Beta
সোমবার, ১২ মে, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

মধুমিতার নওশাদের প্রথম প্রেম স্কোয়াশ

মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ একজন স্কোয়াশ খেলোয়াড়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা।
মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ একজন স্কোয়াশ খেলোয়াড়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা।
[publishpress_authors_box]

ঢাকা ক্লাবে যখন তিনি কর্মশালায় ব্যস্ত, বারবার ফোন আসছিল মধুমিতা সিনেমা হল থেকে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) সারানোর বিষয়ে কথা বলতে হলের ম্যানেজার ফোন দিচ্ছিলেন ইফতেখার উদ্দিন নওশাদকে।

কিন্তু মতিঝিল যাওয়ার চেয়ে ঢাকা ক্লাবে বাংলাদেশ স্কোয়াশ র‌্যাকেটস ফেডারেশনের প্রাণবন্ত আলোচনা যে বেশ উপভোগ করছিলেন নওশাদ, সেটা তার চেহারা দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছিল।

বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) ও স্কোয়াশ র‌্যাকেটস ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে রবিবার ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাংবাদিকদের এক কর্মশালা। যেখানে আয়োজকদের পক্ষের অন্যতম কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। ফিতা কেটে করেছেন কর্মশালার উদ্বোধন।

বিএসপিএ ও স্কোয়াশ র‌্যাকেটস ফেডারেশন আয়োজিত সাংবাদিকদের কর্মশালার উদ্বোধন করেন ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। ছবি: সংগৃহীত।

নওশাদের বড় পরিচয়, তিনি দেশের ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল মধুমিতার কর্ণধার। তিনি চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি, সেন্সর বোর্ডের সাবেক সদস্য। তার রয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মধুমিতা মুভিজ। রূপালী জগতের তারকাদের সঙ্গে যার নিয়মিত ওঠাবাসা, সেই নওশাদ খেলাপ্রেমীও।

শুনলে অবাক হবেন, ৪২ বছর ধরে তিনি নিয়মিত স্কোয়াশ খেলেন। স্কোয়াশ নিয়ে আলোচনা উঠতেই বললেন, “খেলাটা আমার রক্তে। এটা আমার প্রথম প্রেম।”

নওশাদের আরেকটি পরিচয়, তিনি বাংলাদেশের অপ্রচলিত খেলা স্কোয়াশ র‌্যাকেটস ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।   

স্কোয়াশের প্রতি ভালোবাসার সেই গল্পটা সকাল সন্ধ্যাকে এভাবেই বলছিলেন নওশাদ, “মেট্র্রিক পাশের পর আব্বা আমাকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেন পড়ালেখা করতে। ১৯৭৪ সালে আম্মা মারা গেলে দেশে আসার পর আবার লন্ডনে ফিরে গেলাম। তখন আমার ব্রিটিশ বন্ধুরা স্কোয়াশ খেলতো। এক পাকিস্তানি বন্ধুও সেখানে খেলতো। সে আমাকে উৎসাহ দিত খেলার। এর আগে স্কোয়াশ দেখিনি কখনও। লন্ডনের এক জিমনেসিয়ামে গিয়ে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের খেলা দেখে মুগ্ধ। দেখি বল মাটিতে পড়ে না। আমিও খেলা শুরু করলাম।”

মধুমিতা সিনেমা হল দাঁড়িয়ে আছে মতিঝিলের প্রাণকেন্দ্রে। ছবি: সংগৃহীত।

তখন নওশাদ থাকতেন ম্যানচেস্টারে। প্রথম ম্যাচে খেলতে গিয়েই হারিয়ে দেন এক ব্রিটিশ খেলোয়াড়কে। নওশাদের পারফরম্যান্স দেখে ওই খেলোয়াড় বলেছিলেন, “তুমি খেলা সবে শুরু করেছো, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমার মনে হয় অনেক দিন ধরে খেলো ‍তুমি।”

পড়াশুনা শেষ করে তখন আবারও দেশে ফেরেন নওশাদ। কিন্তু খেলার কোনও সুযোগ পাচ্ছিলেন না কোথাও। ব্রিটিশ আমল থেকেই ঢাকা ক্লাবে ছিল দুটি স্কোয়াশ কোর্ট। কিন্তু যেহেতু তিনি ঢাকা ক্লাবের সদস্য নন, তাই এখানে খেলতেও পারতেন না শুরুর দিকে।

ওই দিনগুলোর কথা মনে করে ৭১ বছর বয়সী নওশাদ বলেন, “তখন আমার খুব কষ্ট হয়েছে। বন্ধুরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে নিয়ে যেত খেলানোর জন্য। কিন্তু ওখানেও ভালোভাবে খেলতে পারতাম না। এরপর ১৯৮২ সালে ঢাকা ক্লাবের সদস্য হই। এরপর থেকে নিয়মিত খেলছি স্কোয়াশ।”

ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খেললেও কখনও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলেননি। তবে ১৯৮৬ সালে সাফ স্কোয়াশ চ্যাম্পিয়নশিপ দলের ম্যানেজার ছিলেন একবার।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্কোয়াশে পদক আসে খুব কম। সেভাবে তাই স্কোয়াশ খেলোয়াড়দের নিয়ে আলোচনাও হয় না। অপ্রচলিত এই খেলাটি কেন উঠে আসছে না? প্রশ্নটা করতেই বললেন, “সরকারের নজরে পড়া উচিত খেলাটির। আসলে ফেডারেশনের সদস্য হিসেবে আমরা ব্যর্থ। আমাদের এই খেলার প্রচারণা চালাতে হবে। তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় তুলে আনতে হবে।”

স্কোয়াশকে ভালোবেসে খেলাটার উন্নতির জন্য কাজ করতে চান ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। ছবি: সকাল সন্ধ্যা।

অলিম্পিকের খেলা স্কোয়াশ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন তিনি, “আমাদের মেয়েরা এখন খুব ভালো করছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্কুলে খেলাটি চালু হয়েছে। ২-১ বছরের মধ্যেই আশা করি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে পদক জিতবে।”

যেহেতু তিনি চলচ্চিত্র অঙ্গনের ব্যক্তিত্ব, তাই খেলাটা সাধারণ মানুষের কাছে দ্রুত পৌছে দিতে একটা প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে চান, “ আসলে এটা নিয়ে সিনেমা তৈরি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সার্ফারদের গল্প নিয়ে একটা সিনেমা (ন ডরাই) স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বানিয়েছিল। সেটা চলেনি। আমি এজন্য ডকুমেন্টারি বানাতে চাই। সিনেমা শুরুর আগে, বিরতির ফাঁকে এটা দেখানো হবে। মানুষ  তাহলে খেলাটা সর্ম্পকে জানতে পারবে। এটা টেলিভিশনেও দেখানো দরকার।”

স্কোয়াশের নিজস্ব কোনও ভেন্যু নেই। খেলোয়াড়েরা অনুশীলন করতে পারে না। সেটা নিয়েও ভাবছেন তিনি, “আমার যদি জায়গা থাকতো তাহলে স্কোয়াশের জন্য দিয়ে দিতাম। তবে যে খেলাটা আমার প্রথম প্রেম সেটার উন্নতির জন্য আরও বেশি চিন্তা ভাবনা করবো।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত