর সাথে বসে একটু কথা বলব।

“আর তা নাহলে আমাদের আর কোনও চয়েজ থাকবে না। পরের বারের (আগামী কোরবানির ঈদ) জন্য তৈরি করব। ছাগলটাকে সুস্থ সুন্দর রাখার চেষ্টা করব।”

অন্য কেউ কিনতে চাইলে কী করবেন- প্রশ্নে তিনি বলেন, “ঈদ ছাড়া এত বড় ছাগল বিক্রি হবে না ভাই।”

এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মতিউরকে ‘বাবা’ সম্বোধন করে ইফাতের পোস্ট এবং মতিউর রহমানের সঙ্গে তার ছবি সোশাল মিডিয়ায় আসছিল কয়েকদিন ধরে। তবে এখন তার কোনও সাড়াশব্দ কোনও দিক থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে এসব দেখার পর বুধবার মতিউর দাবি করেন, ইফাত নামে তার কোনও ছেলে নেই। এমনকি আত্মীয় বা পরিচিতও নন।

মতিউরের ভাষ্য অনুযায়ী, তার একমাত্র ছেলের নাম আহমেদ তৌফিকুর রহমান, মেয়ের নাম ফারজানা রহমান।

মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। তিনি তৌফিকুর ও ফারজানার মা।

অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন দাবি করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন মতিউর। তবে মতিউরের বক্তব্যের পাল্টায়ও লেখালেখি চলছে ফেইসবুকে।

তবে এত কিছুর মধ্যে সবার আগ্রহ তৈরি করেও অনিশ্চয়তার পড়ল ‘উচ্চ বংশীয়’ ছাগলটির ভবিষ্যৎ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত