বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক’ হিসাবে তুলে ধরলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, “অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে আবু সাঈদ যেভাবে দাঁড়িয়েছেন, তা আজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত।”
রংপুর মহানগর পুলিশের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে রংপুর জেলা পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সভায় একথা বলেন পুলিশ প্রধান ময়নুল।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর গত ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় নিহত হন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।
পুলিশের গুলির মুখে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের মৃত্যু এই আন্দোলনকে গতি দেয়। কয়েকশ মানুষের মৃত্যুর পর গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের।
পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তখন করা মামলায় বিক্ষোভকারীদেরই তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছিল।
ক্ষমতায় পটপরিবর্তনের পর আবু সাঈদের ভাই আরেকটি মামলা করেন। সেই মামলায় ময়নুলের পূর্বসূরি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।
সরকার পরিবর্তনের পর সাবেক আইজিপি মামুন গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।
শনিবারের সভায় ময়নুল বলেন, ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনার প্রতিটি মামলা অত্যন্ত গুরুত্বসহ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
“ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে যারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিষ্ঠুরতম কর্মকাণ্ড করেছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুলিশ সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে পুলিশ বাহিনীতে পরিবর্তন আসবে বলে আশা প্রকাশ করছেন ময়নুল।
এই সভায় পুলিশের কর্মকর্তারা ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম, আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম ও পরিবারের সদস্যরা, স্থানীয় ছাত্র সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রংপুরে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।
এই অনুষ্ঠানের আগে আইজিপি ময়নুল রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামে আবু সাঈদের বাড়িতে যান। তিনি আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।